দস্যুমুক্ত নিরাপদ সুন্দরবনে এখন বাড়ছে পর্যটকের আনাগোনা। কয়েক বছরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় প্রায় দস্যুমুক্ত হয়েছে পুরো সুন্দরবন এলাকা। একই সঙ্গে বন রক্ষাকারী বাহিনীর সার্বক্ষণিক নজরদারিতে কোনো ধরনের দস্যুবৃত্তি এখন নেই বললেই চলে। একসময় একাধিক বাহিনীর দোর্দ- প্রতাপে পুরো সুন্দরবন এলাকা ছিল দস্যুদের অভয়ারণ্য। সেই পরিস্থিতি পাল্টে এখন শান্তিময় এলাকায় পরিণত হয়েছে সুন্দরবন। আর এই দস্যুমুক্ত সুন্দরবনে বাড়ছে পর্যটকদের আকর্ষণ। সেই আকর্ষণে ছুটে আসছে হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক।
একসময়ের পরিচিত হিরণ পয়েন্ট, দুবলার চরের পাশাপাশি এখন নতুন কিছু স্পট আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে পর্যটকদের কাছে। এর মধ্যে রয়েছে হারবাড়িয়া, ডিমচর, কটকা, কচিখালী, কলাগাছিয়া, শেখেরটেক, আলীবান্দা, কালাবগি ও কৈলাশগঞ্জ। কয়েকটি স্পট দূরবর্তী হওয়ায় একসময় পর্যটনের জন্য অনিরাপদ ছিল। এখন পুরোপুরি দস্যুমুক্ত হওয়ায় প্রচুর পর্যটক যাচ্ছে এসব দূরের স্পটেও। সম্প্রতি সুন্দরবন ঘুরে দেখা গেছে, মূলত নদী বিধৌত সুন্দরবনের রয়েছে অসংখ্য চর। এসব চরে সবসময় ঘুরে বেড়ায় নানা ধরনের বন্যপ্রাণী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে হরিণ।
সুন্দরবন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, সুন্দরবনে প্রায় দেড় লাখ হরিণ রয়েছে। প্রতিটি স্পটে গেলেই অবাধে চড়ে বেড়াতে দেখা যায় এসব হরিণকে। তবে হরিণের প্রজননের জন্য রয়েছে সরকারের একটি প্রজনন কেন্দ্র। করমজলে গড়ে ওঠা এই প্রজনন কেন্দ্রে গেলে নিজ হাতে খাবার খাওয়ানোর সুযোগ রয়েছে পর্যটকদের। এই স্পটেই রয়েছে সুন্দরবনের নোনা জলের কুমির প্রজনন কেন্দ্র। রোমিও, জুলিয়েট নামে কুমির থেকে এখানে এখন শতাধিক বাচ্চা কুমির রয়েছে। একই সঙ্গে রয়েছে কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র। তবে কটকা স্পট বলে পরিচিত এলাকায় সবচেয়ে বেশি হরিণ চোখে পড়ে। পালে পালে হরিণ চড়ে বেড়াতে দেখা যায় এখানে। কটকাতে রয়েছে বাঘের আনাগোনা। স্থানীয়রা জানান, কটকার পাড়ে কয়েক দিন থাকলে নিজ চোখেই দেখা মেলে বাঘের। তীরে নামলে সবসময় বাঘের পায়ের চিহ্নের দেখা মেলে। সুন্দরবনের প্রায় শেষ প্রান্তে হারবাড়িয়া এলাকা। এই এলাকাটি ডিম্বাকৃতির বলে পরিচিত ডিমচর নামে। চারদিকে বৃহৎ নদীবেষ্টিত হওয়ায় সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখা যায় স্পষ্ট। ডিমচরেও রয়েছে হাজার হাজার হরিণ। রয়েছে নানা প্রজাতির পাখি। তীরে নামলেও শোনা যায় পাখির কলতান। অবাধে ঘুরে বেড়ানো হরিণ। হারবাড়িয়ার পর কচিখালীর চরে দেখা মেলে কুমিরের। বিভিন্ন স্পটেই নদীর চরে রোদ পোহাতে দেখা যায় নোনা জলের এসব কুমিরকে।
পর্যটন আকর্ষণে সরকার সম্প্রতি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে এসব পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের জন্য ওয়াচ টাওয়ার, ঝুলন্ত ব্রিজ, হাঁটার জন্য ফুট ট্রেইল, বসার জন্য গোলঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে চাইলেই যে কেউ পর্যটক হিসেবে সুন্দরবনে যাওয়ার অনুমতি নেই। এ জন্য পূর্বানুমতি নিয়েই যেতে হবে সুন্দরবনে। তবে নিজ উদ্যোগে বা একক উদ্যোগে কোনোভাবেই সুন্দরবনে বা এসব স্পটে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যেতে চাইলে অবশ্য যৌথভাবে যেতে হবে। এ জন্য অবশ্য রয়েছে বিভিন্ন ট্যুরিজম কোম্পানি। ঢাকা থেকে যেতে চাইলে ট্যুরিজম কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারাই আয়োজন করে দেয় সুন্দরবন ভ্রমণের। নিরাপদ ভ্রমণের জন্য সি পার্ল ক্রুজেস সম্প্রতি খুলনা থেকে কয়েকটি লাক্সারিয়াস জাহাজ নামিয়েছে। এসব জাহাজে তিন দিনের ভ্রমণে জনপ্রতি মাত্র সাড়ে ১০ হাজার টাকা খরচ পড়বে। জাহাজগুলোতে অভিজাত আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা যোগ করা হয়েছে। সুবিধা অনুযায়ী এসি, নন-এসি, সিঙ্গেল, ডাবল কক্ষ নিতে পারেন ভ্রমণপিপাসুরা। তিন দিন, চার দিন, ছয় দিন পর্যন্ত বিভিন্ন প্যাকেজে সুন্দরবনের মধ্যেই অসাধারণ সময় কাটাতে পারেন পর্যটকরা। সারা দিন সুন্দরবনের ছোট খালের মধ্যে গা ছমছম করা পরিবেশে ছোট নৌকায় করে ঘুরে ঘুরে দেখান তাদের ট্যুরস গাইডরা। সারা রাত ক্রুজের ছাদে বার বি কিউ আয়োজন থাকে। সমুদ্রের মাছ দিয়ে করা হয় এসব বার বি কিউ।
সূত্র: বি-ডি প্রতিদিন