এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় রেকর্ড পাশ সত্ত্বেও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অন্তত ৫ লাখ আসন শূন্য থাকবে। পাশ করা শিক্ষার্থীর তুলনায় এ স্তরে কলেজ, মাদ্রাসা, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন বেশি আছে। মূলত এ কারণেই আসন খালি থাকবে। এরপরও ভর্তি সংকট তৈরির আশঙ্কা আছে। কেননা, দেশে নামকরা ও ভালোমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম। আর এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীরা বেশি ভিড় করে থাকে। ফলে চিহ্নিত কিছু প্রতিষ্ঠান ভর্তিচাপে পড়বে। বিপরীত দিকে অখ্যাত এবং নামসর্বস্ব কলেজ ও মাদ্রাসা যথারীতি শিক্ষার্থী সংকটে থাকবে।
এসএসসি পরীক্ষার ফলপ্রকাশের পর বৃহস্পতিবার রাতেই আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি থেকে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রমের রোডম্যাপ জারি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ৮ জানুয়ারি থেকে অনলাইনে আবেদন নেওয়া হবে। ২ মাস ধরে ভর্তি কার্যক্রম শেষে ২ মার্চ একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে। অন্যদিকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতেও ৮ জানুয়ারি থেকে আবেদন নেওয়ার চিন্তা চলছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে ভর্তি নীতিমালাসহ এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে একাদশ শ্রেণিতে লেখাপড়া হয় এমন কলেজ ও মাদ্রাসা আছে ৮৮৬৪টি। অন্যদিকে সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আছে সাড়ে ৫০০। কলেজ ও মাদ্রাসায় আসন আছে ২৪ লাখ ৪০ হাজার ২৪৯টি। আর পলিটেকনিকে আছে ১ লাখ ৬৯ হাজার। সবমিলে এ স্তরে আসনসংখ্যা ২৬ লাখ ৯ হাজার ২৪৯টি। বিপরীত দিকে এসএসসি, দাখিল এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালে মোট পাশ করেছে ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন। এর মধ্যে এসএসসিতে ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ২১১ জন, দাখিলে ২ লাখ ৭২ হাজার ৭২২ জন আর কারিগরি শাখা থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৩ জন পাশ করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে ৯ হাজার কলেজ, মাদ্রাসা ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থাকলেও শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে হাতেগোনা আড়াইশ প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে ২০০-এর মতো কলেজ ও মাদ্রাসা এবং ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। এছাড়া প্রায় ৫০০ বেসরকারি পলিটেকনিক থাকলেও ডজনখানেক প্রতিষ্ঠান আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রাখে। এসব প্রতিষ্ঠানে আসন আছে সর্বোচ্চ এক লাখ। কিন্তু এবার এসএসসির সর্বোচ্চ সাফল্য হিসাবে চিহ্নিত জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ শিক্ষার্থী। এছাড়া জিপিএ-৫ এর নিচে কিন্তু জিপিএ-৩.৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী আছে আরও ১০ লাখ ১ হাজার ৫১৩ জন। এসব শিক্ষার্থীকেও ভালোমানের প্রতিষ্ঠানের দিকে ছুটতে দেখা যায়। ফলে ভর্তি নিয়ে এক ধরনের তুমুল প্রতিযোগিতা অপেক্ষা করছে। আর এ থেকেই অনেকের মধ্যে টেনশন ভর করেছে। যে কারণে ফল হাতে পাওয়ার পরদিনই অনেককে খোঁজখবরের পাশাপাশি চেষ্টা-তদবিরও শুরু করতে দেখা গেছে।
এদিকে ফল প্রকাশের রাতেই ভর্তির আলোচনা সামনে এনেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। তারা ভর্তি নীতিমালা জারি করেছে। সে অনুযায়ী, ৮ জানুয়ারি অনলাইনে আবেদন শুরু হবে। টানা ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আবেদন নেওয়া হবে। পরে তিন ধাপে মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে। এবার শুধু অনলাইনে আবেদন নেওয়া হবে। এরআগে এসএমএসেও আবেদন নেওয়া হতো। এবার ভর্তির ওয়েবসাইট xiclassadmission.gov.bd তে প্রবেশ করতে হবে। সেখানে শিক্ষার্থীরা সর্বনিম্ন পাঁচটি ও সর্বোচ্চ ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচন করবে। ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যারা এসএসসি পাশ করেছে তারা আবেদন করতে পারবে। তবে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীরা ২২ বছর বয়সেও আবেদন করতে পারবে। আর যেসব শিক্ষার্থী এসএসসি ও দাখিলের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করবে তারা ১৫ জানুয়ারির মধ্যে আবেদন করলেও ফল পরিবর্তনকারীরা ২২ ও ২৩ জানুয়ারি আবেদন করতে পারবে। ২৪ জানুয়ারি পছন্দক্রম পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হবে। আর ২৯ জানুয়ারি প্রথম দফায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে।
এতে আরও বলা হয়, ৩০ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের সিলেকশন নিশ্চয়ন করতে হবে। সিলেকশন নিশ্চয়ন না করলে তাকে পুনরায় ফিসহ আবেদন করতে হবে। ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্যায়ের আবেদন নেওয়া হবে। পছন্দক্রম অনুযায়ী প্রথম মাইগ্রেশনের ফল এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে ১০ ফেব্রুয়ারি। ১১-১২ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের সিলেকশন নিশ্চয়ন করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে সিলেকশন নিশ্চয়ন না করলে আবেদন বাতিল হবে। ১৩ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় পর্যায়ের আবেদন নিয়ে পছন্দক্রম অনুযায়ী দ্বিতীয় মাইগ্রেশনের ফল এবং তৃতীয় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে ১৫ ফেব্রুয়ারি। ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের সিলেকশন নিশ্চয়ন করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে সিলেকশন নিশ্চয়ন না করলে আবেদন বাতিল হবে।
আবেদন ও নির্বাচন পর্ব শেষে ১৯ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হবে। এবার আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ টাকা। নীতিমালায় ঢাকা ও জেলা পর্যায়ে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি ফিসহ সব ব্যয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার ক্ষেত্রে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে ৫ হাজার টাকা, ঢাকা মহানগরের বাইরে ৩ হাজার, জেলা পর্যায়ে ২ হাজার আর উপজেলা ও মফস্বলে ১ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করা যাবে। নির্ধারিত ফির বেশি অর্থ আদায় করা যাবে না। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সেশনচার্জ ও ভর্তি ফি গ্রহণ করা যাবে। উন্নয়ন ফি আদায় করা যাবে না।
সূত্র: যুগান্তর