নাটোরের লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনাকালীন সময়ে সরকারের বরাদ্দকৃত ১৮ লাখ ২৭ হাজার ৬৮০ টাকার অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এছাড়া সরকারের আদেশ অমান্য করে করোনা টেস্টের জন্য টাকা আদায় করা সহ নানা খাতের অর্থ হরিলুট করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের কর্মরত কর্মচারিরা।
জানা যায়, ২০২১-২১ অর্থ বছরের বাজেটে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলার জন্য বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের জন্য ১৮ লাখ ২৭ হাজার ৬৮০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় সে অর্থ সঠিক খাতে সঠিক পরিমানে ব্যয় করা হয়নি।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, হাসপাতালের আপ্যায়ন ব্যয়ে বরাদ্দ ছিল ১১ লাখ ২৩ হাজার ২০০ টাকা যা করোনাকালীন সময়ে হাসপাতালে কর্মরত কর্মচারীদের মাঝে খরচের কথা ছিল। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নার্স, চৌকিদার, অফিস, ইপিআই, ল্যাব, ম্যানেজম্যেন্ট সহ কয়েকটি খাতে খাবার বিল করেছে ২ লাখ ৬ হাজার ৬০০ টাকা এবং ওডিআইটি খাতে ১০ হাজার টাকা। এছাড়া পরিবহন ব্যয় ১ লাখ ২৯ হাজার ৪০ টাকা, ভ্রমণ ব্যয় ১লাখ ৮০০ টাকা, স্বাস্থ্য বিধান বরাদ্দ সামগ্রী বাবদ ৪০ হাজার ৩৬০ টাকা,সন্মানী ব্যয় ২৫ হাজার ২০০ টাকা, প্রশিক্ষণ বাবদ ৮৮ হাজার ৯৬০ টাকা, স্বেচ্ছাসেবী প্রশিক্ষণ বাবদ ৪০ হাজার ৮০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও এ খাতগুলোতে সমপরিমাণ অর্থ ব্যয়ের প্রমাণ মেলেনি।
লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কম্পিউটার অপারেটর সুবির কুমার দাস জানান, করোনার প্রথম থেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি, এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্তও হয়েছি অথচ করোনাকালীন বরাদ্দ থেকে মাত্র ২ হাজার টাকা তাকে দেওয়া হয়েছে। যা খাবার বিলে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা রোগীদের টিকেট ক্লার্ক এনামুল হক জানান, করোনা টেস্টের জন্য সেবা গ্রহিতাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় সরকারিভাবে নিষেধ থাকলেও তা অমান্য করে টাকা নেওয়া হয়েছে। এখাতে প্রায় আদায় হয়েছে ২ লক্ষাধিক টাকা যা ব্যয়ের কোন হদিস পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাবুলেন্সে চালক প্রদীপ কুমার সরকার জানান, করোনাকালীন সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক রোগী বহন করে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে গেছি অথচ করোনাকালীন বরাদ্দ থেকে একটি টাকাও পাইনি।
করোনাকালীন সময়ে হাসপাতালে ডিউটি করা চৌকিদার হুমায়ুন বিশ্বাস সহ একাধিক চৌকিদার জানান, আপদকালীন সময়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে সেখানে ডিউটি করেছি আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের মোট ১৮ হাজার টাকা দিয়েছে যা আমরা ১০ জনে মাত্র ১ হাজার ৮০০ টাকা করে ভাগ করে নিয়েছি। কিন্তু চৌকিদারদের নামে বিল করেছে ৪০ হাজার টাকা যা খাবার বিলে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সর্বসাকুল্যে প্রায় ২লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। বাকি টাকা খরচের কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি লালপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শাহাবুদ্দিন আহমেদ।
এসব বিষয়ে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শাহাবুদ্দিন আহমেদ জানান, এসব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইপিআই (টেকনিশিয়ান) ফখরুজ্জামান সরকার বুলবুল দায়িত্বে ছিলেন, তিনিই সব জানেন।
আপনার স্বাক্ষর বা সম্মতি ছাড়া কেউ অর্থ উত্তলোন বা ব্যয় করতে পারেন না তবে কিভাবে অন্যের উপর দায় চাপাচ্ছেন এমন প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে নাটোরের সিভিল সার্জন ডাঃ মিজানুর রহমান জানান, বিষয়টি নিয়ে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শাহাবুদ্দিন আহমেদ এর সাথে কথা বলে পরে জানাবো।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, করোনা টেস্টের শুরু থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সরকারি ভাবে টাকা নেওয়া নিষেধ ছিলো।
সূত্র: যায়যায়দিন