অনলাইন ব্যবসায় বিনিয়োগ করলে ১৫ দিনে অথবা ৩০ দিনে টাকা দ্বিগুণ করে দেওয়া হবে। মাত্র ১ হাজার ৮৫০ টাকা জমা দিয়েই এ কোম্পানির সদস্য হওয়া যাবে।’ এমন লোভনীয় প্রচারণা চালিয়ে মাত্র দুই মাসে ৬ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে ৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে রাজধানীর একটি প্রতারক চক্র।
গতকাল দুপুরে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন এ বিষয়ে আরও জানান, অনলাইনভিত্তিক চারটি এমএলএম কোম্পানি খুলে প্রথমে সদস্য সংগ্রহ করা হতো। প্রতারক চক্রের সাতজনকে গতকাল আমিন বাজার থেকে গ্রেফতারের পর তারা এ তথ্য জানিয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আবুল হোসেন পুলক, মাহাদী হাসান মল্লিক, মিজানুর রহমান ওরফে ব্রাভো মিজান, মহিউদ্দিন জামিল, সাইফুল ইসলাম আকন্দ, কভেজ আলী সরকার ও শাহানুর আলম শাহীন। তাদের কাছ থেকে ৯টি মোবাইল ফোন, ২০টি সিম কার্ড, একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চেক বই ও এটিএম কার্ড, বিভিন্ন অবৈধ এমএলএম কোম্পানির বিজনেস প্ল্যানের কাগজপত্র এবং নগদ ৬২ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে।
অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, এই চক্রের হোতা আবুল হোসেন পুলক ও মাহাদী হাসান মল্লিক। তারা আগে ডেসটিনিতে কাজ করতেন। ডেসটিনি থেকে এমএলএম ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা নিয়ে অনলাইনে তারা এই প্রতারণা করে আসছিলেন। গ্রাহকের টাকা দিয়ে চক্রের সদস্যরা চড়তেন দামি গাড়িতে, পরতেন দামি পোশাক, চলাফেরা করতেন অভিজাত সব জায়গায়। এভাবে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে প্রতারণা করে আসছিল চক্রটি। সিআইডি বলছে, প্রতারিত গ্রাহকের অধিকাংশই নারী। চক্রটি তাদের এমএলএম সাইটে ১ হাজার ৮৫০ টাকা দিয়ে সদস্য হতে বলত। বলা হতো, এই টাকা ১৫ অথবা ৩০ দিনে দ্বিগুণ করে দেওয়া হবে। একজন ব্যক্তি একাধিক আইডি দিয়ে টাকা বিনিয়োগ করতে পারতেন। পরবর্তী ধাপে চক্রটি এই সদস্যদের নতুন সদস্য নিয়ে আসতে বলতেন। বলা হতো, প্রতিজন নতুন সদস্যের জন্য ৫০ টাকা করে পাবেন। আর যে সদস্য ১৫০ জন নতুন সদস্য নিয়ে আসতে পারবেন তিনি হবেন স্টার সদস্য। স্টার সদস্যকে আইফোন, গাড়ি ও বিদেশ ট্যুরের প্রলোভন দেখানো হতো। এসব প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে ভুক্তভোগীরা হাজার হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন।
প্রতারক চক্রটি সদস্যদের আকৃষ্ট করার জন্য বিলাসী জীবন যাপন করতেন। যারা বেশি সদস্য এনে দিতে পারত তাদের নিয়ে বড় বড় অনুষ্ঠান করা হতো, যাতে আরও সদস্য আনা যায়। হাতিয়ে নেওয়া অর্থ ও অনলাইন প্ল্যাটফরমগুলো বন্ধের বিষয়ে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, এসব অনলাইন প্ল্যাটফরম বন্ধ করার এখতিয়ার আমাদের নেই। তবে আমরা এ বিষয়ে সুপারিশ করব। তারা ভিকটিমদের কাছ থেকে টাকাগুলো বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নিয়েছে। প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া টাকার মধ্যে কিছু বিনিয়োগ করেছে, আবার কিছু টাকা বড় বড় অনুষ্ঠান আয়োজনে খরচ করেছে। আর কিছু টাকা ব্যাংকে রেখেছে। আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে এসব বিষয়ে আরও জানতে চাওয়া হবে।
সূত্র: বিডি প্রতিদিন