দেড় বছর পরে বন্ধ থাকা স্কুলগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন পরে বিদ্যালয় খোলায় শিক্ষার্থীদের আনন্দের শেষ নেই। একইসাথে বিদ্যালয়সংলগ্ন ব্যবসায়ীদের মুখেও ফুটেছে হাসি। দীর্ঘদিন ব্যবসা বন্ধ থাকার জন্য পরিবার নিয়ে দুর্বিষহ সময় পার করেছেন তারা। এখন আয়ের রাস্তা খুলে যাওয়ায় তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। বেচাকেনা শুরু হওয়ায় সংসারের অভাবও কমতে শুরু হয়েছে।
দীর্ঘ ১৮ মাস পর শিক্ষার্থীদের পদচারণায় স্বস্তি মিলেছে বিদ্যালয়ের আশেপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীদের। ক্লাস শুরুর আগে ও ছুটির পর শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী দোকানগুলো থেকে কিনতে শুরু করেছে।
এটি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিত্র।
বুধবার সকাল ৯টায় সদর উপজেলার রুহিয়া ডিগ্রি কলেজের সামনে ঘনিমহেষপুর গ্রামের ঝালমুড়ি বিক্রেতা মোঃ আলমের সাথে কথা হয়।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ের গেটে ঝালমুড়ি বিক্রি করে তার সংসার চলত। কিন্তু স্কুল বন্ধ থাকায় ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। হোটেলসহ বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছি। স্কুল বন্ধ থাকার সময়ে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। কতদিন যে খেয়ে না খেয়ে পার হয়েছে! শিক্ষার্থীদের দেখতে প্রায়ই স্কুলে আসতাম। যখন দেখতাম কেউ নেই, মনটা খুব খারাপ হয়ে যেতো। স্কুল যেন আর বন্ধ না হয়। স্কুল-কলেজ খোলা থাকলে পরিবারের দুই বেলা খাবার জোটে। আল্লাহ যেন আগের মতো সবকিছু ঠিক করে দেয়।’
সদর উপজেলার রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে বাদাম, বুট, আমড়া, পাঁপড় বিক্রি করে পাঁচ সদস্যের সংসার চলে মোঃ হক মিয়ার। তিনি জানান, ‘স্কুলের সাথে হামার ইনকামের রাস্তা খুলিচে। এই ব্যবসা ছাড়া মুই অন্য কিছু করিবা পারু না। স্কুল বন্ধ থাকায় খুব কষ্টে দিন কাটাইছু। এলা স্কুল খুলিচে। ফের দোকান করছু। স্কুলের টিফিন, ছুটির ঘণ্টা বাজলে ছাত্রছাত্রীলারঠে মুড়ি, বাদাম, পাঁপড় বেচেছু, যা ইনকাম হচে ওইলা লেহেনে সংসার চলছে। সবচেয়ে বেশি আনন্দ লাগচে স্কুলের
ছাত্রছাত্রী-শিক্ষকলাক দেখে।’
ঠাকুরগাঁও তথ্য বাতায়ন সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ে ৯১টি মহাবিদ্যালয়, ২৭৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৩৯টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৬৯টি মাদরাসা ও ৯৯৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। দেড় বছর পর ১২ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সশরীর ক্লাস শুরু হয়।
উপজেলার বিভিন্ন স্কুল ঘেষে গড়ে ওঠা কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশের দোকানগুলোতে শিক্ষার্থীদের পছন্দ ও চাহিদার দিকে খেয়াল করে বিভিন্ন ধরনের মালামাল ওঠান তারা। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়া বন্ধ হয়। ধীরে ধীরে তাদের ক্রেতার সংখ্যাও কমে যায়, সাথে কেনাবেচাও। তবে ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজ খোলায় আবার শিক্ষার্থীরা কেনাকাটা করছে। দোকানগুলোতে বেচাকেনাও বাড়ছে।
সূত্র: যুগান্তর