দৈনিক সংক্রমণের গ্রাফ আপাতত স্বস্তি দিলেও তাতে উল্লসিত হওয়া কিছু নেই। বরং আগামী ছয় মাসে মহামারী পরিস্থিতি আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পরামর্শদাতা তথা সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজ রিসার্চ অ্যান্ড পলিসির ডিরেক্টর মাইকেল অস্টারহোম।
তার কথায়, ‘এই কোভিড-১৯ আসলে দাবানলের মতো, প্রত্যেকটা মানুষকে না-পুড়িয়ে থামবে না।’ অর্থাৎ, এই ছয় মাসের মধ্যে হয় সবাই করোনায় আক্রান্ত হবেন, না হয় ভ্যাকসিন পেয়ে যাবেন- এমনটাই মনে করছেন এই সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ। দুটিই হতে পারে। আবার কেউ কেউ একাধিকবার করোনায় আক্রান্ত হতে পারে বলেও আশঙ্কা ব্যক্ত করেন অস্টারহোম।
আমেরিকার অর্ধেকেরও বেশি নাগরিকের সম্পূর্ণ টিকাকরণ হয়ে গেছে। স্কুল-কলেজ, অফিস-কাছারিও মোটামুটি খোলা। কিন্তু আগামী ছয় মাসে সংক্রমণের ঠেলায় ফের সব বন্ধ হতে পারে বলে মনে করছেন বাইডেনের পরামর্শদাতা। তার মানে কি ফের উপচে পড়বে হাসপাতাল? আপাতত সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কয়েক মাসের মধ্যে আবার সেই দুর্দিন ফিরে আসতে পারে বলে কার্যত গোটা বিশ্বকেই সতর্ক করলেন মার্কিন বিশেষজ্ঞ।
যথাযথ কোভিডবিধি মেনে চললেও নিস্তার নেই এই কোভিড-গ্রাস থেকে? অস্টারহোমের মতে, বিধিপালন এবং টিকাকরণের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু একটা ঢেউ থেকে আর একটা ঢেউ আসার মাঝে সার্স কোভ-২ যেভাবে রূপ বদলাচ্ছে, সেটাই ভাবনার। করোনার যেসব ভ্যারিয়েন্ট টিকাকে রেয়াত করছে না, গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া সেইসব প্রজাতি নিয়েই শঙ্কা দেখছেন মার্কিন বিশেষজ্ঞ। টিকাকরণে গতি এলেও সদ্যোজাত বা দুরারোগ্য কোনো রোগে আক্রান্তদের নিয়েই বেশি ভয় পাচ্ছেন তিনি।
অস্টারহোমের কথায়, ‘সংক্রমণের ঢেউ নামবে, আবার চড়বে। বিশ্বজুড়ে একটা বড় অংশের মানুষের যেহেতু টিকাকরণ হয়নি, তাই গণপরিবহণ, ক্লাসরুম কিংবা অফিস-কাছারিতে ফের গণসংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। বলাই বাহুল্য, এর জেরে অর্থনীতিও আরো একবার জোর ধাক্কা খাবে।’
এই মহামারী তাহলে শেষ কোথায়? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৩০ বছরের ইতিহাস ধরলে ৫ বছর পর্যন্তও স্থায়ী হয়েছে গ্লোবাল ফ্লু। করোনাও কি সে দিকেই এগোচ্ছে? ডেনমার্কের এপিডেমিওলজিস্ট লোন সিমোনসেনের দাবি, ‘কিছুই বলা যাচ্ছে না। কারণ, এই ভাইরাস একেবারেই নতুন, নিত্যনতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি করছে।’
এরই মধ্যে তবু টিকাকরণে গতি বাড়িয়ে ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছে ব্রিটেন, আমেরিকা, রাশিয়া, ইসরাইলের মতো দেশ। অথচ এসব দেশ থেকেও ‘ব্রেক থ্রু’ সংক্রমণের খবর আসছে রোজ। যার অর্থ- শিশুরা বা যারা টিকা পাননি, তাদের সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। করোনার ঝড় যে সহজে থামার নয়, মানছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। তাদের একটাই পরামর্শ- মাস্ক পরা, দূরত্ববিধি মেনে চলতেই হবে। শিখে নিতে হবে করোনার সাথে লড়াই করেই কিভাবে বাঁচতে হয়।
সূত্র : এই সময়