চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান তাদের বিরোধকে একপাশে সরিয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। তারই অংশ হিসেবে ২৮ মাস বা দুই বছর চার মাস পরে আবার উভয় দেশই উভয় দেশের কূটনীতিকদের এসাইনমেন্ট ভিসা ইস্যু করেছে। ২০১৯ সালে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে একটি সামরিক বহরের ওপর আত্মঘাতী হামলা হয়। এর সূত্র ধরে পাকিস্তানে যুদ্ধবিমান পাঠায় ভারত। তখন থেকেই দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে বরফ শীতলতা বিরাজ করছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। ওই বছরের ৫ই আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এতে পাকিস্তানে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয়।
এর বিরুদ্ধে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে নালিশ জানায় পাকিস্তান। একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনমন ঘটে। স্থগিত করে দেয় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য। ভারতও একই পথে অগ্রসর হয়। এরপর নতুন করে সম্প্রতি সম্পর্ক জোড়া লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি এক দেশ অন্য দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ের স্টাফদের জন্য বিপুল সংখ্যক এসাইনমেন্ট ভিসা ইস্যু করেছে। এ বছরের ১৫ই মার্চের মধ্যে যারাই এ জাতীয় ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন, তাদেরকে ভিসা ইস্যু করেছে উভয় দেশ। এর মধ্যে ভারতীয় কর্মকর্তাদের জন্য ৩৩টি ভিসা ইস্যু করেছে পাকিস্তান। অন্যদিকে পাকিস্তানি সাতজন কূটনীতিক ভারত থেকে এসাইনমেন্ট ভিসা পেয়েছেন। সূত্র বলেছে, ১৫ই জুনের মধ্যে আবেদনের প্রেক্ষিতে এসাইনমেন্ট ভিসা ইস্যুতে একটি চুক্তি ছিল পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে। এর পরেও আরো কূটনীতিককে অধিক সংখ্যক ভিসা দিতে পারে।
এখানে বলে রাখা ভাল যে, বিশ্বজুড়ে দেশগুলোর মধ্যে অন্য দেশের কূটনীতিক এবং দূতাবাসের স্টাফদের এসাইনমেন্ট ভিসা দেয়ার রীতি চালু আছে। এ বছরের জানুয়ারিতে ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ গোয়েন্দারা দুবাইয়ে গোপন আলোচনায় মিলিত হন। কয়েক মাসের মধ্যে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের রোডম্যাপ নিয়ে একটি কূটনৈতিক চ্যানেল উন্মুক্ত করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। পরে ফেব্রুয়ারিতে উভয় দেশের সেনাবাহিনী অপ্রত্যাশিতভাবে যৌথভাবে অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেয়। ওয়াশিংটনে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত এপ্রিলে নিশ্চিত করেন যে, উপসাগরীয় এই দেশটি পারমাণবিক অস্ত্রধর প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি সুস্থ ও কার্যকর সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য মধ্যস্থতা করছে। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির হুভার ইনস্টিটিউটের সঙ্গে এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় রাষ্ট্রদূত ইউসেফ আল ওতাইবা বলেন, কাশ্মীর নিয়ে উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকা রেখেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। একই সঙ্গে অস্ত্রবিরতিতেও সহায়তা করছে। এর উদ্দেশ্য, কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন এবং এ সম্পর্ক সুস্থ অবস্থায় আগের স্থানে নিয়ে যাওয়া। তিনি বলেন, তারা বেস্ট ফ্রেন্ড হবেন এমন না। তবে ন্যূনতম একটি কার্যকর পর্যায়ে তা নিয়ে যেতে চাই আমরা। যেখানে তা কার্যকর থাকবে। একে অন্যের সঙ্গে কথা বলে।
এ বছর মার্চে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়া ভারতের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান অতীতকে কবর দিয়েছে। সহযোগিতা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চায়। তিনি উল্লেখ করেন, এক্ষেত্রে গঠনমূলক পরিবেশ সৃষ্টির বড় একটি দায় আছে ভারতের। এ ছাড়া আঞ্চলিক সংঘাত বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রেরও ভূমিকা আছে। জুনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। পারমাণবিক বিপর্যয়ের আর কোনো প্রয়োজন নেই। আমি আশা করি পারমাণবিক উত্তেজনা বাদেই ভারত ও পাকিস্তান একে অন্যের সভ্য প্রতিবেশী হিসেবে বসবাস করতে পারবে।
সূত্র: মানবজমিন