অপরিণত শিশুর যত্ন সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা’র সিনিয়র কনসালটেন্ট পেডিয়াট্রিক্স ও নিওন্যাটোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. নুসরাত ফারুক।
নিউটন, আইনস্টাইন সেরা দুইজন বিজ্ঞানী হিসেবে জগৎবিখ্যাত। তবে দুইজনের মধ্যে আরো একটি বিশেষ মিল আছে যার ব্যাপারে অনেকেই হয়তো অজ্ঞ, আর তা হলো দুইজনই অপরিণত নবজাতক হিসেবে জন্মেছিলেন। যারা জানতেন না তারা নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন। হওয়ারই কথা, কারণ অপরিণত শিশুদের অবহেলিত হওয়ার গল্প শুনে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু এখানে তো বিশ্বের অন্যতম সেরা দুই পণ্ডিতব্যাক্তি জন্মেছিলেন অপরিণত অবস্থায়! চলুন একটু বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
জন্মের সময় আইনস্টাইনের মাথা স্বাভাবিকের তুলনায় বড় ছিল। এই নিয়ে তার মা-বাবার দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না। অন্যদিকে, নিউটন বাঁচবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল চিকিৎসকদের মনে। কিন্তু দুইজন শুধু বাঁচেনইনি, নিজেদের আবিষ্কার এবং জ্ঞানের আলো দিয়ে গোটা বিশ্বকে আলোকিত করেছেন। অবাক করা বিষয় হলো সময়ের আগে জন্ম নেয়া শিশুর শারীরিক-মানসিক বিকাশ প্রশ্নের মুখে থাকেলও, সঠিক যত্ন ও সচেতনতার মাধ্যমে অন্য দশটি শিশুর মতো তারাও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে সক্ষম।
বিশ্বের সকল অপরিণত শিশু ও তাদের অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী ১৭ নভেম্বর পালিত হয় বিশ্ব অপরিণত শিশু দিবস। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে এবছরের অপরিণত শিশু দিবসের স্লোগান- ‘অবিচ্ছেদ্য শিশু-অভিভাবক’। ৩৭ সপ্তাহের কম বয়সী নবজাতকরা সাধারণত অপরিণত শিশু হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১০ লক্ষ নবজাতক অপরিনতভাবে জন্মানোর পর মৃত্যুবরণ করে। বিশ্বব্যাপী ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুহারের অন্যতম প্রধান কারণ অপরিণত জন্মগ্রহণ বা অগ্রিম জন্মগ্রহণের ফলে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা জনিত মৃত্যু। বিশ্বের অপরিণত জন্মগ্রহণে ভারত, চীন, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান এবং আমেরিকা শীর্ষে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, অপরিণত নবজাতক কয়েকটি কারণে ঝুঁকির সম্মুখীন হয়।
সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ও প্রয়োজনীয় পরিচর্যার অভাব, অভিভাবকদের মানসিক বিপর্যস্থতা, চিকিৎসার উচ্চমূল্য, অপ্রতুল ওষুধ ইত্যাদি কারণে উক্ত ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বিশ্বের উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এমন চিত্র প্রায়ই দেখা যায়। এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে এবছর অপরিণত নবজাতক ও অভিভাবকদের দৃঢ় বন্ধনের প্রয়োজনীয়তার উপর বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে।
এবারের মূল লক্ষ্য দুটি;
১) অপরিণত নবজাতকের শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জ ও অভিভাবকদের করণীয়। ২) অপরিণত শিশু ‘স্বাভাবিক’ না হওয়া পর্যন্ত পরিবারের সকলের করণীয়। অপরিণত শিশুদের শুধু শারীরিক নয়, মানসিক সংগ্রামও করতে হয়। তাদের সাথে সাথে পরিবারের সকলকেও জীবন যুদ্ধে সামিল হতে হয়। ভালোবাসার কমতি না থাকলেও অনেক সময় অভিভাবকরা ঠিক বুঝে পান না যে কি করবেন। বাড়ির পরিচর্যা, সামাজিক বিধি-নিষেধ, অতিরিক্ত ব্যয়, অবহেলা ইত্যাদি মিলিয়ে পাহাড়সম চ্যালেঞ্জের ফলে পরিবারটি জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।
ভাষাগত সীমাবদ্ধতা তো আছেই, তারওপর শারীরিক অক্ষমতা সব মিলিয়ে এই জীবন সংগ্রাম নিষ্পাপ শিশুদের জন্য বড়ই কঠিন হয়ে পড়ে। তবে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা, সহানুভূতি, আধুনিক পরিবেশগত ব্যবস্থা, উন্নত মানসিকতা ইত্যাদির মাধ্যমে অপরিণত নবজাতকরাও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে, এমনকি জয় করতে পারে বিশ্বকেও। তাই এবছর নবজাতক-অভিভাবক বন্ধনের দৃঢ়তার মাধ্যমে অপরিণত শিশুদের জটিলতা দূরীকরণের শপথ করা হচ্ছে।
সূত্র: নয়াদিগন্ত