নওগাঁর রাণীনগরে প্রায় ১৩ বছর ধরে এক পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী সুভাষ চন্দ্র সরকার।
ঘটনাটি ঘটেছে রাণীনগর উপজেলার পারইল ইউনিয়নের পারইল গ্রামে।
পারইল গ্রামের ভুক্তভোগী মৃত গজেন্দ্রনাথের ছেলে সুভাষ চন্দ্র সরকার জানান, তিনি ১৯৮৮ সালে তার বিয়ের দিন পাড়ায় হরিবাসর অনুষ্ঠিত হয়। বিয়ের লোকজন মাছ-মাংস খেয়ে হরিবাসর চত্বরে চলাফেরা করার অপরাধে তাকে প্রায় ৫/৭ বছর ধরে একঘরে করে রাখা হয়। এরপর সমাজের লোক ডেকে সমাধান চাইলে তার ২০০ টাকা জরিমানা এবং বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে লোকজনকে খিঁচুড়ি খাইয়ে সমাজে অন্তর্ভুক্ত হন। এর পর আবারো নানা অযুহাতে তাকে একঘরে করে রাখা হয়।
এর পর ২০০৬ সালে তাকে সমাজে স্থান দেয়। ওই সময় গ্রামের লোকজন পারইল মহা শ্বসান ও চন্ডিমন্দিরের পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে। এর পর ওই কমিটির কাছ থেকে পূর্বের আয়-ব্যয়ের হিসাব চেয়েও দিতে না পারায় রেজুলেশনের মাধ্যমে গ্রামবাসীর সিদ্ধান্তক্রমে পূর্বের কমিটির সভাপতি সম্পাদকের উপর আদালতে মামলা দায়ের করেন। গত ২০০৮ সালে আবারো তাকে একঘরে করে রাখা হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না দিলেও ওই পাড়ায় বিয়ে, অন্যপ্রশানসহ সামাজিক আচার অনুষ্ঠান এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি থেকে দুরে রেখেছে তাকে। ১০/১২ বছর আগে সামাজিক এমন বিরুপ আচরণে একমাত্র মেয়ের বিয়ে অন্যত্র থেকে দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিন আগে তার চাচাতো ভাই ভবতোষ মারা যান। তার সামাজিক খাওয়া দাওয়া হয়েছে শুক্রবার দিন। সমাজের সবাইকে দাওয়াত দিলেও তাকে দাওয়াত দেয়া হয়নি। কী কারণে আমাকে একঘরে করে রাখা হয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তর কেউ দিচ্ছেন না। আমার পরিবারবর্গকে পাড়ার সমাজ থেকে সমাজচ্যুত করে রেখেছে পাড়া থেকে উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে সামাজিক, শারীরিক ও অর্থনৈতিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করাসহ একের পর এক মিথ্যা মামলায় হয়রানি করছে। এতে করে চরমভাবে সমাজে তথা এলাকার লোকজনের কাছে হেও প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। গত কয়েক বছরে বিষয়টি সুষ্ঠু সমাধানের জন্য পাড়ায় প্রায় নয় দফা সমাজের লোকজন ডেকেও কাউকে পাইনি। ইউনিয়ন পরিষদে সুষ্ঠু সমাধান চেয়ে অভিযোগ করেও কোনো ফল হয়নি। তাই স্ত্রী-সন্তান তথা পরিবার নিয়ে সমাজে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করার লক্ষে সুষ্ঠু সমাধান পেতে গ্রামের মাতবর শুনিল চন্দ্র সাহা, দ্বিজেন্দ্রনাথ প্রামানিকদের বিরুদ্ধে নতুন করে গত ২৯ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
গ্রামের মাতবর শুনিল চন্দ্র সাহা ও দ্বিজেন্দ্রনাথ প্রামানিক বলেন,তাকে একঘরে করে রাখা হয়নি। সমাজে সবার সাথে ওঠ-বস করছে এবং চলাচলও করছে। তবে সমাজের লোকজনদের প্রতি অন্যায়, প্রতারণা মামলা করাসহ সামাজিকভাবে নানা বিদ্রুপ করার কারণে সমাজের লোকজন তাকে এড়িয়ে চলছে।
পারইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, গত ৩/৪ বছর আগে সুভাষ চন্দ্র এমন একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সেটা সমাধান করে দিয়েছিলাম। তবে এখন কী অবস্থা তা বলতে পরব না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে সমাধানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র: নয়াদিগন্ত