প্রতি ছয়জনে একজন ক্যান্সার রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিএসএমএমইউতে আসা ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই পূর্ণবয়স্ক। বাকি ২৫ শতাংশ রয়েছে শিশু। হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষার জন্য জমাকৃত নমুনার প্রায় ১৭ শতাংশ ক্যান্সার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের উদ্যোগে পরিচালিত এক গবেষণায় এই চিত্র পাওয়া গেছে। প্যাথলজিভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রিতে দেখা যায়, ডায়াগনোসিসের জন্য সংগৃহীত ২১ হাজার ১৭৫টি নমুনার মধ্যে ৩ হাজার ৫৮৯টি নমুনার (১৬দশমিক ৯ শতাংশের) ক্যান্সার চিহ্নিত হয়েছে। পুরুষদের (৪০ দশমিক ৫ শতাংশ) তুলনায় মহিলাদের (৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ) ক্যান্সারের আধিক্য রয়েছে।
আজ বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিল্টন হলে এক সেমিনারে এই গবেষণার এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের উদ্যোগে বছরব্যাপী প্যাথলজিভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি ও মাসব্যাপী হাসপাতাল ভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি নিয়ে এই গবেষণা চালানো হয়।
সেমিনারে গবেষণার ফলাফল নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান, সিনিয়র রিসার্চ অফিসার ডা. শেহরিন ইমদাদ রায়না। তাদের উত্থাপিত প্রবন্ধে সারা দেশে ক্যান্সারের সঠিক তথ্য পেতে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি চালু এবং ক্যান্সার রেজিস্ট্রির কারিগরী দিক উন্নত করতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ’র ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তাদের গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি ছয়জনে একজন ক্যান্সার রোগী চিহ্নিত হয়েছে। বিএসএমএমইউতে আসা ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই পূর্ণবয়স্ক। বাকি ২৫ শতাংশ রয়েছে শিশু। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে সমন্বিতভাবে ক্যান্সার রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। যাতে করে দেশে সঠিকভাবে ক্যান্সার রোগীদের সংখ্যা নির্ণয় করা যায়। ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ ও উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে কাজে লাগানো যায়।
গবেষণা দেখা যায়, প্যাথলজিভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রিতে ১লা জানুয়ারি ২০১৯ থেকে ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত বিএসএমএমইউ’র সার্জারি বহির্বিভাগে হিস্টোপ্যালজিক্যাল ডায়াগনোসিসের জন্য যারা নমুনা জমা দিয়েছে তাদের থেকে তথ্য নেয়া হয়। ডায়াগনোসিসের জন্য সংগৃহীত প্যাথলজিভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রিতে দেখা যায়, ডায়াগনোসিসের জন্য সংগৃহীত ২১ হাজার ১৭৫টি নমুনার মধ্যে ৩ হাজার ৫৮৯টি নমুনার (১৬ দশমিক ৯ শতাংশের) ক্যান্সার চিহ্নিত হয়েছে। পুরুষদের (৪০ দশমিক ৫ শতাংশ) তুলনায় মহিলাদের (৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ) ক্যান্সারের আধিক্য রয়েছে। পূর্ণ বয়স্ক পুরুষদের প্রধান ক্যান্সারসমূহ হল মূত্রথলি ১০ দশমিক ২ শতাংশ, প্রটেস্টে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ, মুখগহ্বরে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। মহিলাদের প্রধান ক্যান্সার হলো স্তন (২৩ দশমিক ৩ শতাংশ), জরায়ুমুখ (২১ দশমিক ৫ শতাংশ) এবং মুখগহ্বর (৮ দশমিক ৯ শতাংশ)। প্রজনননতন্ত্রের ক্যান্সারের পরিমাণ পুরুষের ১১ দশমিক ২ শতাংশ, মহিলাদের ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ। নির্ণয়বকৃত ক্যান্সারের মধ্যে স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা (৩১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং এডেনোকারসিনোমা (৩১ দশমিক ২ শতাংশ) হারই সর্বাধিক।
হাসপাতাল ভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি নিয়ে গবেষণার (১লা অক্টোবর ২০১৯ থেকে ৩১শে অক্টোবর ২০১৯ পর্যন্ত ক্লিনিক্যাল, রেডিওলজি ও হিস্টোলজি-এর মাধ্যমে নিশ্চিতকৃত যেসকল ক্যান্সার রোগী বিএসএমএমইউতে এসেছেন) ফলাফলে দেখা যায়, মোট শনাক্তকৃত ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৬৫৬ জন। তাদের মধ্যে পূর্ণবয়স্ক ১ হাজার ২৩৮ জন (৭৪ দশমিক ৮ শতাংশ) এবং শিশু ৪১৮ জন (২৫ দশমিক ২ শতাংশ)। এখানে পুরুষদের প্রধান ক্যান্সার হলো ফুসফুস (৯ দশমিক ৬ শতাংশ), লিউকেমিয়া (৯ দশমিক ৪ শতাংশ), লিম্ফোমা ৯ শতাংশ। মহিলাদের স্তন (২৮ দশমিক ১ শতাংশ), থাইরয়েড (১৬ দশমিক ১ শতাংশ), জরায়ুমুখ ১২ দশমিক ২ শতাংশ। শিশু ছেলেদের প্রধান ক্যান্সার হলো লিউকেমিয়া (৭১ দশমিক ৫ শাতংশ), লিম্ফোমা ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। শিশু মেয়েদের প্রধান ক্যান্সার হলো লিউকেমিয়া (৬৬ দশমিক ৫ শতাংশ), হাড় ১১ দশমিক ৬ শতাংশ।
সেমিনারে বক্তারা ক্যান্সার মোকাবিলায় ও করণীয় বাস্তবায়নে সঠিক নেতৃত্বদান, চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা, ক্যান্সার ভিত্তিক ডাটা সংগ্রহের কার্যক্রম জোরদার ও প্রাপ্ত ডাটাসমূহের বিস্তারিত বিশ্লেষণসহ গবেষণার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক অধ্যাপক সৈয়দ শরীফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং প্যাথলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ কামালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএসএমএমইউ’র প্রো-ভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এম মোস্তফা জামান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা, হেলথ ইনফরমেশন ইউনিটের প্রধান ডা. শাহ আলী আকবর আশরাফি।
সূত্রঃ মানবজমিন