মাদক মামলায় জেলজহাজতে থাকা চিত্রনায়িকা পরীমণির ব্যক্তিগত ও নাগরিক অধিকার ‘রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে ক্ষুণ্ণ’ হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে নাগরিক সমাবেশ থেকে।
‘বিক্ষুব্ধ নাগরিকজন’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের আয়োজনে ‘পরীমণির জন্য ন্যায়বিচার চাই’ শিরোনামে এই আয়োজনটি শুরু হয় রোববার বিকেল ৪টায়। রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান ফটকের সামনে এই সমাবেশে যোগ দেন চলচ্চিত্র পরিচালক, শিল্পী, কবি ও অ্যাক্টিভিস্টরা।
ভিডিওবার্তায় ক্ষোভ জানান একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আদালতে অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগেই পরীমণিকে যেভাবে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তা কোনো সভ্য সমাজের পরিচয় হতে পারে না। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে যেভাবে হেনস্থা করা হয়, তার প্রতি বিদ্বেষমূলক ও হিংসাত্মক আচরণ করা হয়, তা থেকে সংযত হতে হবে। আমরা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে বলছি, নারীর প্রতি কোনো নির্যাতন, বৈষম্য আমরা বরদাশত করব না।’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘পরীমণির মানবাধিকার ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা আজকে রাষ্ট্রীয়ভাবে, সামাজিকভাবে, সাংস্কৃতিকভাবে ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে, তাকে হেনস্থা করা হয়েছে। তাকে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়নি, এটা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। পরীমণি যদি সত্যিকারে অপরাধী হয়ে থাকে, তবে তার বিচার আদালতে হবে। তাকে হেনস্থা করার দায়িত্ব যেন রাষ্ট্র নিজ হাতে তুলে নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘র্যাব একটি বিশেষায়িত বাহিনী, তারা রাষ্ট্রের জরুরি প্রয়োজনে আসবে। পরীমণির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ রয়েছে, প্রতিরক্ষা বাহিনী রয়েছে। সেখানে র্যাবের মতো এলিট ফোর্স ব্যবহারের সুযোগ নেই।’
খুশী কবির বলেন, ‘যে ধরণের নাটক তৈরি করা হয়েছে, যেভাবে আমাদের গিলানো হচ্ছে, তা যে কতটা বানোয়াট সেটা আমরা বুঝি। আমরা অতটা বোকা না। আজকে সেটা স্পষ্টভাবে চলে আসছে। পরীমণিকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যেভাবে আদালতে আনা হয়েছে, তাতে আমাদের দেশের সম্মানহানি হয়েছে। আমি মনে করি, আমাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। আজকে আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীদের আদালতে ডাকা হয় না, খুনির আসামি রেহাই পায়। অথচ পরীমণিকে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে, তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।’
এই সমাবেশের অন্যতম সংগঠক চলচ্চিত্র নির্মাতা অপরাজিতা সংগীতা বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, পরীমণি ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার। তার সঙ্গে যা হচ্ছে, তা সুস্পষ্টভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন। পরীমণি তো জঙ্গি নন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তো থানায় ডাকতে পারত। তিনি থানায় গিয়ে দেখা করতেন। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কথা বলা হয়েছে। কী সেই সুনির্দিষ্ট অভিযোগ? বলা হচ্ছে, পরীমণির বাসায় মদের বোতল পাওয়া গেছে। আজকে আমাদের দেশের নেতাদের বাসায় তার চেয়েও বেশি মদের বোতল থাকে। তাদের নিয়ে কথা বললে অথবা ধর্মীয় কোনো ইস্যু নিয়ে কথা বললে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু আজকে পরীমণিকে নিয়ে যে সাইবার বুলিং শুরু হয়েছে, কই পুলিশ তো কাউকে ধরে নিয়ে গেল না।’
চলচ্চিত্র নির্মাতা হাবিবুর রহমান চলচ্চিত্রাঙ্গনের শিল্পীদের একাট্টা হওয়ার আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘পরীমণি তো আমাদের পরিবারের সন্তান। তিনি ভুল করতে পারেন। কিন্তু তার জন্য আমাদের কথা বলতে হবে। আপনারা সামনে আসুন। আমাদেরও যখন তখন নানা বিপদে পড়তে হতে পারে। আমরা চুপ থাকব না।’
চলচ্চিত্র নির্মাতা রাশিদ পলাশ বলেন, ‘আমি আতঙ্কিত, পরীমণির স্মৃতিশক্তি না নষ্ট হয়ে যায়। তিনি যদি মুক্তি পেয়ে চলচ্চিত্রে ফিরেনও তখন কি আর অভিনয় করতে পারবেন? তিনি এখন যে মেন্টাল ট্রমার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন, তাতে তিনি আর চলচ্চিত্রে ফিরতে পারবেন কি না তাও আমরা জানি না।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সঙ্গীতশিল্পী শতাব্দী ভব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক স্নিগ্ধা রেজওয়ানাসহ আরও অনেকে।
সূত্র. সমকাল