হাইপক্সিয়া কোভিড রোগীদের জন্য যে কারণে বিপজ্জনক
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর থেকে মানুষের বিভিন্ন বিপজ্জনক শারীরিক সঙ্কট দেখা দেয়। বিশেষ করে ফুসফুসের বিভিন্ন ধরনের অসুখ নিয়ে নতুন তথ্য সামনে চলে আসছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘হাইপক্সিয়া’। সময় মতো ব্যবস্থা না নেয়া হলে যাতে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, কেবল কোভিড আক্রান্ত থাকার সময়েই নয়, বরং এ থেকে সেরে ওঠার পরও মানুষ ‘হাইপক্সিয়ায়’ আক্রান্ত হতে পারেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে বা এই রোগ থেকে সেরে ওঠার পর মারা গেছেন এমন রোগীর একটি অংশ ‘হাইপক্সিয়ার শিকার’ ছিলেন বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
হাইপক্সিয়া আসলে কী?
ঢাকার জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক কাজী সাইফুদ্দিন বেননূর বলেন, হাইপক্সিয়া হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যখন শরীররে কোষ ও টিস্যুগুলো অক্সিজেনের যথেষ্ঠ পরিমাণ সরবরাহ পায় না। অর্থাৎ মানুষের শরীরে অক্সিজেনের যে মাত্রা তাকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখবে ওই মাত্রা কমে যাওয়াকে হাইপক্সিয়া বলে।
সাধারণত অক্সিজেনের মাত্রা ৯৪ ভাগের নিচে নেমে গেলে শরীরের ওই অবস্থাকে ‘হাইপক্সিয়া’ বলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু অনেক সময় মানুষের অজান্তেই শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা অনেক কমে যায়, এমনকি কোনো ধরনের শারীরিক অস্বস্তিও অনুভব করেন না কেউ কেউ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘হ্যাপি হাইপক্সিয়া’।
কেন হাইপক্সিয়া বিপজ্জনক?
ঢাকার বাসিন্দা ফৌজিয়া মোবাশ্বেরাহ চলতি বছর ঈদুল আজহার রাতে জ্বরে আক্রান্ত হন। প্রথমে ভেবেছিলেন ফ্লু হয়েছে। তারপর ভেবেছেন ডেঙ্গু।
টেস্ট করিয়ে নেতিবাচক ফল পেয়ে তৃতীয় দিনে কোভিড টেস্ট করান। এবার ফলাফল ছিল পজিটিভ। অর্থাৎ সাধারণ ফ্লু কিংবা ডেঙ্গু নয়, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
ওই দিনই তিনি খেয়াল করেন যে তার একটু হাঁসফাঁস লাগার মতো অনুভূতি হচ্ছে। টয়লেট থেকে ফিরে পালস বা হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু অক্সিমিটারে অক্সিজেনের মাত্রা মেপে তখনো বিপদের কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। মানে তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৫ ভাগের মধ্যে ছিল।
বিবিসি বাংলাকে তিনি জানান যে কাশি থাকায় তার চিকিৎসক চতুর্থ দিনে তাকে ফুসফুসের এক্সরে করতে দেন। তখনো কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। কিন্তু পরের দিন থেকেই তার শরীরে অক্সিজেনের মাত্র কমে যেতে শুরু করে। নিজেকে আক্রান্ত মনে হলে কী করবেন, কোথায় যাবেন?
ওই দিনই বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে আসা হয়, শুরু হয় ঘণ্টার দুই লিটার হারে অক্সিজেন দেয়া। কিন্তু তাতেও যখন আরাম হচ্ছিল না, তখন ষষ্ঠ দিনে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সিটি স্ক্যান করে দেখা যায় তার ফুসফুসের ৫৬ ভাগ ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে পড়েছে। এরপর পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হয়। ফৌজিয়া মোবাশ্বেরাহকে নিরিড় পরিচর্যা কেন্দ বা আইসিইউতে নিতে হয়।
বেসরকারি একটি হাসপাতালের আইসিইউতে তাকে টানা আট দিন ঘণ্টায় ২৪ লিটার হারে অক্সিজেন দিতে হয়েছে।
চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছিলেন যে তার হাইপক্সিয়া হয়েছিল। তবে এখন তার অবস্থা কিছুটা ভালো।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের চিকিৎসক চন্দ্রশেখর বালা বলেন, হাইপক্সিয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, রক্তে অক্সিজেনের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় না থাকলে মানুষের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যায়। কারণ অক্সিজেন হলো মানুষের সব প্রত্যঙ্গের প্রধান পরিচালক শক্তি।
