আফগানিস্তানের তালেবান কর্তৃপক্ষ তাদের অভ্যন্তরীণ কাঠামো ও গঠনতন্ত্র অনুসারে নতুন সরকারের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এ নতুন (অন্তর্বর্তীকালীন) সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া তালেবান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে শীর্ষ উগ্রবাদী হিসেবে ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বাহিনী চলে যাওয়ার পর তালেবান কর্তৃপক্ষ পশ্চিমা মদদপুষ্ট সাবেক আফগান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন তিন সপ্তাহ আগে। এরপর নতুন তালেবান সরকার ঘোষণা করা হয়। নতুন আফগান সরকারের প্রধান পদগুলোর নিয়ন্ত্রণ এখন ওই সকল ইসলামপন্থী নেতাদের হাতে যারা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।
আফগানিস্তানের তালেবান কর্তৃপক্ষের এ নতুন সরকারের নেতৃত্বে আছেন মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ। তিনি আফগানিস্তানের তালেবান আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার কারণে তাকে জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।
তালেবানের অন্যতম সামরিক সংগঠন হাক্কানি গ্রুপের প্রধান সিরাজউদ্দিন হাক্কানিকে নতুন আফগান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে। তিনিও মার্কিনবিরোধী সামারিক অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই তাকে শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করেছে।
নতুন তালেবান সরকার ঘোষণার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।
তুরস্ক
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন যে তিনি আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যালোচনা করছেন। আমরা জানি না যে এ নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে তালেবানরা কত দিন দেশ চালাবে। কিন্তু, আমাদের সকলের উচিৎ বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে তাদের আরো সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করা।
কাতার
কাতারের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লোলওয়াহ আল-খাতার সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে তালেবানরাই আফগানিস্তানের বর্তমান শাসক। তবে তালেবানদেরকে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই তাদের বিচার করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্র
এক বিবৃতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আমরা দেখেছি তালেবানরা যাদেরকে আফগানিস্তানের মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছে তারা তাদের সদস্য অথবা সহযোগী। এছাড়া এ মন্ত্রিসভায় কোনো নারীকে স্থান দেয়া হয়নি। আমরা তালেবানের কিছু মন্ত্রীকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। তবে আমরা তালেবান কর্তৃপক্ষের কথায় নয় বরং কাজ দিয়ে তাদের বিচার করব। আমরা আশা করি তালেবান কর্তৃপক্ষ আফগানিস্তানে আটকে পড়া বিদেশী ও (পশ্চিমা বাহিনীর সহযোগিতাকারী) আফগানদের নিরাপদে বাইরের দেশগুলোতে যেতে দিবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো বলেছে, আমরা আশা করি যে তালেবান কর্তৃপক্ষ আফগানিস্তানের মাটিকে কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে না। কারণ, বিশ্ব তাদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছে।
জাতিসঙ্ঘ
তালেবানের নতুন সরকার ঘোষণার বিষয়ে জাতিসঙ্ঘের মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, একমাত্র আলোচনা ও সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে আফগানিস্তানে প্রকৃত শান্তি আসবে। একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য প্রত্যেক আফগানের মানবাধিকার সংরক্ষণ করতে হবে।
জাতিসঙ্ঘের নারী সংস্থা
জাতিসঙ্ঘের নারী সংস্থার প্রধান প্রমিলা পেটেন বলেন, তালেবান কর্তৃপক্ষের উচিৎ তাদের নতুন সরকারে নারীদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা।
সূত্র : আল-জাজিরা