বহুল আলোচিত হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে সম্পৃক্ত ও ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামিকে ব্ল্যাকমেইল করে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাংবাদিক পরিচয় দানকারী দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ সময় ওই ব্যক্তির নামে ওয়ারেন্ট থাকায় তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
আজ বুধবার দুপুরে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি ইমরান খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে সম্পৃক্ত ও ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামিকে ব্ল্যাকমেইল করে চাঁদাবাজির ঘটনায় সাংবাদিক পরিচয় দানকারী দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় ৯৫ লাখ টাকার চেক ও নগদ ৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য নথিপত্র ও সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় ভিকটিমের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট থাকায় তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই বিষয়ে আজ বিকেলে কারওয়ানবাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর ১৬ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা করেন দুদকের উপসহকারী পরিচালক জয়নাল আবেদিন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৮৫ কোটির বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, হল-মার্কের চেয়ারম্যান ও এমডি তাদের প্রতিষ্ঠানের বেতনভুক্ত কর্মচারী মো. জাহাঙ্গীর আলমকে আনোয়ারা স্পিনিং মিলসের মালিক এবং মীর জাকারিয়াকে ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক সাজিয়ে জনতা ব্যাংকের জনতা ভবন করপোরেট শাখায় একটি হিসাব খোলেন। প্রতিষ্ঠান দুটির মাধ্যমে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির কোনো মালামাল আমদানি-রপ্তানি না হওয়া সত্ত্বেও আমদানি-রপ্তানির ভুয়া রেকর্ডপত্র তৈরি করেন। ওই সব রেকর্ড ব্যাংকটির ওই শাখা থেকে সোনালী ব্যাংকের শেরাটন করপোরেট শাখায় পাঠানো হয়। সোনালী ব্যাংক থেকে ওই কাগজপত্রের বিপরীতে আনোয়ারা স্পিনিং মিলস ও ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের হিসাবে বিলের সমপরিমাণ মূল্য ৮৫ কোটি ৮৭ লাখ ৩৩ হাজার ৬১৬ টাকা জমা হয়, যা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
জেসমিন ইসলাম ও তানভীর মাহমুদ ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন হল-মার্কের কর্মকর্তা মীর জাকারিয়া ও মো. জাহাঙ্গীর, সোনালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. সাইফুল হাসান, এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. আবদুল মতিন, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মেহেরুন্নেসা মেরী, জনতা ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. আজমুল হক ও এস এম আবু হেনা মোস্তফা কামাল, এজিএম আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. ফায়েজুর রহমান ভূইয়া ও জেসমিন আখতার, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, জিনিয়া জেসমীন ও মো. সাখাওয়াত হোসেন এবং জেসমিন খাতুন।
সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন শাখা থেকে ভুয়া আইবিপির (ইনল্যান্ড বিল পারসেজার) মাধ্যমে এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে এ দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এর আগে আরও সাতটি মামলা হয়েছে। এসব মামলা আদালতে বিচারাধীন। হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ২০১২ সালে ৩৮টি মামলা করা হয়। এর মধ্যে তদন্ত শেষে ২০১৪ সালে ১১টি মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দুটি মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়।
অবৈধভাবে অর্থ লেনদেন ও পরস্পর যোগসাজশে অর্থ আত্মসাতের অপরাধে বাকি ৯টি মামলায় ওই বছরের ২৭ মার্চ অভিযোগ গঠন করা হয়। সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে ৩ হাজার ৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মোট ৩৮টি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে প্রায় ৩৭২ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে ২৭টি মামলা করা হয়। গত বছরের ৭ অক্টোবর ফান্ডেড (স্বীকৃত বিলের বিপরীতে দায়) ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৩৪ হাজার ৮৭৭ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২৬ জনের বিরুদ্ধে ১১টি মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়।
সূত্র: আমাদের সময়.কম