আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার নিয়ে বিপুল চাপের মুখে থাকা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ২০টি বছর এবং শত শত বিলিয়ন ডলার সহায়তা, যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণ দিয়েও যখন কাজ হয়নি, তাহলে আরো এক বছর বা পাঁচ বছর অথবা ১০ বছরে কি পার্থক্য হতো?
গত মাসে আফগানিস্তান থেকে সেনা ফিরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে সিনেট ফরেন রিলেশন্স কমিটির শুনানিতে মঙ্গলবার আইন প্রণেতাদের কাছ থেকে সম্ভবত কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
হাউজ ফরেন রিলেশন্স কমিটির সোমবারের ৫ ঘণ্টার ভিডিও কনফারেন্সে তিনি আফগানিস্তানে ২০ বছরের যুদ্ধ শেষে বাইডেন প্রশাসনের সেনা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেন। সে সম্পর্কে তিনি আইনপ্রনেতাদের কঠিন ও রুঢ় প্রশ্নের জবাব দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এই কূটনীতিক প্যানেলকে বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধ প্রলম্বিত করার সিদ্ধান্ত নিলে নিজেদের সুরক্ষা ও তালেবান দখলদারিত্ব ঠেকাতে আরো সেনা আফগানিস্তানে পাঠাতে হতো, যাতে ক্ষয় ক্ষতি বেড়েই চলতো এবং তাতে খুব বেশি হলে অচলাবস্থা আরো বাড়ত এবং আফগানিস্তানের ওই অবস্থা অনির্দিষ্টকালের জন্যে চলত।
তিনি বলেন, কোনো প্রমাণ নেই যে সেখানে আরো বেশি দিন অবস্থান করলে আফগান নিরাপত্তা বাহিনী বা আফগান সরকার স্থিতিশীল হতো বা আত্মনির্ভরশীল হতো।
তিনি বলেন, ২০টি বছর এবং শত শত বিলিয়ন ডলার সহায়তা, যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণ, এসবে যদি কাজ না হয়, তাহলে আরো এক বছর বা পাঁচ বছর অথবা ১০ বছরে কি পার্থক্য হতো?
আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে পালিয়ে যান।
যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে ৫ হাজার ৫০০ জন আমেরিকানসহ ১ লাখ ২৪ হাজার মানুষ সরিয়ে নেয় যাদের বেশির ভাগই আফগান নাগরিক। আগস্টের শেষ দিনগুলোতে কাবুল বিমানবন্দর দিয়ে লোকজন সরিয়ে আনার পরও প্রায় ১০০ জন আমেরিকান সেখানে অবস্থান করছেন।
ব্লিঙ্কেন বলেন, লোকজন সরিয়ে আনার মূল কাজ শেষ হলেও, সেখানে থাকা আমেরিকান, আফগান নাগরিক এবং অন্যান্য মিত্র ও অংশীদাররা যারা আফগানিস্তান ত্যাগ করতে চায় তাদের যথাসাধ্য সহায়তাদানের চেষ্টা করছি আমরা।
বিরোধী রিপাবলিকান ও কয়েকজন ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতা এবং বাইডেনের কোনো কোনো ডেমক্রেটিক সাহকর্মী যুক্তরাষ্ট্রের সেনা, আমেরিকান নাগরিক এবং যুদ্ধের সময় দোভাষী এবং উপদেষ্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আফগানিস্তানে কাজ করা আফগান নাগরিকদের সরিয়ে আনার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সমালোচনা করেন।
হাউজ কমিটির চেয়ারম্যান নিউইয়র্কের কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিকস বলেন, আফগানিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়াটা সহজ হবে না।
ওহাইওর রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ষ্টিভ চাবট বলেন, আফগানিস্তান আবারও সন্ত্রাসীদের স্বর্গ হলো।
আফগানিস্তান যুদ্ধ যাকে বাইডেন চিরকালীন যুদ্ধ আখ্যা দিয়েছেন, সেখান থেকে সরে আসার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে পরিচালিত জাতীয় জরিপে দেখা যায় বেশিরভাগ আমেরিকান ভোটার এটা সমর্থন করেন, তবে যেভাবে সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে, সেভাবে নয়।
দুই দিনের শুনানিতে ব্লিঙ্কেনকে প্রশ্ন করা হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র কেন আমেরিকানদেরকে আরো আগে সরিয়ে আনা শুরু করল না, বিশেষত এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন যখন থেকে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন যে ট্রাম্পের সঙ্গে তালিবানের যুদ্ধ শেষ করা ও যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সরিয়ে নেয়ার চুক্তির প্রতি সম্মান জানানো হবে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন এই সেনা প্রত্যাহারকে ‘অভাবনীয় সাফল্য’ মন্তব্য করে আফগানিস্তান যুদ্ধ শেষ করার সিদ্ধান্তের পক্ষ সমর্থন করেছেন এই বলে যে তিনি সেখানে যুদ্ধরত যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পঞ্চম প্রেসিডেন্টের কাছে দিয়ে যাবেন না।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা