দখলীকৃত পশ্চিম তীরের নাবি সালেহ গ্রাম। সেখানে ৩ বছর বয়সী ওমর তামিমি বার বার তার মায়ের কাছে জানতে চাইছে- মা, মুহাম্মদ কোথায়! তার এ প্রশ্নে মা বারা’আ তামিমি সন্তানের সামনে অনেক কষ্টে কান্না ধরে রাখেন। রামাল্লাহর কাছে নাবি সালেহ এলাকার এই মা তার সন্তানকে শান্তনা দেন। তারপর একা হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। গত মাসে ইসরাইলি সেনারা পিছন থেকে তার সন্তান মুহাম্মদ তামিমিকে (১৭) পিছন দিক থেকে গুলি করে তিনবার। বারা’আ তামিমি বলেন, আমরা দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। কিন্তু গুলি করার এক ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে মারা যায় সে। ডাক্তাররা তাকে বাঁচাতে পারেনি।
ঘটনার রাতের কথা খুলে বললেন পরীমনি
ঘটনার দিন ২৩ শে জুলাই ওই এলাকায় কোন সংঘর্ষ হয়নি। তবু ইসরাইলি সেনারা নিত্যদিনের মতোই তাদের গ্রামে অভিযান চালায়। স্থানীয়দের প্রলুব্ধ করে। তাদের বাড়িঘরে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।
নাবি সালেহ গ্রামে বসবাস প্রায় ৬০০ মানুষের। এর বেশির ভাগই তামিমি গোত্রের। অধিকার আদায় নিয়ে আন্দোলনের ইতিহাস আছে তাদের। নিয়মিত প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের পর তারা বিক্ষোভ করে থাকে। বারা’আ তামিমি বলেন, ইসরাইলি সেনারা যখন আমাদের বাড়িতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে তখন মুহাম্মদ ছিল ঘরের পিছনে।
অন্য শিশুদের নিয়ে আমি নিরাপত্তার জন্য ঘরের ভিতর প্রবেশ করি। নিজের এক ভাইয়ের চোখে ক্যান্সার। সে ঠিকমতো দেখতে পায় না। তাকে খুঁজতে বের হয় মুহাম্মদ। এ সময় তার সঙ্গে এবং সেনাদের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে তিনটি গুলির শব্দ শুনতে পাই।
২৮ শে জুলাই। ১১ বছর বয়সী মুহাম্মদ আবু সারা ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারায়। তার বুকে গুলি লাগে। এদিন পশ্চিম তীরের দক্ষিণাঞ্চলীয় বেইত উমর গ্রামে পিতার সঙ্গে গাড়িতে ছিল সে। তাদেরকে লক্ষ্য করে ইসরাইলি সেনারা ১৩ রাউন্ড গুলি করে। ওইদিনও ওই গ্রামে কোনো সংঘর্ষ ছিল না। জবাবে ইসরাইলি সেনারা বলেছে, থামার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল ওই গাড়িটিকে। কিন্তু তারা থামেনি। কিন্তু ডিফেন্স ফর চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল-প্যালেস্টাইন (ডিসিআইপি) বলেছে, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে শুধু তখনই প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করা যাবে, যদি সরাসরি জীবনের ওপর হুমকি আসে অথবা ভয়াবহ আহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ডিসিআইপি বলেছে, তারা নিয়মিত যেসব অনুসন্ধান ও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে তাতে দেখা যায়, ফিলিস্তিনি শিশুদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি সেনারা যেভাবে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করে তাকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- বা ইচ্ছাকৃত হত্যাকা- হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
মঙ্গলবার পশ্চিমতীরে ইসরাইলিদের গুলিতে নিহত হয়েছে ১৫ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি শিশু। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ওই শিশুটির নাম ইমাদ খালেদ সালেহ হাশাশ। তার মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর পরই সে মারা গেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের মতে, এ বছর ইসরাইল দখলীকৃত পশ্চিম তীরে ১২টি শিশুকে হত্যা করেছে ইসরাইল। উপরোক্ত তিনটি শিশু তাদের অন্তর্গত। এ ছাড়া মে মাসে ১১ দিনের হামলায় ইসরাইল গাজায় আরও ৬৭টি শিশুকে হত্যা করেছে। ডিসিআইপির মতে, ২০২০ সালে গাজা ও পশ্চিমতীরে সাতটি শিশুকে হত্যা করেছে ইসরাইল।
এভাবে শিশু হত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং আল বাইরেহ’তে ডিসিআইপির অফিসে ইসরাইলের সেনারা তল্লাশি চালায় জুলাইয়ের শেষের দিকে। এর ফলে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ডিসিআইপি অফিস থেকে যেসব গোপনীয় ডকুমেন্ট, অফিস সামগ্রী নিয়ে গেছে ইসরাইলিরা তা অবিলম্বে ফেরত দেয়ার দাবি জানায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সুপরিচিত ও সম্মানজনক এনজিও ডিসিআইপিতে ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করি। সেখান থেকে রাতের বেলা যেসব কম্পিউটার, হার্ড ড্রাইভ, বাইন্ডার ও অন্য জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা ফেরত দিতে হবে।
সূত্র: মানবজমিন