করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর ১২ সেপ্টেম্বর সরকার দেশের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছে। এদিন সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয় অঙ্গন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হলেও অসংখ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তথা কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীশূন্য ছিল। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ অন্যত্র চলে যাওয়া, শিক্ষকদের বেতন দিতে না পারা, বাড়িভাড়া মেটাতে না পারাসহ বেশ কিছু কারণে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা এখন চরম আর্থিক সংকটে দিন কাটাচ্ছেন। বাঁচার জন্য অনেকে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন।
যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিরা জানান, কুমিল্লায় প্রায় পাঁচশ কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। এ জেলায় ২২৪৬টি কিন্ডারগার্টেন থাকলেও এ বছর কমে ১৭৬১-তে এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ করোনাভাইরাসের কারণে গত এক বছরে ৪৮৫টি কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মচারী চরম বেকায়দায় পড়েছেন।
রাজশাহী জেলা ও মহানগরীতে দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। চার হাজার শিক্ষক ও কর্মচারী চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। যারা আছেন তারা অনিয়মিত বেতন পাচ্ছেন। আর ৭০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে।
টাঙ্গাইল জেলার ৮১৯টি কিন্ডারগার্টেনের মধ্যে ২০২টি বন্ধ হয়েছে। ১১ হাজার ৪৩৬ জন শিক্ষকের মধ্যে ৪ হাজার ৫৮৬ জন শিক্ষক বেকার হয়ে পড়েছেন। নেত্রকোনায় বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় সাড়ে ৩০০ কিন্ডারগার্টেন স্কুল। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা শহরের ৩টি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। এর মধ্যে অক্সফোর্ড কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে।
বরিশাল বিভাগের ৪৮৩টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কিন্ডারগার্টেনের মধ্যে শতাধিক বন্ধের পথে। নগরীর গোরস্থান রোড স্কয়ার প্রিপারেটরি স্কুল, ফরেস্টার বাড়ি এলাকার জাগরণী কিন্ডারগার্টেন, লাকুটিয়া সড়কের অ্যাপটেক প্রিক্যাডেট স্কুল, কাজীপাড়ার মর্নিংসান প্রিপারেটরি স্কুল ও হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকার হলি চাইল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলসহ এক ডজন স্কুল এখনো খোলেনি।
হবিগঞ্জে ইতোমধ্যে ৩০টি স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। মৌলভীবাজার জেলায় ৪১৪টি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি বন্ধ হয়ে গেছে। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। আবার অনেকেই ভর্তি হচ্ছে না। নানা কাজে জড়িয়ে পড়েছে। শ্রীমঙ্গলের ৪৮টি কিন্ডারগার্টেনের মধ্যে ৩টি বন্ধ হয়ে গেছে। নাটোরের সিংড়া উপজেলায় ৩টি কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া আরও প্রায় ২০টি কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। খাগড়াছড়ির ৯০০ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী চরম সংকটে রয়েছেন।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গেন্দুকুড়ি এলাকার মর্নিংসান কিন্ডারগার্টেন নামে স্কুলটির অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার সদর ইউনিয়নের নিজাবাদ গ্রামের স্বাধীন কিন্ডারগার্টেন স্কুলটি এখন ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। গোয়ালঘর হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
পাবনায় প্রায় আড়াইশ নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত অন্তত ৫ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ শিক্ষকতা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ইতোমধ্যে অনেকে শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়েছে।
সূত্র: আমাদের সময়.কম