যশোরের বেনাপোল বন্দরের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল কালিতলা পার্কিংয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে ৫ হাজার পণ্যবোঝাই ট্রাক। ফলে দু দেশের আমদানি রফতানি বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
ইতিমধ্যে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধস নামতে শুরু করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মো. আজিজুর রহমান।
জানা গেছে, বেনাপোল বন্দর দিয়ে দুই দেশের পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে এ ধরনের জটিলতা তৈরি করে ট্রাক থেকে প্রতিদিন আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকার চাঁদা। আর চাঁদার পুরো টাকাটাই পরিশোধ করতে হয় বাংলাদেশি আমদানিকারকদের। ফলে বাংলাদেশে একটি আমদানি পণ্যবোঝাই ট্রাক প্রবেশ করতে সময় লাগছে ৩০ থেকে ৩৫ দিন। আর চাঁদা আদায়ের জন্য সেখানে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ট্রাক থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায় ও পণ্য প্রবেশে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বড়বড় আমদানিকারকরা বেনাপোল বন্দর ছেড়ে চলে গেছে অন্যত্র।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মো. আজিজুর রহমান ভারতীয় কাস্টমস, বন্দর ও সেখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একাধিকবার বিষয়টি সমাধানের জন্য বৈঠক করলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।
বেনাপোল বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিবছর ভারতের সঙ্গে ৩০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য সম্পন্ন হয়ে তাকে এ বন্দর দিয়ে। যদিও চলতি অর্থ বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বেনাপোল কাস্টমস হাউসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ৬ হাজার কোটি টাকা।
বছরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে বেনাপোল কাস্টমস হাউস। ইতোপূর্বে দেশের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৭-৮শ’ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো ভারতে থেকে। বর্তমানে তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২-৩শ’ ট্রাকে। ওপারে বনগাঁও পৌরসভা কালিতলা পার্কিংয়ে আমদানি পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো জোর করে প্রবেশ করাচ্ছে। প্রতিটি ট্রাক থেকে ডেমারেজ বাবদ ২ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে প্রতিদিন। বর্তমানে একটি ট্রাক বাংলাদেশে আমদানি হতে ৩০ থেকে ৩৫ দিন করে সময় লাগছে।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্র জানান, দেশের সিংহভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠান ও গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজের কাঁচামালসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য আমদানি হয় এই বন্দর দিয়ে। ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে।
ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান জানান, বেনাপোল বন্দরের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বনগাঁও পৌরসভার নেতৃত্বে তার লোকজন প্রতিটি পণ্যবোঝাই ট্রাক থেকে প্রতিদিন ২ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। পণ্যবোঝাই একটি ট্রাক দেশে প্রবেশ করতে ৩০ থেকে ৩৫ দিন সময় লাগছে। ওপারে আটকে থাকলে তাকে ৬০ হাজার রুপি পরিশোধ করতে হচ্ছে। চাঁদার পুরো টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। আমদানিকারকরা মোটা অংকের আর্থিক লোকসানে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে।
ভারতের পেট্রাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস স্টাফ ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শ্রী কার্তিক চন্দ্র জানান, কালিতলা পার্কিংয়ে দীর্ঘদিন পণ্যবোঝাই ট্রাক আটকে থাকায় মোটা অংকের ডেমারেজ গুনতে হচ্ছে ওপারের আমদানিকারকদের এটা সত্য। সিরিয়ালের নামে এসব ট্রাক কালিতলা পার্কিংয়ে ঢোকানো হচ্ছে বনগাঁও পৌরসভার তত্ত্বাবধানে। আমরা চাই পেট্রাপোল বন্দরের তত্ত্বাবধানে সিরিয়াল কার্যক্রম সম্পন্ন হলে চাঁদাবাজি বন্ধ হবে এবং দ্রুত পণ্য রফতানি করা সম্ভব হবে।
বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, দেশের ৭৫ ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠান ও গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজের কাঁচামাল পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য আমদানি হয় এ বন্দর দিয়ে। পণ্য আমদানিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেক আমদানিকারক এ বন্দর ছেড়ে চলে গেছে অন্যত্র।
সূত্র: যুগান্তর