স্বপ্নপূরণের পথে বহুল আলোচিত পদ্মা বহুমুখী সেতু। দৃশ্যমান হয়ে এখন ব্যবহার উপযোগীর পথে প্রায় ৮৯ শতাংশ কাজ শেষ। তবে ফাস্ট ট্রাক বা চরম অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পের তালিকায় থাকা অন্যান্য সাত প্রকল্পের মধ্যে চারটির কাজের গতি ঢিমেতালে। এক মাসে সবগুলো প্রকল্পের গড় অগ্রগতি মাত্র দেড় শতাংশের মতো। পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর অগ্রগতি পদ্মার মতোই এগিয়ে আছে। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪২ হাজার ৬৮৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা বলে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। পরিকল্পনা কমিশন ও বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো বলছে, প্রকল্পগুলোর বেশির ভাগই এখনো মাঠপর্যায়ের কাজ। মহামারী করোনার কারণে মাঠপর্যায়ের কাজগুলোর অগ্রগতি বাধাপ্রাপ্ত হয়, সেগুলো এখানো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। সরকারের উচিত হবে ফাস্ট ট্র্যাকের এসব বড় ব্যয়ের প্রকল্পগুলো যথাসময়ে শেষ করার জন্য বিশেষ নজর দেয়া।
গুরুত্বপূর্ণ এই বিশেষ প্রকল্পগুলোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ওই সাত প্রকল্পে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে গত অক্টোবর পর্যন্ত এক লাখ ৩৪ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর থেকে এক মাসে খরচ হয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। এখানে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ৪৩ হাজার ৯৭৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। দেশের সর্ববৃহৎ সেতু পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের বাস্তব বা ভৌত অগ্রগতি ৮৮.৭৫ শতাংশ। যেখানে অর্থ ব্যয় হয়েছে ৮৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ অর্থাৎ ২৬ হাজার ২৪৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধিত এই প্রকল্পটি আগামী ২০২২ সালের জুনে সমাপ্ত করার কথা। মোট ৩০ হাজার ১৯০ কোটি টাকার এই সেতু প্রকল্পের কাজ ২০১৪ সালের নভেম্বরে শুরু করা হয়। তবে প্রকল্পের মেয়াদ ২০০১ সালের জানুয়ারিতেই শুরু হয়। চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ পাঁচ হাজার কোটি টাকা। দ্বিতীয় সংশোধিত মেয়াদ অনুযায়ী এখন আগামী বছরের জুনে এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মূল সেতু নির্মাণ ও নদী শাসনের জন্য বাকি কাজ শেষ করার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।
অন্য দিকে অক্টোবর পর্যন্ত রাশিয়া থেকে নেয়া ঋণে সবচেয়ে ব্যয়বহুল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজের বাস্তব অগ্রগতি ৪০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২০১৬ সালের জুলাইতে শুরু হওয়া প্রকল্পটির পাঁচ বছর তিন মাসে ব্যয় হয়েছে ৩৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ বা ৪৩ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এখানে রাশিয়ার ঋণ হলো ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। চলতি এডিপিতে প্রকল্পটির জন্য ১৫ হাজার ৬৯১ কোটি ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে। আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত করার কথা।
তালিকায় থাকা মহেশখালীর-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম। এখানে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্পসহ মোট ১২টি প্রকল্প। বিদ্যুৎ প্রকল্পে মোট খরচ ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হলো ৬০ দশমিক ৮০ শতাংশ। যার বিপরীতে অর্থ ব্যয় হয়েছে ৫১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ১৮ হাজার ৫৬৪ কোটি ৩০ লাখ টাকার মতো। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ রয়েছে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। আগামী ২০২৩ সালের প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা।
স্বপ্নের পদ্মা বহুমুখী সেতুতে রেলসংযোগের জন্য নেয়া প্রকল্পটি পাঁচ বছর ১০ মাসে কাজ হয়েছে মাত্র ৪৬ শতাংশ। বাস্তব কাজের অগ্রগতিতে খরচ হয়েছে ৫০ দশমিক ৭৩ শতাংশ বা ১৯ হাজার ৯১০ কোটি ৯৭ হাজার টাকা। ২১ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক ঋণসহ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অনুমোদিত খরচ হলো ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত করে রেল চলাচল শুরু করার কথা।
আর দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত গুনধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন রেলের ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটির প্রায় এক যুগে অগ্রগতি ৬৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত ৩৩ দশমিক ১৬ শতাংশ অর্থ অর্থাৎ পাঁচ হাজার ৯৮০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নে। প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিদেশী ঋণ ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০১০ সালের জুনে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে এখন আগামী ২০২২ সালের জুনে সমাপ্ত করার কথা।
যোগাযোগ খাতের আধুনিক ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের বা মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একই অগ্রগতি। তবে অর্থ ব্যয় হয়েছে ১৮ হাজার ৫৬৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। যা মোট বরাদ্দের ৭৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১২ সালের জুলাইতে অনুমোদন নিয়ে শুরু করে। প্রকল্পের কাজ অনেকটা দৃশ্যমান।
সূত্র: নয়াদিগন্ত