চরফ্যাশনের উপকূলের জেলেদের জালে সাগর মোহনায় প্রতিদিন ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ডিমওয়ালা ইলিশ। আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ থাকবে- এমন ঘোষণার আগেই এত ইলিশের আগমনে জেলেদের মুখে হাসি ফুটেছে।
ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়তে থাকায় জেলেপাড়ায় ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। ইলিশ মৌসুমের শেষ সময়ে জেলেরা দিনরাত ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে জাল ফেলতে নদীতে যাচ্ছে নদীতে। মৌসুমের শেষ সময়ে ইলিশ ধরে দাদনের টাকা পরিশোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এ বছর ইলিশ মৌসুমের গত তিন মাসে অমাবস্যার জো ছাড়া তেমন ইলিশ মেঘনায় ধরা পড়েনি। বড় ইলিশ ধরা পড়লেও বেশির ভাগ সময় জেলেরা মাছ বিক্রি করে ট্রলারের জ্বালানি তেলের খরচও জোগাতে পারেননি।
অন্যদিকে ঝাঁকের ইলিশ ধরে জেলেরা পাড়ে না ফিরতেই এক শ্রেণির ভ্রাম্যমাণ মাছ ব্যবসায়ী ওইসব মাছ মধ্য মেঘনা থেকেই সস্তায় কিনে নিয়ে লঞ্চ-ট্রলারযোগে ঢাকাসহ বড় বড় শহরে পাঠিয়ে দেয়। এ ছাড়া ভারতে মাছ ব্যবসায়ীদের অ্যাজেন্টরাও একই পদ্ধতিতে জেলেদের কাছ থেকে মাছ সংগ্রহ করে থাকে। মধ্য মেঘনায় মাছ কেনা-বেচার কারণে জেলেরা এ বছর মাছের দাম পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন।
এদিকে গত দুদিন ধরে ঝাঁকের ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করায় সাধারণ জেলেরা লোকশন পুষিয়ে নিতে দিনরাত মেঘনায় জাল ফেলছেন।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ইলিশ রক্ষায় আশ্বিনী পূর্ণিমার সময় প্রধান প্রজনন মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করে আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন এ অঞ্চলের ইলিশ চ্যানেলে মাছ ধরা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর পর ১ নভেম্বর থেকে ৬ মাসের জন্য ঝাটকা ধরা আইন বলবৎ থাকবে।
এসব আইনের জন্য বলা যায়, বর্তমান সময়ই হচ্ছে ইলিশ মৌসুমের শেষ সময়। ফলে আগামী দুই-তিন দিন বিনা বাধায় মেঘনায় জেলেরা জাল ফেলতে পারবেন। আর এ সময়ে সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উঠে আসায় ওইসব ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে। মাছ ধরার বাধা না থাকায় জেলেরা ডিমওয়ালা ইলিশসহ ঝাটকা ইলিশও ধরছেন নির্বিঘ্নে।
জেলেরা জানায়, প্রতি বছর মৌসুমের শেষ সময়ে বড় ইলিশ ডিম ছাড়তে ভোলার শাহবাজপুর চ্যানেলের মিঠা-নোনাপানিতে চলে আসে। এ বছরও ১ অক্টোবরের আগেই এসব ইলিশ ডিম ছাড়তে চলে আসছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পাশাপাশি গত কয়েক দিন টানা বৃষ্টি থাকায় মেঘনা ও সাগর মোহনায় ইলিশ বিচরণের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান তারা। আর এ কারণে ঝাঁকের ইলিশ উঠে আসছে।
মাছ ব্যবসায়ী হাসেম মহাজন জানান, গত দুদিন ধরে কিছু মাছ পড়তে শুরু করেছে। তবে ডুবোচরের চেয়ে গভীর পানিতে এসব মাছ ধরা পড়ছে বেশি। এতে সাধারণ জেলেরা লাভবান হচ্ছেন।
সূত্র: নয়াদিগন্ত