বরগুনায় শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পর বরগুনা সরকারি কলেজ গেটে আবার সেই একই স্থানের আরও একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
অধ্যক্ষের সঙ্গে এক শিক্ষার্থীর বেয়াদবির জেরে তাকে শাসন করা হয়। শিক্ষার্থীকে শাসন করার ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
মারধরের একটি ভিডিও শনিবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে আপলোড করে কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত একজন শিক্ষার্থী।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, প্রথমে সরকারি কলেজের সামনে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান কয়েকজন শিক্ষক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এ সময় অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘কালকে ইউনিফর্ম পরে আসবা’।
এ সময় এক শিক্ষার্থী কিছু বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে দিয়ে অধ্যক্ষ আবার বলেন, ‘কোনো কথা নেই, ইউনিফর্ম বলছি আমি ইউনিফর্মই। সব চলে যাও, বাসায় যাও। আবার দাঁড়িয়ে আছ কেন? সোজা বাসায় যাবা’।
এ সময় এক শিক্ষার্থী বলেন, একদিনের মধ্যে সব জোগাড় করে ক্যামনে। তখন অধ্যক্ষ বলেন, ছয় মাস আগে আমি বলছি, যাও বাসায় যাও। শিক্ষার্থীরা বাসায় যাওয়া শুরু করলে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘স্যার এটা বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যায়’।
এ কথা শুনেই অধ্যক্ষ ওই শিক্ষার্থীকে নিয়ে শাসন করেন।
ভিডিও পোস্ট করা বরগুনা সরকারি কলেজের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ওই শিক্ষার্থী জানায়, বিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রকে মারধর করার সময় এক শিক্ষার্থী ভিডিও ধারণ করে। আর অধ্যক্ষ ওই ছাত্রকে তিনি তার কক্ষে নিয়ে গিয়ে কলেজে বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ আসার পর সহপাঠীদের অনুরোধে ওই ছাত্রকে ছেড়ে দেয় অধ্যক্ষ।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, মারধরের শিকার ওই শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের দাবি, সবারই কলেজ নির্ধারিত কালারের শার্ট পরা ছিল। কিন্তু কয়েকজন শিক্ষার্থীর ইউনিফর্মের নির্ধারিত রঙের প্যান্ট ছিল না। মূলত প্রিন্সিপাল স্যার ইসলামিয়া বস্ত্রালয়কে ইউনিফর্ম তৈরির জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন। ওখানে দাম বেশি। তাই অনেকেই বিভিন্ন দোকান থেকে কলেজ নির্ধারিত রঙের ইউনিফর্ম তৈরি করেছে। এতেই ক্ষেপেছেন তিনি। কারণ, ওই দোকান থেকে আমরা ইউনিফর্ম তৈরি করলে তিনি কমিশন পেতেন।
অধ্যক্ষের শাসনের তীব্র আপত্তি জানিয়েছে আলোচিত শিক্ষার্থী আতাউল্লাহ বলেন, সহপাঠী ও বাইরের লোকজনের সামনে প্রিন্সিপাল স্যার আমার গায়ে হাত তুলেছেন। এমনকি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দিয়েও লাঞ্ছিত করিয়েছেন। আমি তার আচরণে ব্যথিত।
এ ব্যাপারে বরগুনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মতিউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, কলেজের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও ডিসিপ্লিন বজায় রাখার জন্য আমরা কলেজ গেটে দাঁড়াই। বহিরাগতদের শনাক্ত করতে শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম ও আইডি কার্ডের বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নিতে গেলে কিছু শিক্ষার্থী উচ্ছৃঙ্খল হয়ে মিছিল দিলে তাদের বাধা দিয়েছি। আমরা শিক্ষক। আমাদের একটি নৈতিকবোধ আছে। আমরা কী কোন শিক্ষার্থীকে শাসনও করতে পারব না। কোন শিক্ষার্থী আমাদের শত্রু নয়। ওরা আমাদের সন্তানদের মত।
পুলিশ ডাকা প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ বলেন, ওই শিক্ষার্থীকে ইউনিফর্ম পরিপূর্ণভাবে পড়ে কলেজে আসতে বলার জন্য রুমে ডাকা হয়। পরে তাকে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট দোকান থেকে শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম তৈরি ও ব্যাগ জুতা কেনা বাধ্যতামূলক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এমন কোনও নির্দেশ আমি দেইনি।
সূত্র: আমাদের সময়.কম