মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার এক প্রসূতি, তার স্বামী ও দেবরকে একটি কক্ষে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার রাতে গাইনি বিভাগে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারপিটের শিকার হয়ে নিরাপত্তার অভাববোধে হাসপাতাল ছেড়ে বগুড়া শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে রাত ১১টায় ভর্তি হয় ওই প্রসূতি। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রোগীর স্বজনদের মারপিট করা হয়নি, তবে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দুই মাসের প্রসূতি জয়নব বেগম (২২) বগুড়ার জেলার শাজাহানপুর উপজেলার গন্ডগ্রামের আসলাম আলীর স্ত্রী। সে পেট ব্যথা ও বমি নিয়ে ২০ আগস্ট শুক্রবার বিকেলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ১৩ নং বেডে ভর্তি হয়। ভর্তির পর থেকে তার কোন শারিরিক উন্নতি হচ্ছিল না। এ নিয়ে শনিবার হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসকের সাথে কথা বলেন। রুগীর স্বামী আসলাম আলী দায়িত্বরত চিকিৎসকদের কাছে সুচিকিৎসার কথা বললে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এরপর আসলাম আলী তার মোবাইল ফোনে সুচিকিৎসা হচ্ছে না বলে কিছু বক্তব্য ও ভিডিও রেকর্ড করে। এখবর ছড়িয়ে পড়লে শনিবার রাত ৮ টায় আসলাম আলীকে ডেকে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। কক্ষে নেওয়া মাত্রই বেশ কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক তার উপর হামলা চালিয়ে মারপিট করতে থাকে। খবর পেয়ে আসলামের ছোট ভাই এগিয়ে গেলে তাকেও মারপিট করা হয়। এরপর ভর্তি রোগী আসলামের স্ত্রী এগিয়ে গেলে তাকেও মারপিট ও তলপেটে আঘাত করে বলে অভিযোগ করে রোগীর স্বজনরা।
রোগীর স্বজনদের মারপিটের সংবাদ পেয়ে মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির তিন সদস্য সাদা পোশাকে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তারাও মারপিটের শিকার হন।
রোগীর স্বামী আসলাম আলী জানান, রাতে তার স্ত্রীর পেট ব্যথা বেশি হলে চিকিৎসার জন্য দায়িত্বরত চিকিৎসকদের কাছে চলে যান। তারা কোন কথা শোনেননি। এসময় তারা উত্তেজিত হয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে বেশ কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক তাকে মারপিট শুরু করে। মারপিট করার সময় অসুস্থ স্ত্রী জয়নব এগিয়ে আসলে তাকেও লাথি মারে তলপেটে। ঘটনার পর নিরাপত্তা না থাকায় স্ত্রীকে মেডিকেল থেকে নিয়ে শহরের ইসলামী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছে তলপেটে আঘাত পাওয়ায় রক্তপাত হচ্ছে। ডাক্তার তার চিকিৎসা দিচ্ছেন।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপ পরিদর্শক শামিম জানান, মারপিটের ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে দেখা যায় রোগীর স্বজনদের সাথে ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মারপিট হয়। পরে রোগীর স্বজনরা রোগীকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে চলে গেছেন।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘চিকিৎসককের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের হট্টগোল হয়েছিল। ওই সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে তারাও হট্টগোলে জড়িয়ে পড়েন। তবে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি, শুধু ধস্তাধস্তি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রসূতি নারীর পেটে লাথি মারার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ জানান, রোগীর স্বজনদের সাথে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সাথে সুচিকিৎসা নিয়ে মারপিট ও হাতাহাতি হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এদিকে ইসলামী হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদুর রহমান জুয়েল জানান, শনিবার রাত ১১ টায় রোগীর ভর্তির হওয়ার পর ডাক্তাররা জানিয়েছে রোগীর রক্তপাত হচ্ছে। তার তলপেটে আঘাত লাগার কারণে রক্তপাত হয়েছে। রোগীর স্বজনরা তাকে জানিয়েছে হাসপাতালের বেশ কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক তাদেরকে মারপিট করেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে রোগীর স্বজনদের মারপিট করার অভিযোগে কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে শাস্তি প্রদান করা হলে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সে আন্দোলনে শাস্তি মওকুফ হওয়ার পর একই হাসপাতালে আরো কয়েকবার রোগীর স্বজনদের সাথে অবহেলার অভিযোগ উঠে।
সূত্র: