অত্যাবশ্যকীয় (অপরিহার্য) পণ্যের তালিকা থেকে তামাক (বিড়ি-সিগারেট) বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার শূন্যের কোঠায় আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। জনসাধারণের স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাস ও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে সিগারেট বাদ দিতে ‘দ্য কন্ট্রোল অব এসেনশিয়াল কমোডিটিজি (এমেনডেন্ট) বিল, ২০২১ আনা হয়েছে। বিষয়টি জাতীয় সংসদে বিল আকারে আনতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর তা স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা ও মতামত নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে গত ২ নভেম্বর বৈঠক করে একটি উপ-কমিটি গঠন করেছে বলে জানা গেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তাই মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, অপরিহার্য পণ্যের তালিকা থেকে বিড়ি-সিগারেট বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি কার্যকর করতে পারলে দেশ ও জাতির বড় উপকার হতো। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল হতো। কিন্তু অপরিহার্য পণ্যের তালিকা থেকে বিড়ি-সিগারেট বাদ যাবে কিনা তাতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ ইতিমধ্যে বিড়ি-সিগারেট কোম্পানির প্রতিনিধিরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তাব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে তদবির শুরু করেছেন। যারা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নানা ধরনের দীর্ঘমেয়াদি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন বলে খবর চাউর হয়েছে। ফলে শেষ পর্যন্ত অত্যাবশ্যকীয় (অপরিহার্য) পণ্যের তালিকায় বিড়ি-সিগারেট বিদ্যমান থাকলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে মন্তব্য করেন তারা।
জানা গেছে, জাতীয় সংসদে ‘দ্য কন্ট্রোল অব এসেনশিয়াল কমোডিটিজি (এমেনডেন্ট) বিল, ২০২১ তামাকজাত পণ্যের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে বলা হয়- জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় সিগারেট অতি ক্ষতিকর পণ্য। ধূমপানে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। ধূমপানের জন্য ব্যবহৃত সিগারেটে মারাত্মক রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। নিকোটিন এদের একটি। গবেষণায় দেখা গেছে, দুটি সিগারেটে যে পরিমাণ নিকোটিন রয়েছে তা কোনো সুস্থ মানুষের দেহে পুশ করা হলে তার মৃত্যু হতে পারে। ধূমপানের কারণে ফুসফুসে ক্যান্সার, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে।
যা মানুষকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। বাংলাদেশে বিদ্যমান আইনে প্রকাশ্যে ধূমপানের জন্য জরিমানার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া সিগারেট-বিড়িসহ তামাক জাতীয় দ্রব্যের মোড়কে ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ কিংবা ‘ধূমপান হৃদরোগের কারণ’ লেখা বাধ্যতামূলক।
তামাককে করোনাভাইরাস সংক্রমণে সহায়ক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাককে করোনাভাইরাস সংক্রমণে সহায়ক চিহ্নিত করে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে বলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের করোনাভাইরাস সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। গ্লোবাল অ্যাভাট টোব্যাকো সার্ভে-২০১৭ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে জনগোষ্ঠীর ৩ কোটি ৭৮ লাখ (৩৫.৩ শতাংশ) মানুষ তামাক সেবন করে এবং তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। অপর একটি প্রতিষ্ঠানের জরিপ থেকে জানা যায়- তামাক খাত থেকে রাজস্ব আয়ের চেয়ে তামাকজনিত রোগব্যাধির চিকিৎসা অনেক বেশি।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) স্বাক্ষর ও অনুসমর্থন করেছে বাংলাদেশ। এর আলোকে ২০১৩ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের সংশোধনী পাস ও ২০১৫ সালে বিধিমালা জারি করা হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি অর্জনকে গুরুত্ব দিয়ে সপ্তম-পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা তামাক নিয়ন্ত্রণকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন আয়োজিত সাউথ এশিয়ান স্পিকার্স সামিট-২০১৬এর সমাপনী অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার শূন্যের কোঠায় আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। জনসাধারণের স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাস ও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি কমাতে এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় এগিয়ে নিতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে সিগারেট বাদ দিতে ‘দ্য কন্ট্রোল অব এসেনশিয়াল কমোডিটিজি (এমেনডেন্ট) বিল, ২০২১’ আনা হয়েছে।
সূত্র: বিডি প্রতিদিন