সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সাত প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। দফায় দফায় বেড়েছে মেয়াদ ও ব্যয়। অনুমোদিত মেয়াদের মধ্যে বাস্তবায়ন শেষ হলে অতিরিক্ত ২২ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা সাশ্রয় হতো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা এসব প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ৬ হাজার ৫৫৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
এখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৭১১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের মতে, রেট শিডিউল পরিবর্তন, ডিজাইন ও স্পেশিফিকেশন পরিবর্তন, ভূমি অধিগ্রহণ খরচ বৃদ্ধি এবং নতুন আইটেম অন্তর্ভুক্তিসহ নানা কারণে প্রকল্প সংশোধন হতে পারে।
কিন্তু সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে প্রাথমিকভাবে ছোট কলবরে প্রকল্প গ্রহণ করে অনুমোদনের পর বাস্তবায়ন পর্যায়ে কলেবর বৃদ্ধি করে সংশোধন করা হয়। এসব কারণে প্রকল্পে ধীরগতি বিরাজ করে। সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় সাধারণ মানুষ। সার্বিকভাবে এডিপির বাস্তবায়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
দীর্ঘদিন ধরে বাস্তবায়ন হওয়া প্রকল্পগুলো হলো-ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ স্থাপন এবং বিসিক শিল্প পার্ক, সিরাজগঞ্জ স্থাপন প্রকল্প। এছাড়া আছে-জাতীয় রাজস্ব ভবন নির্মাণ, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার, রামু হয়ে মিয়ানমারের নিকটস্থ ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ, খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ এবং খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্প।
জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমরা তো চেষ্টা করেই যাচ্ছি। অনেকেই ঠিকমতো কাজ করতে চায় না, আবার কেউ কেউ কাজ করেন না। যেমন প্রকল্পে গতি বাড়ানোর জন্য আমরা প্রকল্প পরিচালকদের (পিডি) অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা দেওয়াসহ বিভিন্ন বিধিবিধান সহজ করেছি। কিন্তু লাভ কী। পিডিরা তো প্রকল্প এলাকাতেই থাকেন না। তাহলে কাজ আগাবে কী করে। এছাড়া শুরু থেকেই থাকে নানা জটিলতা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন-সময়মতো প্রকল্পের বাস্তবায়ন না হওয়ায় অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়। ফলে এটা সবারই জানা যে, জনগণের করের টাকার অপচয় হয়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালের ১৭ জুন অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ বোর্ড সভায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সিরাজগঞ্জে একটি শিল্পপার্ক স্থাপনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত দেন। এরপর থেকেই শুরু হয় প্রকল্প প্রণয়নের কাজ। এর মাঝে চলে গেছে প্রায় ২২ বছর। দীর্ঘ সময়ে সরকার বদল হয়েছে। বর্তমান সরকারও টানা তিন মেয়াদ ধরে ক্ষমতায়।
সে সময় আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের পরও প্রকল্পটির কাজ আজও শেষ হয়নি। সর্বশেষ মেয়াদ শেষ হয়েছে গত জুন মাসে। দীর্ঘদিনেও কাজ শেষ না হওয়ায় খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। এমন অবস্থায় করোনা মহামারির দোহাই দিয়ে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৩৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। কিন্তু সর্বশেষ সংশোধনীর মাধ্যমে করা হয় ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। এতে তিনবার ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৪৮৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ৬২৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ৯১ কোটি ১১ লাখ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। একই চিত্র দেখা গেছে প্রকল্পের মেয়াদের ক্ষেত্রেও। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। পরে ব্যয় না বাড়িয়ে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত।
এর মধ্যেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় দ্বিতীয় সংশোধনীর সময় ৩ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছিল। তৃতীয় সংশোধনীতে ২ বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এ প্রসঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা) ড. মো. আল আমিন সরকার বুধবার জানান, আমরা শতভাগ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে বর্ধিত মেয়াদেই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ করা যায়। কেননা আগের শিল্প মন্ত্রণালয়ের ইতিহাস এখন আর নেই। এখন প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রী সচিব স্যারসহ সংশ্লিষ্ট সবাই সোচ্চার রয়েছেন।
দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা আরেকটি প্রকল্প কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পটি চলছে ২০০৯ সাল থেকে। কবে শেষ হবে জানে না কেউ। এটির গোড়ায় গলদ ছিল। ছিল ব্যাপক অনিয়মও। সর্বশেষ সংশোধনীর জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হলে ক্ষুব্ধ হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এটি তদন্তের নির্দেশ দেন। সম্প্রতি আইএমইডির তদন্ত প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশসহ ফিরে আসে এইএমইডিতে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে আইএমইডি থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের স্বার্থে দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব আগামী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২৭৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৬১১ কোটি ৮ লাখ টাকা। এখন দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ৭১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে ৬৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এদিকে প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত মেয়াদ ছিল ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া এক বছর বাড়িয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।
এতেও শেষ হয়নি কাজ। ফের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া এক বছর বাড়িয়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। পরে প্রথম সংশোধনীর সময় ৩ বছর বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এতেও শেষ হয়নি বাস্তবায়ন। মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেলে এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে দেয় পরিকল্পনা কমিশন। এবার দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে আড়াই বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে এ প্রকল্পে সময় লাগবে সাড়ে ১১ বছর।
এ প্রসঙ্গে আইএমইডির সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন-সত্যিকার অর্থে যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিলে অন্যরা এমন অনিয়ম করতে দ্বিধাবোধ করবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্পটি চলমান রেখে সমাপ্ত করার জন্য এটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশও করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। তিনি জানান, প্রকল্পটি যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় এত বেশি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে যে উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল সেই সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
এছাড়া চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার, রামু হয়ে মিয়ানমারের নিকটস্থ ঘুমদুম পর্যন্ত রেলপথ প্রকল্পের কাজ ১১ বছর ১ মাসে হয়েছে মাত্র ৬২ শতাংশ। অনুমোদিত মেয়াদ রয়েছে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে ৩৮ শতাংশ কাজ সমাপ্ত করা সম্ভব কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। তবে ইতোমধ্যেই ১ বছর মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে মিয়ানমারের সীমান্ত পর্যন্ত অর্থাৎ ঘুমদুম পর্যন্ত নিতে সে দেশের অনুমতি মেলেনি এখনো। ফলে এ অংশটির নির্মাণ এখনি হচ্ছে না বলে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার ৮১১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা; যা মোট প্রাক্কলনের মাত্র ৩২ দশমিক ২২ শতাংশ। প্রকল্পটি মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল এক হাজার ৮৫২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ২০১০ সালের ৬ জুলাই অনুমোদন দেয় একনেক।
এরপর আর এ প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি হয়নি। চীন থেকে অর্থ সংগ্রহের কথা ছিল। কিন্তু সেটি হয়নি। প্রায় ৫ বছর পর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অর্থায়নে রাজি হওয়ায় নতুন করে আবারও ২০১৬ সালের এপ্রিলে অনুমোদন দেওয়া হয় প্রকল্পটি। এ সময় ১৬ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে এটির ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ১০১ কিলোমিটার এবং মিয়ানমারের কাছে ঘুমদুম পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নতুন সিঙ্গেল ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বুধবার বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হলে আরও ১ বছর প্রয়োজন হবে। এজন্য ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।
এছাড়া বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাসের আলাদা লেন তৈরির ৫ বছরের প্রকল্পে পেরিয়ে গেছে ৮ বছর। এখনো অগ্রগতি ৪০ শতাংশ। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। রাজধানীর হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত দ্রুত বাস চলাচলের জন্য নেওয়া ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পে বিরাজ করছে ধীরগতি।
এর কারণ হিসাবে জানা গেছে, যে পথে প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা বাদ দিয়ে নতুন পথ নির্ধারণ, প্রকল্প নেওয়ার আগে চূড়ান্ত সমীক্ষা না করা, বারবার নকশা পরিবর্তন ও নতুন নতুন অবকাঠামো যুক্ত করায় এমন অবস্থা হয়েছে। তবে প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে ১০৯ শতাংশ, যা টাকার অঙ্কে ২ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। ২০ কিলোমিটার সড়কে বাসের আলাদা লেন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
