পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমা নিয়ে উভয় সঙ্কটে পড়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আইনের বাধ্যবাধকতায় একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। আর শেয়ারের ধারণকৃত মূল্য নির্ধারণ করা হয় বাজার মূল্যের ভিত্তিতে। ব্যাংকগুলোর ধারণকৃত শেয়ারের মূল্য বাজারে বেড়ে গেলে আইনের বাধ্যবাধকতা অমান্য হয়ে যায়। আর রাতারাতি শেয়ার বিক্রি করে নির্ধারিত সীমার মধ্যে নামিয়ে আনা যায় না। আবার নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করলেই ব্যাংকগুলোকে জরিমানা গুনতে হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। এভাবে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের শেয়ার ধারণের সর্বশেষ সীমা নিয়ে উভয় সঙ্কটে পড়েছে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকির শিথিলতায় ২০০৯ সালে কৃষি ও এসএমই ঋণের বড় একটি অংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছিল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বিনিয়োগ রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ২০১০ সালে কঠোর তদারকির মধ্যে নিয়ে আসে ব্যাংকগুলোকে। ফলে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের ধস নামে। আগে ব্যাংকগুলো তার মোট দায়ের ১০ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বা শেয়ার ধারণ করতে পারতো। মোট দায় বলতে, ব্যাংকগুলোর মূলধন বাদে সব সম্পদের মূল্যের যোগফল বোঝাতো। ওই সময় ব্যাংকগুলোতে ৫ লাখ কোটি টাকার মোট সম্পদ ছিল।
সে হিসাবে ২০১০ সালের আগে ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে শেয়ার ধারণ করেছিল। কিন্তু ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ভয়াবহ দরপতনের পর থেকে ব্যাংকগুলোর মূলধন কমতে থাকে। এক পর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর জন্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে করাকড়ি আরোপ করে। এরই ফাঁকে ২০১৩ সালে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হয়। সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যাংকগুলো তার মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। এখন মোট মূলধন বলতে বোঝায় ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি, রিটেইন আর্নিং ও শেয়ার প্রিমিয়াম অ্যাকাউন্টের সমন্বয়ে যে অর্থ থাকবে তাই। এ আইন সংশোধনের আগে তখন ব্যাংকিং খাতে মোট সম্পদ ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। এর ১০ শতাংশ হিসেবে ৫০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ছিল পুঁজিবাজারে। কিন্তু যখন আইন সংশোধন করা হয় তখন মোট মূলধন নেমে আসে ৫০ হাজার কোটি টাকার। এর ২৫ শতাংশ হিসাবে ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার কথা সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার। আইন সংশোধনের আগে, বেশির ভাগ ব্যাংকেরই বাড়তি বিনিয়োগ ছিল। এ কারণে বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয়ের জন্য ২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়।
সত্র: নয়াদিগন্ত