পারিবারিক অশান্তির কারণে রাজধানীর গুলিস্তানে সবার সামনে পুরুষাঙ্গ কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন কুদ্দুস মিয়া (৬২) নামে এক ব্যক্তি। রোববার রাতে কুদ্দুস মিয়ার বড় ছেলে সোহাগ নয়া দিগন্তকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ছেলে সোহাগ বলেন, আমার বাবা দু’টি বিয়ে করেছেন। আমি তার প্রথম ঘরের সন্তান। তার দ্বিতীয় পক্ষের সংসারেও একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। তার অর্থাৎ আমার সৎ ভাই) কিছুটা মানসিক সমস্যায় আছে। গত বুধবার আমার বাবা তার ছোট ছেলেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে অকগুলো আঘাত করেন। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। রোববার যখন আমার সেই ভাইকে হাসপাতাল থেকে বাসায় এনে খেতে বসবো তখনি ফোন পেলাম, বাবা এরকমটা করেছেন। আমি কি বলবো- বুঝতে পারছি না। উনি ‘পাগল’ হয়ে গেছেন।
সোহাগ আরো বলেন, আমি ছোটখাটো একটা ব্যবসা করি। ৬১ হাজার টাকা ধার করে সৎ ছোট ভাইয়ের চিকিৎসা করিয়েছি। এখন বাবা এরকম করলো। আসলে আমরা কী করবো, বুঝতে পারছি না। তিনি কেন এমন করছেন তাও বুঝতে পারছি না।
প্রথম স্ত্রী বা দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে তার কোনো বিরোধ চলছে কিনা- জানতে চাইলে বড় ছেলে সোহাগ বলেন, আমাদের সাথে কোনো ঝামেলা নেই। দ্বিতীয় পক্ষের সাথে কিছু হয়েছে কিনা তা বলতে পারছি না। এরপর সোহাগ আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এর আগে আহত কুদ্দুস মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, তার এক স্ত্রী রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, ল্যাবএইডে চাকরিরত স্ত্রী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। তার সাথে কোনো বিরোধ বা পরকীয়া-সংক্রান্ত কারণেও তিনি এরকম করতে পারেন। তা না হলে আত্মহত্যার আরো অনেক পথ ছিল। পুরুষাঙ্গ কাটবেন কেন?
তবে কী কারণে কুদ্দুস মিয়া এরকম করলেন তা জানা যাবে তিনি সুস্থ হওয়ার পর।
রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর গুলিস্তানের মওলানা ভাষানী স্টোডিয়ামের সামনে নিজের পুরুষাঙ্গ কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন কুদ্দুস মিয়া। এ সময় সেখানে দায়িত্বরত পল্টন থানার এএসআই গিয়াস উদ্দিন দৌড়ে গিয়ে কুদ্দুসকে ধরে ফেলেন। পরে তার নাম-ঠিকানা জানার চেষ্টা করা হলেও প্রথমে তিনি তার নাম ঠিকানা বলেননি। পরে গুলিস্তান সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এসআই ওবায়দুর রহমান, সহকারী উপ-পরিদর্শক গিয়াস উদ্দিন ও নয়া দিগন্তের প্রতিবেদক ইকবাল মজুমদার তৌহিদের আপ্রাণ চেষ্টা ও অনুরোধে আহত কুদ্দুস মিয়া তার নাম-ঠিকানা ও ছেলের ফোন নম্বর দেন। এ সময় এএসআই গিয়াস উদ্দিন ও কনস্টেবল আশরাফুল ইসলাম ইসলাম ও নয়া দিগন্তের প্রতিবেদক দ্রুত আহত কুদ্দুস মিয়াকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান।
সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, কুদ্দুস মিয়া নিজের পুরুষাঙ্গের প্রায় ৫০% কেটে ফেলেছেন। তবে তার রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়েছে।
এ সময় এএসআই গিয়াস উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, মানুষটি নিশ্চয়ই খুব কষ্ট ও মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এই বয়সে এরকম আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। বিষয়টি আমাকে খুব মর্মাহত করেছে।
এএসআই গিয়াস উদ্দিন আরো জানান, আহত কুদ্দুস মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার উত্তর পাইরতলা গ্রামের মৃত আলী মিয়ার ছেলে।
সূত্র: নয়াদিগন্ত