আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংঘটিত জাল জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে অর্থের পরিমাণ নিরূপণ করে সেগুলোকে সরাসরি খেলাপি ঋণ হিসাবে চিহ্নিত করতে হবে। একইসঙ্গে এর বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে হবে। জাল জালিয়াতি ছাড়াও ডাকাতি, অর্থ আত্মসাৎ বা তহবিল তছরুপের অর্থের বিপরীতে এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
এ বিষয়ে রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সার্কুলার জারি করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ নির্দেশনা সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিক থেকেই কার্যকর করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগে জাল জালিয়াতি বা তহবিল তছরুপ হলে ওই অর্থ সরাসরি খেলাপি করা হতো না। ঋণ বা লিজের মেয়াদ শেষে গ্রাহক তা পরিশোধ না করলে চলতি ঋণের ক্ষেত্রে ৩ বা ৬ মাস পর এবং মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে ৬ বা ৯ মাস পর খেলাপি করা হতো। প্রথমে নিুমান হিসাবে খেলাপি করা হতো। এর বিপরীতে মাত্র ২০ শতাংশ প্রভিশন রাখা হতো। অনেক ক্ষেত্রে জালিয়াতির ঋণের মেয়াদ বাড়িয়ে বা নবায়ন করে নিয়মিত দেখানো হতো। এতে করে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ বেরিয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ব্যবস্থায় তাৎক্ষণিকভাবে এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ত না। জালিয়াতির অর্থ খেলাপি করা হলে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
নতুন নির্দেশনা কার্যকর হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাবে। একইসঙ্গে বাড়বে প্রভিশন সংরক্ষণের পরিমাণও। এতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোটা অংকের অর্থ আটকে যাবে। ফলে প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতি আরও বাড়ার আশংকা করা হচ্ছে। তবে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ভিত্তির সক্ষমতা বাড়বে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, জাল জালিয়াতি, ডাকাতি, অর্থ আত্মসাৎ বা তহবিল তছরুপের অর্থের পরিমাণ তৎাক্ষণিকভাবে নিরূপণ করতে হবে। এসব অর্থ একটি প্রোটেস্টেড বিল বা বিতর্কিত বিল সৃষ্টি করে তার বিপরীতে জমা রাখতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে এগুলোকে খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করতে হবে। বিচার-বিশ্লেষণ করে যদি দেখা যায় ওই অর্থ আদায়ের কোনো সম্ভাবনা আছে তবে সেগুলোকে সন্দেহজনক হিসাবে শ্রেণিকরণ বা খেলাপি করতে হবে। এর বিপরীতে ৫০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হবে। যদি ওইসব অর্থ আদায়ের কোনো সম্ভাবনা না থাকে তবে ওইসব অর্থ আদায় অযোগ্য মন্দ বা ক্ষতি মানে শ্রেণিকরণ করতে হবে। এর বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হবে শতভাগ।
সূত্র জানায়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি তিন মাস পর পর ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশন সংরক্ষণ প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠায়। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের প্রতিবেদন নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পাঠাবে। ওই সময় জাল-জালিয়াতির অর্থও আলোচ্য শ্রেণিমানে খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করে প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। একইসঙ্গে রাখতে হবে প্রভিশন।
উল্লেখ্য, সাতটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ইতোমধ্যে ঘটেছে। এর মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ওইসব অর্থ এখন থেকে নতুন নিয়মে শ্রেণিকরণ করতে হবে।
সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, ক্ষতি হিসাবে চিহ্নিত ব্যয়কেও মন্দ হিসাবে শ্রেণিকরণ করে এর বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হবে। আগে রাখতে হতো না।
অগ্রিম প্রদত্ত বেতন, ভাতা, ভ্রমণ ব্যয়, আপ্যায়ন ব্যয়, বিজ্ঞাপন ব্যয়, ব্যবসা উন্নয়ন ব্যয় এসব ১২ মাস বা এর বেশি সময় অসমন্বিত থাকলে তা মন্দ হিসাবে শ্রেণিকরণ করতে হবে। এর বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হবে। তবে ১২ মাসের কম হলে এ বিধান কার্যকর হবে না। আগে এ ধরনের বিধান ছিল না।
এতে বলা হয়, কোনো ঋণ বা লিজ বা সম্পদ আদায়ে আইনি ব্যবস্থা চলমান থাকলে যদি মনে হয় কোন ধরনের অনিশ্চয়তা আছে তবে এগুলোকে সন্দেহজনক হিসাবে চিহ্নিত করে এর বিপরীতে ৫০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হবে। আর যদি আদায় না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে সেগুলোকে মন্দ হিসাবে চিহ্নিত করে এর বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হবে।
সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি ছক করে দিয়েছে। এই ছক অনুযায়ী সেপ্টেম্বর প্রান্তিক থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রতিবেদন পাঠাতে হবে।
সূত্র: যুগান্তর