যা ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর অনুমোদন দেয় একনেক। সে সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখন মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২২ সাল পর্যন্ত । নতুন করে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। ব্যয় বৃদ্ধির মূল কারণ সময়মতো কাজ শেষ না হওয়া। দেরি হওয়ায় নির্মাণ উপকরণের দাম বাড়ার কারণে ৭২৩ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে। পরামর্শকদের বাড়তি সময়ের বেতন-ভাতাও যোগ হয়েছে। এর বাইরে কিছু কাজ যোগ করা এবং বাড়তি জমি অধিগ্রহণও ব্যয় বৃদ্ধির জন্য দায়ী।
প্রকল্প পরিচালক সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এএসএম ইলিয়াস শাহ বলেন, আর্থিক অগ্রগতি হয়তো ৪০ শতাংশ হতে পারে। কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ হয়েছে।
নির্ধারিত মেয়াদে বাকি কাজ শেষ হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, অফিসিয়ালিতো ওইভাবে বলা যায় না। তবে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করছি এখন যে ব্যয় আছে তার মধ্যেই বাস্তবায়ন করা হবে।
জাতীয় রাজস্ব ভবন নির্মাণ প্রকল্পের অবস্থাও শোচনীয়। এটি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু সেটি না হওয়ায় তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এর মধ্যেও শেষ না হওয়ায় পরবর্তীতে দুই দফায় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। পরে আবারও মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
এরই মধ্যে ঠিকাদার জিকে শামীম গ্রেফতার হওয়ায় এ প্রকল্পটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। প্রকল্পের মূল ব্যয় ১৪১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা হলেও শেষ পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এখনও চলছে প্রকল্পটি। ধীর গতির কারণ হিসাবে সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের মূল অনুমোদিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুযায়ী ২০ তলা ভিত্তি ও ২টি বেজমেন্টসহ ১২ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের সংস্থান ছিল।
পরে সংশোধিত ডিপিপিতে কোনোরকম চিন্তাভাবনা না করেই ৩০ তলা ভিত্তি ও ২টি বেজমেন্টসহ ১২ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু প্রকল্প এলাকা শেরেবাংলা নগরে ১৫০ ফুটের বেশি উচ্চতা বিশিষ্ট ভবন বা টাওয়ার নির্মাণের ক্ষেত্রে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ নিয়েও পরে তৈরি হয় জটিলতা। এখন ১২ তলা হলেও বেজমেন্ট তৈরিতেই বিপুল অঙ্কের অর্থ খরচ হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক লুৎফুল আজীম বুধবার বলেন, করোনা মহামারির কারণে কিছুটা দেরি হয়েছিল। তবে এখন রাত-দিন কাজ চলছে। আশা করছি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যেই এ ভবনে অফিসিয়াল কাজ শুরু করা যাবে। ফিনিশিং কাজে কিছুটা সময় লাগছে।
খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ১ হাজার ৭২১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এবার দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে আরও ৪৫৯ কোটি ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। এতে প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকায়। সে হিসাবে প্রথম প্রাক্কলিত ব্যয়ের তুলনায় বর্তমান ব্যয় বেড়েছে আড়াই গুণ।
মূল প্রকল্পটি ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর ১ হাজার ৭২১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন পায় একনেকে। লক্ষ্য ছিল, ২০১৩ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের। পরে রেলপথ মন্ত্রণালয় ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এক বছর বাড়িয়ে নেয়। এরপর মোট ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য দিয়ে প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী অনুমোদন করা হয়।
পরে ব্যয় বাড়ানো ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ প্রথমবার ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এবং দ্বিতীয়বার ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এখন আবার প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে।
খুলনায় আধুনিক কারাগার নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয় ২০০৮ সালে। আর বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে। ওই সময় প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ, কারাগার অভ্যন্তরে নির্মাণাধীন চারতলা হাসপাতাল পাঁচতলাকরণ, কারারক্ষীদের বাসভবন সম্প্রসারণ, দর্শনার্থীদের স্থান ও ভবনের বর্ধিতকরণসহ বেশকিছু নতুন প্রস্তাব সংযুক্ত হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।
প্রথম দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ না হওয়ায় আরও ৬ মাস মেয়াদ বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। পরে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ালেও এর মধ্যে শেষ হয়নি বাস্তবায়নের কাজ। শুরুতে প্রাথমিক ব্যয় ছির ১৪৪ কোটি টাকা। পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি টাকা।
সূত্র: যুগান্তর