মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার শুরুর পর প্রায় পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। বর্তমানে তালেবানের নিয়ন্ত্রণাধীন দেশটিতে ৩০ বাংলাদেশীর অবস্থান নিশ্চিত করেছেন আফগানিস্তানের কূটনৈতিক মিশনের দায়িত্বে থাকা উজবেকিস্তানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো: জাহাঙ্গীর আলম। তাদের মধ্য থেকে সাতজন শিগগিরই দেশে ফিরছেন বলেও জানান তিনি।
সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত করে রাষ্ট্রদূত মো: জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, আটকে পড়া অন্য বাংলাদেশীরাও আগামী সপ্তাহের মধ্যে ঢাকায় ফিরবেন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে আফগানিস্তানে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস না থাকায় দেশটির সাথে কূটনীতিক যোগাযোগ তদারক করছে উজবেকিস্তানের বাংলাদেশ দূতাবাস।
মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, ওই সাতজনের মধ্যে দু’জন মার্কিন বিমানবাহিনীর বিমানে করে কাবুল থেকে কাতারের দোহায় পৌঁছেছেন। তারা সেখান থেকে দেশে ফিরবেন। মার্কিন বাহিনীর সাথে কাজ করা এই বাংলাদেশীরা হলেন- বরিশালের ফারুক হোসেন ও কুমিল্লার বাসিন্দা মহিউদ্দিন আহমদ।
তিনি জানান, জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে কাজাখস্তানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে ব্র্যাকের তিন কর্মকর্তাকে। তারা বর্তমানে দেশটির রাজধানী নুর সুলতানে অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই তারা দেশে ফিরবেন। এই বাংলাদেশীরা হলেন- ঢাকার বাসিন্দা মো: করিম শিকদার, রংপুরের আসাদুজ্জামান ও ফরিদপুরের রফিকুল হক মৃধা।
মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, সোমবার জার্মানির একটি ফ্লাইটে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে উজবেকিস্তান পৌঁছাবেন মো: রেজাউল করীম ও এ এস এম মিজানুর রহমান নামের আরো দুই বাংলাদেশী। সেখান থেকে তারা ট্রানজিট ভিসার মাধ্যমে দেশে ফিরবেন। এছাড়া উজবেকিস্তানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে এক ঘণ্টার মধ্যে তাদের ট্রানজিট ভিসার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে বলেও জানান এই রাষ্ট্রদূত।
রাষ্ট্রদূত জানান, কাবুলে অবস্থানরত ব্র্যাকের অন্য তিন কর্মকর্তা, আফগান ওয়্যারলেসে কর্মরত সাতজন, পাকিস্তান সীমান্তবর্তী জালালাবাদ শহরে থাকা তাবলিগ জামাতের ছয় সদস্য, কাবুলে এক প্রকৌশলী, কাবুলের কূটনৈতিক জোনের আরো দুজন প্রকৌশলী, কারাগার থেকে বেরিয়ে যাওয়া এক বাংলাদেশী এবং মাজার-ই-শরিফে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক বাংলাদেশীকে ফেরানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে।
অপর দিকে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর পুল-ই-চরকি কারাগারে বন্দী তিন বাংলাদেশীর মধ্যে মঈন আল মেজবাহ সেখান থেকে বেরিয়ে দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করেন। ফলে তার অবস্থান নিশ্চিত করা গেছে। তিনি বর্তমানে স্থানীয় এক আফগান পরিবারের আশ্রয়ে রয়েছেন। তবে বাকি দুজনের অবস্থান এখনো নিশ্চিত করা যায়নি বলেও জানান রাষ্ট্রদূত মো: জাহাঙ্গীর আলম।
এদিকে রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের জানান, আফগানিস্তানে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের আগামী সপ্তাহের মধ্যে দেশে ফেরানো হবে।
উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে দীর্ঘ দুই দশক যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের দোহায় এক শান্তিচুক্তির মাধ্যমে দেশটি থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করতে সম্মত হয় ওয়াশিংটন। এর বিপরীতে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে তালেবানও সম্মত হয়।
চলতি বছরের মে মাসে সৈন্য প্রত্যাহারের কথা থাকলেও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এপ্রিলে এক ঘোষণায় ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব সৈন্য প্রত্যাহারের কথা জানান। পরে জুলাইয়ে সময়সীমা আরো কমিয়ে এনে ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন তিনি।
মার্কিনিদের চুক্তি অনুসারে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারের সাথে তালেবানের সমঝোতায় আসার কথা থাকলেও কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি দু’পক্ষ। সমঝোতায় না পৌঁছানোর জেরে আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণে অভিযান শুরু করে তালেবান।
৬ আগস্ট দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় নিমরোজ প্রদেশে রাজধানী যারানজ নিয়ন্ত্রণে নেয় তালেবান। এটিই ছিল তালেবানের নিয়ন্ত্রণে নেয়া প্রথম আফগান প্রাদেশিক রাজধানী। যারানজের পর ১০ দিনের মাথায় দেশটির রাজধানী কাবুলও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেলে তালেবান।
সূত্র: নয়াদিগন্ত