বিশ্বজুড়েই শিশুদের মধ্যে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের হার অনেক কম। বয়স্করা যেখানে প্রতিনিয়ত কোভিডের ঝুঁকিতে, শিশুদের বেলায় দেখা গেছে এর ব্যতিক্রম।
এখন পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে ভাইরাসটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ফলে গবেষকদের মাঝে বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট কৌতূহল আছে।
বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ ধারণা করছেন, শিশুদের মাঝে ভাইরাসটির বিস্তারের সুযোগ কম। এমন মতও আছে যে, শিশুরা আক্রান্ত হলেও তার লক্ষণ প্রকাশ পায় না, এবং অন্যদের মাঝে ভাইরাসটি ছড়ায় না। তবে এসব গবেষণার কোনোটিরই এখন পর্যন্ত সত্যতা মেলেনি। অর্থাৎ নির্ভরযোগ্য কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
এমন সব আলোচনা বা বিতর্কের মাঝে নতুন তথ্য হাজির করলেন জার্মানির শারিটে ইউনিভার্সিটি মেডিসিনের বার্লিন ইনস্টিটিউট অব হেলথের বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, শিশুদের মাঝে করোনাভাইরাসের মহামারী ছড়িয়ে পড়ার হওয়ার ঝুঁকি বয়স্কদের তুলনায় অনেক কম। প্রশ্ন দাঁড়ায়, শিশুদের শরীরে এমন কী জৈবিক বিষয় আছে যার ফলে তাদের বেলায় ঝুঁকি অনেক কম?
বার্লিন ইনস্টিটিউট অব হেলথের ইমিউনোলজিস্ট অধ্যাপক ইরিনা লেহমান ডয়চে ভেলে সায়েন্স ম্যাগাজিনকে জানান, ‘আমাদের ধারণা হলো, শিশুরা যখন স্কুল বা কিন্ডার গার্টেনে যায় তখন তারা অনেক বেশি মানুষের সংস্পর্শে আসে। তাছাড়া বাতাসেও বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের উপস্থিতি আছে। শিশুরা সহজেই বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস, ব্যকটেরিয়া এবং প্যাথোজেনিক এজেন্টের সংম্পর্শে আসে।’
তার মতে, এমন পরিস্থিতির কারণে প্রাকৃতিকভাবেই শিশুদের শরীরে শক্তিশালী রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠে।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত যোগ করে তিনি বলেন, শিশুদের নাকে বয়স্কদের তুলনায় অনেক বেশি রোগপ্রতিরোধী সেল থাকে যা তাদেরকে এক ধরনের শক্তিশালী সুরক্ষা প্রদান করে। নাকের সুরক্ষা সেল আর প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা মিলে শিশুদের করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে বয়স্কদের তুলনায় অনেক বেশি সুরক্ষিত রাখে বলে জানান তিনি।
তবে করোনাভাইরাস বয়স্কদের মতোই শিশুদের সমানভাবে আক্রান্ত করে। কিন্তু সুরক্ষিত শারীরিক গঠনের কারণে বয়স্কদের তুলনায় তাদের শরীর অনেক দ্রুত ভাইরাসটিকে ধ্বংস করে দেয়।
অধ্যাপক লেহমেন জানান, ‘ভাইরাসটি বয়স্কদের মতো একইভাবে শিশুদের আক্রান্ত করে। কিন্তু শিশুদের শরীর খুব আগে থেকেই ভাইরাসটির সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত থেকে। এর ফলে বয়স্কদের তুলনায় দ্রুত ভাইরাসটি পরাস্ত করে। আর আমরা মনে করছি, বয়স্কদের মতো শিশুরা এ ভাইরাসের আক্রমণে কাবু হয়ে না পড়ার এটি অন্যতম একটি কারণ।’
তিনি বলেন, শিশুদেরর শরীরেও ভাইরাসের উপস্থিতি (ভাইরাল লোড) বয়স্কদের মতোই। কিন্তু যেহেতু শিশুদের শরীর আগে থেকেই ভাইরাস ঠেকাতে তৎপর থাকে তাই তারা খুব দ্রুত এটিকে ধ্বংস করে দিতে পারে।’
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের শিশুদের জন্য কতোটা ঝুঁকির্পূণ এমন প্রশ্নের জবাবে এ বিশেষজ্ঞ জানান, তারা করোনাভাইরাসের বেশ কয়েকটি ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে কাজ করলেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে নিয়ে এখনো কাজ করেননি।
‘এ বিষয়টি এখনি বলা মুশকিল। তবে, শিশুরা করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে অনেক বেশি সুরক্ষিত। তবে কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর রয়েছে যেমন যেসব শিশুর শারীরিক সমস্যা রয়েছে তাদের বেলায় করোনাভাইরাস হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তবে সাধারণ, স্বাস্থ্যবান শিশুরা অনেক বেশি সুরক্ষিত থাকে।’
এ বিশেষজ্ঞের মতে, শিশুদের স্কুল খুলে দেয়া উচিত এবং তাদেরকে টিকার আওতায় আনা জরুরি।
সূত্র : ডয়চে ভেলে