পুঁজিবাজারে আবার দরপতন হয়েছে। গত বৃহস্পতি থেকে শনিবার পর্যন্ত পুঁজিবাজারের প্রায় ১০০ কোম্পানি লভ্যাংশ বা প্রান্তিক হিসাব প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে অর্ধেকের মতো কোম্পানি ঘোষণা করেছে লভ্যাংশ।
এসব কোম্পানির মধ্যে ১০টির মতো কোম্পানি লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুধবারও ১২টি কোম্পানি একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এছাড়া দুটি কোম্পানি শেয়ারপ্রতি ৫ পয়সা, বেশ কয়েকটি কোম্পানি শেয়ারপ্রতি ১০ পয়সা, কয়েকটি ২০ পয়সা, কয়েকটি ৩০ পয়সা, কোনো কোনেটি ৪০ পয়সা, কোনোটি ১০০ শেয়ারে একটি, কোনোটি ১০০ শেয়ারে দুটি বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে।
এসব লভ্যাংশ ঘোষণার পর রোববার প্রথম লেনদেনে কী হয় তা নিয়ে জিজ্ঞাসা ছিল পুঁজিবাজারে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত সূচক বেড়েই লেনদেন হচ্ছিল। কিন্তু এরপর সোয়া দুই ঘণ্টায় চাপ আর সামলানো যায়নি।
শেষ পর্যন্ত ৬১ পয়েন্ট কমে শেষ হয় লেনদেন। ১২২টি কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২২৬টির দর। কমে গেছে লেনদেনও।
টানা ছয় সপ্তাহ দরপতনের পর গত সপ্তাহের প্রথম দুই দিনে ১৯০ পয়েন্ট সূচক পতনে যে উৎকণ্ঠা দেখা দেয়, তার অবসান হয় পরের তিন কর্মদিবসে। মঙ্গলবার ১২০ পয়েন্ট, বুধবার ৬ পয়েন্ট এবং বৃহস্পতিবার ৫০ পয়েন্ট সূচক বাড়ার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া দর সংশোধনের অবসান হয়েছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়। তবে রোববারের লেনদেন আবার বিভ্রান্তিতে ফেলে দিল।
দাম বৃদ্ধি ও কমার সীমা না থাকার দিন সবচেয়ে বেশি ২৩ শতাংশ দর হারিয়েছে মুনাফায় ফিরেও লভ্যাংশ না দেয়া আরামিট সিমেন্ট। ১২ ও ১৫ শতাংশ দর হারিয়েছে যথাক্রমে ২ ও ১ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়া প্যাসিফিক ডেনিম ও ন্যাশনাল ফিডমিল।
১১ শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে লভ্যাংশ না দেয়া জাহিন টেক্স, প্রায় ১১ শতাংশ দর হারিয়েছে প্রত্যাশার চেয়ে কম লভ্যাংশ দেয়া জিবিবি পাওয়ার। আর ১০ শতাংশের বেশি দর হারিছে মুনাফায় থেকেও লভ্যাংশ না দেয়া মুন্নু ফেব্রিক্স।
আরো ১২টি কোম্পানি ৫ শতাংশের বেশি, আরও ৮টি কোম্পানি ৬ শতাংশের বেশি, ৫টি কোম্পানি ৭ শতাংশের বেশি, ৬টি কোম্পানি ৮ শতাংশের বেশি এবং একটি কোম্পানি ৯ শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে। এর সিংহভাগই হয় লভ্যাংশ দেয়নি, নয় দিলেও এসেছে ন্যূনতম লভ্যাংশের ঘোষণা।
অন্যদিকে লোকসানে থেকেও লভ্যাংশ ঘোষণা করা দুটি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। এর মধ্যে শেয়ারপ্রতি ৫০ পয়সা লভ্যাংশের ঘোষণা দিয়ে সাফকো স্পিনিং মিলসের দর বেড়েছে ২০.৭৯ শমাংশ।
লোকসান কাটিয়ে মুনাফায় ফিরে শেয়ারপ্রতি ৫০ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করা জেমিনি সি ফুডের দর বেড়েছে ১২.৫২ শতাংশ বা ২২ টাকা ৫০ পয়সা।
লোকসানে থেকেও ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার ৬৭ শতাংশ দাম বাড়া হামিদ ফেব্রিক্সের দর আরও বেড়েছে ৯.৮০ শতাংশ।
শেয়ারপ্রতি ৫০ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করা দেশ গার্মেন্টসের দরও বেড়েছে ৭.৩৫ শতাংশ। স্বল্প মূলধনি এই কোম্পানিটি এবার লভ্যাংশ দেবে না বলে গুঞ্জন ছিল।
অবশ্য বরাবরের মতো লভ্যাংশ না দেয়া দুলামিয়া কটন এবারও একই সিদ্ধান্ত নেয়ার পরো শেয়ার দর ৯.৯৩ শতাংশ, মেঘনা পেটের শেয়ার দর ৮.৪১ শতাংশ, অলটেক্সের শেয়ার দর ৫.৭৫ শতাংশ বেড়েছে।
সূচক পতনে প্রধান ভূমিকায় ছিল গত মঙ্গলবার শেয়ারপ্রতি সাড়ে ১২ টাকা অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ ঘোষণার পর থেকে পতনের মধ্যে থাকা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, প্রথম প্রান্তিকে আয় কমে যাওয়া ওয়ালটন ইন্ডাস্ট্রিজ, শেয়ারপ্রতি ১৭ টাকা নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা ইউনাইটেড পাওয়ার, অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির পর টানা পতনমুখী লাফার্জ হোলসিম, অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি পাওয়া ফরচুর সুজ, অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির পর পতনমুখী পাওয়ার গ্রিড, ভালো আয়ের পরও কাঙ্ক্ষিত লভ্যাংশ না দেয়া বিএসআরএম লিমিটেড, প্রত্যাশার চেয়ে কম লভ্যাংশ দেয়া কেপিসিএল, অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির পর কমতে থাকা ডেল্টা লাইফ এবং ভালো আয়ের পরেও প্রত্যাশিত লভ্যাংশ না দেয়া কনফিডেন্স সিমেন্ট।
এই ১০টি কোম্পানির কারণেই সূচক থেকে হারিয়ে গেছে ৪৫.৩৯ পয়েন্ট।
তাও গ্রামীণফোন, আয় বাড়াতে পারা রবি, রেকিট বেনকিনজার, স্কয়ার ফার্মা, ইউনিলিভার, আমান ফিড, কোহিনূর কেমিক্যাল, জিপিএইচ ইস্পাত, একমি ল্যাবরেটরিজ ও বেক্সিমকো ফার্মার দর বৃদ্ধির কারণে সূচকের আরো বড় পতন ঠেকানো গেছে।
এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ২৪.৫৬ পয়েন্ট।
সূত্র: আমাদের সময়.কম