আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পেছাচ্ছে। সাধারণত প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিলে এই দুটি পরীক্ষা নেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে উভয় স্তরের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি।
‘অটোপাস’ (আগামী বছরের) পেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা দশম শ্রেণিতে আর এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠেছে। সারা বছরে তারা একদিনের জন্যও সশরীরে ক্লাসে বসতে পারেনি। এ অবস্থায় সিলেবাস শেষ করার পাশাপাশি ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে পরীক্ষা পেছানোর চিন্তা চলছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এবারের এসএসসি পরীক্ষা শেষ হবে ২৩ নভেম্বর। সেক্ষেত্রে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি পরের এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ শিক্ষার্থীদের ক্লাসের বিষয় আছে। কবে ও কীভাবে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে তা পরে জানাতে পারব।’
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এসএম আমিরুল ইসলাম বলেন, রেওয়াজ হচ্ছে এসএসসির দুই মাস পর এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হয়ে থাকে। তাই এসএসসি পেছানো হলে স্বাভাবিকভাবেই এইচএসসি পরীক্ষাও পেছানো হবে।
বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি আগামী বছরের এই দুই পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা কাজ করছে। ১৪ নভেম্বর এসএসসি ও ২ ডিসেম্বর এইচএসসি নির্ধারিত আছে। এ কারণে এসব পরীক্ষার্থীকে নিয়েই ব্যস্ততা বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আগামী বছরের শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষার বিষয়টি অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্ব পাচ্ছে।
এই দুই পরীক্ষায় প্রায় ৩৮ লাখ পরীক্ষার্থী আছে। সাধারণত দশম শ্রেণিতে অক্টোবর-নভেম্বরে নির্বাচনী পরীক্ষা ও ফরম পূরণের কাজ চলে। আর দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নভেম্বর-ডিসেম্বরে একই কাজ চলে। সেই হিসাবে এখন এসব কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ বছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এই ব্যস্ততা এখনো শুরু হয়নি। বরং ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়েই ব্যস্ততায় সময় কাটছে প্রতিষ্ঠানগুলোর।
ফলে আগামী বছরের শিক্ষার্থীদের ক্লাস এবং মূল্যায়ন এখনো তেমন একটা জোরেশোরে শুরু হয়নি। যদিও সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, তারা সপ্তাহে ৬ দিনই স্কুল-কলেজে আসছে। রেওয়াজ অনুসরণ করা হলে ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা যথাক্রমে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিলেই হয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুন নাহার বলেন, এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস শেষ করে তাদের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর আমরা এখনো এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছি। ফলে আগামী বছরের (২০২২ সাল) পরীক্ষার্থীদের স্বাভাবিক ক্লাস হচ্ছে। কোনো ধরনের পরীক্ষার ব্যাপারে শিক্ষা বোর্ড থেকে এখনো নির্দেশনা আসেনি। রাজধানীর আরও কয়েকটি স্কুল ও কলেজের প্রধানরা একই কথা জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, সরাসরি পরীক্ষার অনুমতির অপেক্ষায় আছেন তারা।
এদিকে শিক্ষা বোর্ডগুলোও এবারের পরীক্ষার্থীদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। একটি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, ‘এখনো আমরা এবারের পরীক্ষার্থীদের নিয়েই কাজ করছি। এই কাজ শেষ হলে আগামী বছরের পরীক্ষা নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উভয় ধরনের পরীক্ষার্থীদের যত্ন নিচ্ছে। এর মধ্যে আগামী বছরের পরীক্ষার্থীদের এর আগে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণিতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদের দেওয়া অ্যাসাইনমেন্ট আর অনলাইনে নেওয়া বিভিন্ন ধরনের মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সরাসরি পরীক্ষার অনুমতি আমরা এখনো দেইনি। এ কারণে আগামী বছরের পরীক্ষার্থীদের এ রকম কোনো পরীক্ষা কোথাও হচ্ছে না।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, আগামী বছরের পরীক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় উপেক্ষিত হলেও কিছু প্রতিষ্ঠানে অভিভাবকদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে অনেকটাই বেপরোয়া। এতে করোনায় চাকরিচ্যুত বা উপার্জন কমে যাওয়া অভিভাবকের সন্তানরা বিপাকে পড়েছেন।
নাম প্রকাশ না করে রাজধানীর দনিয়া কলেজের এক অভিভাবক জানান, পরীক্ষার আর ৫ মাস বাকি থাকলেও তার সন্তানকে এখনো দ্বিতীয় বর্ষে উঠানো হয়নি। অন্যদিকে দ্বিতীয় বর্ষে উঠানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানটি পদে পদে অর্থ দাবি করছে। তা পরিশোধ করতে শিক্ষার্থীদের নাভিশ্বাস উঠছে।
সূত্র: যুগান্তর