ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে সহিংসতা চলছেই। প্রতিদিনই ঘটছে হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা। গতকালও ধামরাইয়ে শিহান নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে শুধু ইউপি নির্বাচন নিয়েই ২৩ জনের প্রাণহানি হলো। আর জানুয়ারি থেকে ইউপি, পৌরসভা, মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলার ভোটে আওয়ামী লীগের ৩৯ নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। প্রচার-প্রচারণা, নির্বাচনী এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করেই এসব প্রাণহানি হয়েছে। এতে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে রয়েছে আতঙ্ক।
জানা যায়, দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৬টি ইউনিয়নে ১১ নভেম্বর এবং তৃতীয় ধাপের ১ হাজার ৭টি ইউনিয়নে ২৮ নভেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে প্রথম ধাপে ২১ জুন ২০৪টি ইউপি ও ২০ সেপ্টেম্বর ১৬০টি ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া সপ্তম ও অষ্টম ধাপের পৌর নির্বাচনও হবে ১১ ও ২৮ নভেম্বর। জেলায় জেলায় নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে সহিংসতা। অধিকাংশ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের সহিংসতা ঘটছে।
ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, সোমবার ভোর রাতে যাদবপুর ইউনিয়নের আমছিমোর গ্রামের আবদুল মজিদের ছেলে নৌকার সক্রিয় কর্মী শিহান মারা গেছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আলমগীর হোসেন নামে নৌকার আরেক কর্মী। রবিবার রাতে ওই গ্রামের বংশী নদীর পাড়ে তাদের ওপর হামলা করা হয় বলে জানা গেছে। জানা যায়, ধামরাইয়ের যাদবপুর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী আবদুল মজিদ ও বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজুর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা ও পোস্টার ছেঁড়া নিয়ে কঠোর বিরোধ চলে আসছিল। আমছিমোর গ্রামে নৌকার কর্মী শিহান ও আলমগীর হোসেন রবিবার রাতে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে যায়। এ সময় কে বা কারা তাদের ওপর হামলা ও ব্যাপক মারধর করে। এতে মারাত্মক জখম হন তারা। পরে তাদের আমছিমোর সেসিপ মডেল হাইস্কুলের বংশী নদীর পাশে শুকুর মিয়ার পরিত্যক্ত বাড়িতে ফেলে রাখা হয়। খবর পেয়ে স্থানীয়রা গুরুতর অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেন। সোমবার ভোর রাতে শিহান মারা যান আর আলমগীর হোসেন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন বলে তার স্বজনরা জানান। এদিকে, সুয়াপুর ইউনিয়নে কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর ও ৩৫ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে।
বগুড়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় মাঝিহট্ট ইউনিয়নে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী এস্কেন্দার আলী সাহানার মোটরসাইকেল বহরে হামলা চালিয়ে মারপিট ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান প্রার্থী সাহানারসহ ১০ জন আহত ও ৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। হামলার এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুল গফুর মন্ডলকে দায়ী করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে মাঝিহট্ট ইউনিয়নের বাকিরতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী এস্কেন্দার আলী সাহানা (৬৫), তার সমর্থক আলী আজম (৪৫), রতন (৪২), রব্বানী (২৫), আলীম (৩০), হাকিম (৩২), আমিনুল ইসলাম (৪২), আনোয়ার, বিপ্লব, হাবীবসহ ১০ জন। আহতরা শিবগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রার্থী হারুন অর রশিদ লিটনের নির্বাচনী পথসভায় হামলা ও মোটরসাইকেল অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। রবিবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার ভজনপুর বাজারে তেঁতুলিয়া-পঞ্চগড় মহাসড়কে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এদিকে ওই ইউয়িনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার প্রার্থী শামসুল হক সরকারের অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। রাতের অন্ধকারে তার পোস্টারও ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। সহিংসতার কারণে প্রায় ২ ঘণ্টা মহাসড়কের দুই ধারে আটকা পড়ে শতাধিক যানবাহন। এরপর থেকে পুরো ভজনপুর ইউনিয়নের পরিবেশ থমথমে বিরাজ করছে।
জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মাহমুদপুর ইউপি নির্বাচনে নির্বাচনী প্রচারণাকালে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মীদের ৭টি মোটরসাইকেলসহ নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করেছে। রবিবার রাতে একই ইউনিয়নের মোহব্বতপুর সাখিদার পাড়া, বেলতা বানদিঘী, বারুইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও তার কর্মীদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুর রশিদ মন্ডল বকুল ও তার কর্মীরা। অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মশিউর রহমান শামীম জানান, জনপ্রিয়তা দেখে ভয় পেয়ে আমার নামে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন বিদ্রোহী প্রার্থী।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পটুয়াখালীর বাউফলের নওমালা ইউনিয়নের নগরের হাটে সোমবার দুপুরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ফের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. কামাল হোসেন বিশ্বাস এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শাহাজাদা হাওলাদারের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। ইটপাটকেলের আঘাতে উভয় পক্ষের অন্তত ৫ আহত হয়েছে। এ ঘটনায় এক পক্ষ অপর পক্ষকে দায়ী করছেন। অন্যদিকে, গলাচিপার পানপট্টি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রামর্দ্দন এলাকায় দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নারীসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছে ৯ জন।
ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান ওরফে রাজা (৬০)-কে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে। আকরামুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তুজারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তার ওপর এ হামলা চালিয়েছে।
কুমিল্লার তিতাসে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ আহত ১২ : কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লার তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আলী আশরাফ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি ঘটে গতকাল গোপালপুর গ্রামে। এ ঘটনায় উভয় গ্রুপের গুলিবিদ্ধসহ ১২ জন আহত হয়েছেন। কয়েকটি বসতঘরসহ নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়েছে। তিতাস থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পুকুরপাড় থেকে দুটি দেশীয় পাইপগান উদ্ধার করেছে। আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তাদের মধ্যে ৯ জনকে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। আহতরা হলেন অলিউল্লাহ (২৮), স্বপন মিয়া (২৬), রনি মিয়া (২৫), সোহাগ হোসেন (২৩), আরমান (১৬) ও মনু মিয়া (৩৫), আলম (২৭), মাসুদ (২২), ইয়ার খান (৪৫), রহিম (২০)। তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মৃত্তিকা অথৈ বলেন, মারামারির ঘটনায় ১২ জন আহত হয়ে চিকিৎসার জন্য আসেন। এদের মধ্যে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের ঢাকায় প্রেরণ করেছি।
সূত্র: বিডি প্রতিদিন