প্রথম ম্যাচে ৬০ রানে অলআউট হয়ে সাত উইকেটে হেরেছিল নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ের খুব কাছে গিয়ে হেরেছে। রোববার তৃতীয় টি ২০তে তারা তুলে নিয়েছে ৫২ রানের দাপুটে জয়। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে এমন পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ দলের শক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। টি ২০তে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বনিু স্কোর ৭৬ রানে অলআউট হয়ে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ। ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সেরা দুই কোচ সারোয়ার ইমরান ও নাজমুল আবেদিন ফাহিম জানালেন, অতি আত্মবিশ্বাস ডুবিয়েছে দলকে।
সারোয়ার ইমরান : বাংলাদেশ ধরেই নিয়েছিল এই কন্ডিশনে নিউজিল্যান্ড খেলতে পারবে না। তারা ভেবেছে নিউজিল্যান্ড যখন ১২৯ রান করেছে, তখন রান করা খুবই সহজ। ভেবেছে ভালো উইকেট। এজন্য সবাই আগ্রাসী শট খেলতে গেছে। এই উইকেটে যার পরিণাম সবারই জানা। মিডল অর্ডার পুরোপুরি ব্যর্থ। মোস্তাফিজ-সাইফউদ্দিনের কাছে যেভাবে আশা করেছিল দল, তারা সেভাবে রান আটকাতে পারেনি। তবে ম্যাচটি বাংলাদেশ হেরেছে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়। মাঠে নামার পর তারা উইকেটের অবস্থা ভুলে গেছে। বাংলাদেশ যেভাবে খেলার চেষ্টা করেছে এই উইকেটে সেভাবে খেলা যায় না। নিউজিল্যান্ড রীতিমতো যুদ্ধ করে রান করেছে। সেটাকে হালকা চোখে দেখেছে বাংলাদেশ। মুশফিকের ব্যাটিং দেখে বোঝা যাচ্ছিল এখানে রান করা সহজ নয়। সে নিজেও শট খেলতে পারছিল না। বাউন্ডারি মারার চেষ্টা করেও পারছিল না। অন্যদের আউট হতে দেখে সেও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। আসলে মাঠে নামার পর প্রয়োগের ধরনটাই ভুলে যায় ব্যাটসম্যানরা। আমি আগেই বলেছি, বাংলাদেশ যে প্রক্রিয়ায় খেলছে তাতে বিশ্বকাপের জন্য দলের প্রস্তুতি খারাপ হচ্ছে। যেসব ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ, সেগুলোয় কোনো পরীক্ষা দিতে হয়নি। কন্ডিশনের সুবিধাতেই জিতেছে। এটা বোলার-ব্যাটসম্যান সবার জন্যই ক্ষতির কারণ হচ্ছে।
এখানে ধৈর্য ধরে ব্যাটিং করতে হবে। ১৩০ রান তুলতে গেলে অবশ্যই কষ্ট করতে হবে। কিন্তু দলের মধ্যে সেই সংগ্রামের মানসিকতাই নেই।
নাজমুল আবেদিন ফাহিম: বাংলাদেশ জানে মিরপুরে নিজেদের সব সুবিধা নিয়েই খেলছে তারা। দল মনে করেছে এখানে নিউজিল্যান্ড খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে না। ক্রিকেটারদের মধ্যে বেশি স্বস্তি চলে এসেছে। এটা দলের মধ্যে একটা খারাপ অভ্যাস তৈরি করে দিয়েছে। আরেকটি বিষয় হলো-নিউজিল্যান্ড প্রস্তুতি নিয়েই বাংলাদেশে এসেছে। ওদের আগে থেকে ধারণা ছিল, এখানে এসে দেখে আরও শিক্ষা পেয়েছে। তারা বাংলাদেশের কন্ডিশনে লড়াই করেই সফল হয়েছে। এখানে এসে তারা শিক্ষা নিয়ে কষ্ট করে দুদলের দূরত্ব কমিয়ে এনেছে।
ব্যাটিংয়ে যে আমরা আমাদের কন্ডিশনে খুব ভালো করি তাও না। কন্ডিশন অনুযায়ী আমাদের ভালো করার কথা। নিউজিল্যান্ড হারের পর আবারও চেষ্টা করেছে। তাদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য এখানেই। তারা একটা ম্যাচের পর শিক্ষা নেয়। সেটা হারা ম্যাচ হোক কিংবা জেতা ম্যাচ। আমরা হারলে যেমন কারও দোষ খোঁজা শুরু করি, তারা সেটা করে না। সব সময় ইতিবাচক থাকে। আগের ম্যাচে যেভাবে খেলেছে তারা, সেটা হয়তো সব ম্যাচে পারবে না; কিন্তু চেষ্টা থাকবে।
এই ম্যাচে রান খুবই কম ছিল। ব্যাটিংয়ে এত তাড়াহুড়োর খুব দরকার ছিল না। একটি বাউন্ডারি অনেক সময় আত্মবিশ্বাস দেয়। সেই আত্মবিশ্বাস দিয়ে খেলা এগিয়ে নিতে হয়। লিটন পরপর দুটি চার মারার পরও আবার চেষ্টা করল। এখানে শুধু লিটন না, যে ভালো খেলতে পারবে, তার ম্যাচ এগিয়ে নেওয়া উচিত। সেটা লিটন কিংবা সাকিব-মুশফিকও হতে পারে। দলের মধ্যে সেটা ছিল না। দায়িত্ব নিতে পারেনি কেউ। মুশফিকের ব্যাটিং দেখেই তো বোঝা যাচ্ছিল এখানে রান করা সহজ নয়।
সূত্র: যুগান্তর