চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত সেনাবাহিনীর (অব.) মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারকার্যের চতুর্থ দফায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
মামলার ১৫তম সাক্ষী হিসেবে ছেনোয়ারা বেগমের জবানবন্দি গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মঙ্গলবারের কার্যক্রম। চলবে বিকাল পর্যন্ত।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, চতুর্থ ধাপের প্রথম দিনে চার সাক্ষীর হাজিরা দেওয়া হয়েছে। এরা হলেন- প্রত্যক্ষদর্শী ছেনোয়ারা বেগম, হাম জালাল, সালেহ উদ্দিন, মো. আলী আকবর। সেখান থেকে ১৫তম সাক্ষী হিসেবে ছেনোয়ারার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
এর আগে— ২০, ২১ ও ২২ সেপ্টেম্বর তিন দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছিলেন।
তৃতীয় দফার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হাফেজ জহিরুল ইসলাম আদালতকে বলেন, মেজর সিনহাকে টেকনাফ শামলাপুর উত্তর মারিশবুনিয়া এলাকার ট্যুইন্না পাহাড়ে ডাকাত হিসেবে সাব্যস্ত করে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছিলেন আসামিরা।
সিনহা হত্যা মামলার আসামি পুলিশের সোর্স নুরুল আমিন মোহাম্মদ আয়াজ ও নিজাম উদ্দিন মারিশবুনিয়া উম্মুল কোরান মসজিদের মাইকে ট্যুইন্না পাহাড়ে ডাকাত এসেছে বলে বারবার ঘোষণা দিলে মসজিদের ইমাম হাফেজ জহিরুল ইসলাম ওই সময় তাদের বাধা দেন এবং জানান যে তারা ডাকাত নয়, তারা সেনাবাহিনীর লোক। কিন্তু আসামিরা তা শুনেনি। পাহাড়ে হত্যা করতে না পারলেও পরবর্তী বাহারছড়া শামলাপুর চেকপোস্টে সিনহাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এ ছাড়া মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের লাশের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক রনধীর দেবনাথ আদালতে জবানবন্দি ও সাক্ষী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, আদালতে ডা. রনধীর দেবনাথ মেজর (অব.) সিনহাকে হত্যার পর কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে লাশের ময়নাতদন্ত করেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সিনহাকে হত্যার বিষয়ে আদালতে হুবহু বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
এদিকে আসামি ওসি প্রদীপের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত সিনহা হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে হত্যার বর্ণনা ও ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মারাত্মক গরমিল রয়েছে বলে দাবি করেছেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে কারাগার থেকে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ-লিয়াকতসহ ১৫ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।
তারা হলেন— বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেব নাথ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিশবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুরল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় সেই সময় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লিয়াকত আলীকে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি এবং রামু থানায় আরেকটি মামলা করে। এর পর মেজর সিনহা নিহতের ছয় দিন পর লিয়াকত আলী ও ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
পরে ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনকারী আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এর পর টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে গ্রেফতার করে র্যাব। গত ২৪ জুন মামলার অন্য পলাতক আসামি টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
সূত্র: যুগান্তর