দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ভোলার লালমোহনে মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশের দেখা পাওয়ায় আনন্দে ভাসছিলেন জেলেরা। নাওয়া-খাওয়া ভুলে ইলিশ ধরা আর মোকামে চালান করা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। তবে আকাল কাটিয়ে যখন ইলিশে মাছঘাটগুলো ভরে উঠতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞার খবরে হতাশা দেখা দিয়েছে জেলেপল্লীতে। পুরো বছরের ধারদেনা পরিশোধ নিয়েও শঙ্কায় আছে জেলেরা।
এদিকে ইলিশের অভায়াশ্রমে অভিযানের সময় নির্ধারণ নিয়েও অভিযোগ রয়েছে মৎস্যজীবীদের। তবে নদীতে কিছুটা বিলম্বে ইলিশের দেখা মিললেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আশাবাদী মৎস্য বিভাগ।
আষাঢ় মাস থেকে মেঘনা-তেতুলিয়া নদীতে ইলিশের মৌসুম শুরু হলেও এবারের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। চলতি মৌসুমের প্রথম তিন মাস জেলেরা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ থেকে বঞ্চিত ছিল। এ দীর্ঘ সময়ে ইলিশের আশায় নদীতে গিয়ে আয়ের পরিবর্তে বেড়েছে মহাজনের দাদনের পরিমাণ। তবে সম্প্রতি ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরাপড়ায় খুশি শিকারীরা। অলস সময় নষ্ট না করে দলে দলে জেলেরা নদীতে ছুঁটছে ইলিশ ধরে পূঁজি বাড়ানোর আশায়। ইলিশে ট্রলার বোঝাই করে ঘাটে ফিরতে দেখা যায়। কেনা বেচায় সরগরম ঘাটগুলো। এদিকে শেষ মৌসুমে ধরা ইলিশে ধার-দেনা পরিশোধ ও ব্যবসায়ীদের পুঁজি হারানোর শঙ্কা থাকলেও হতাশা কাটছে না আজ ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়ায় মা ইলিশ রক্ষা অভিযানকে ঘিরে। নদীতে পাওয়া ইলিশের পেটে পর্যাপ্ত ডিম না থাকায় অভিযানের সময় নির্ধারণ
নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জেলেরা বলছে, আকাল কাটিয়ে মেঘনা তেঁতুলিয়া নদীতে যখন ইলিশ আসতে শুরু করেছে তখনই নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়া তাদের আশা পূরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
উপজেলার ধলীগৌরনগরের পাটাওয়ারীর হাট সংলগ্ন কোবখালী মাছ ঘাটের সভাপতি মোঃ মানু মিয়া (মানু দালাল) সাধারণ সম্পাদক মোঃইব্রাহিম দালাল ও আড়ৎদার মোঃ ছালাউদ্দীন দালাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ বছর পুরো মৌসুমে নদীতে মাছের দেখা মেলেনি ধার-দেনা মাথায় নিয়ে জেলেরা কষ্টে দিনযাপন করে আসছেন। গত কিছু দিন যাবৎ নদীতে যখন মাছ পড়া শুরু হয়েছে তখনই নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে।
তারা আরো জানান, কাঙ্ক্ষিত ইলিশে এখনো পুরোপুরি ডিম লক্ষ করা যায়নি, ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা আরো কিছুদিন পরে জেলেদের মাছ ধরতে সুযোগ দেয়ার দাবি করেন তারা।
বাতিরখাল এলাকার জেলে, মোসলেউদ্দিন,নুর ইসলাম,বাবলু ও জোটন সিল জানান, এবছর নদীতে আমরা কাঙ্ক্ষিত মাছ পাইনি , তবে এখন আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভালোই মাছ পাচ্ছি। এরই মধ্যে মা ইলিশ রক্ষার অভিযানের সময় নির্ধারণ করায় আমাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। কিভাবে এনজিও ও মহাজনদের ঋণ দিবো।
কামারের খাল ও মৎস্যজীবী ব্যবসায়ী ওহিদুর রহমান শরীফ জানান, আমাদের গদিতে আমরা এখন পর্যন্ত যে সকল মাছ আসছে তার ৭৫% মাছের ডিম এখনো আসে নাই তাই নিষেধাজ্ঞা কিছু দিন পরে হলে ভালো হতো, এখন সরকার যেহেতু নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আমরা তা মেনে চলবো।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম বলেন, সঠিক সময়ে না হলেও পরে ইলিশের দেখা মিলায় জেলে পাড়ায় আনন্দ দেখা গেছে। এতে আমরাও আনন্দিত, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইলিশ প্রজননের সময় বারবার চেঞ্জ হচ্ছে।
ভোলায় চলতি বছর জেলায় ইলিশের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৭৭ হাজার মে. টন। মৌসুমের প্রথম তিন মাসে ধরা পড়েছে ৩৮ হাজার দুই শ’ মে. টন ইলিশ।
সূত্র: নয়াদিগন্ত