পর্দার অন্তরাল থেকে ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) প্রধান নওয়াজ শরীফ। সম্প্রতি তাকে নিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন গুঞ্জন। নতুন আলোচনা। বলা হচ্ছে, তিনি বা তার দল ক্ষমতাসীন পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফের (পিটিআই) সঙ্গে গোপন চুক্তি করছে। রুদ্ধদ্বার এ নিয়ে আলোচনা চলছে। তার প্রেক্ষিতেই তিনি নাকি সহসাই দেশে ফিরতে পারেন, এ আলোচনা নিয়ে সম্প্রতি ডন পত্রিকা সম্পাদকীয়ও প্রকাশ করেছে।
একই পত্রিকা বলছে, এবার নওয়াজ শরীফ আলোচনায় এসেছেন অন্য কারণে। পিটিআইয়ের বৈদেশিক তহবিল বিষয়ে যে রিপোর্ট দিয়েছে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)- তাতে বেরিয়ে এসেছে অর্থচুরির তথ্য, সে বিষয়ে যেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ছাড় দেয়া না হয়। তার বিরুদ্ধে যেন আগ্রাসী ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
যতক্ষণ এ বিষয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না হবে ততক্ষণ পার্লামেন্টের উভয় কক্ষকে যেন মসৃণভাবে চালাতে দেয়া না হয়।
এ জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত রাখার জন্য লন্ডন থেকে তার দলের বর্তমান প্রধান ও নিজের ভাই শেহবাজ শরীফকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, মুল্যস্ফীতির প্রতিবাদে মার্চেই রাজধানী ইসলামাবাদমুখী বিরোধী জোট পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (পিডিএম) যে পরিকল্পিত লংমার্চ হওয়ার কথা রয়েছে সে জন্য যেন তিনি জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে আগে থেকেই সম্মেলন করেন।
বৃহস্পতিবার ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে তিনি এ বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় ও পাঞ্জাবের নেতাদের নির্দেশনা দেন। এ সময় মডেল টাউনে অবস্থান করে এতে যোগ দেন শেহবাজ শরীফ, নওয়াজ শরীফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ প্রমুখ। তাদেরকে নওয়াজ শরীফ বলেন, দলীয় বৈদেশিক তহবিলের মাধ্যমে যখন অর্থ চুরির বিষয়টি হাতেনাতে ধরা পড়েছে, তাই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে যেন কোনোভাবে ছাড় দেয়া না হয়। ইমরান খানকে উদ্দেশ্য করে নওয়াজ শরীফ বলেন, তার কথিত সততার ইমেজ পুরোপুরিভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। তার এ ইমেজ জাতির সামনে প্রকাশ করা উচিত।
ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, এমন সূত্র শুক্রবার ডন’কে বলেছেন, ইসিপি যে তদন্ত রিপোর্ট পেয়েছে পিটিআইয়ের বৈদেশিক তহবিলে, সেই ইস্যুর আইনগত সমাধান না হওয়া পর্যন্ত যেন, এর মৃত্যু না হয়। তিনি বলেন, জাতীয় পরিষদ, পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদ এবং সিনেটকে মসৃণভাবে চলতে দেবেন না। ইমরান খানের প্রকৃত চেহারা প্রকাশ করে দিতে আগ্রাসী বিক্ষোভ করুন।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট সাবেক ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে অযোগ্য ঘোষণা করে। এর ফলে তিনি পদত্যাগ করেন। তাকে পাঠানো হয় জেলে। সেখান থেকে ‘চিকিৎসা নিতে’ ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে তিনি অবস্থান করছেন লন্ডনে। সেখান থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে আসছেন। সর্বশেষ তিনি যে নির্দেশ দিয়েছেন সে বিষয়ে দলের ভিতরের একটি সূত্র বলেছেন, বিষয়টি আদালতে নেয়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। দল প্রথমেই দেখতে চাইছে ইসিপি কি ব্যবস্থা নেয়।
ওদিকে মার্চে পিডিএমের যে মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে ইসলামাবাদমুখী লংমার্চ হওয়ার কথা রয়েছে সে বিষয়ে দলীয় নেতৃত্বকে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। পিটিআই সরকারের বিরুদ্ধে আগামী ২৭ শে ফেব্রুয়ারি লংমার্চ করার ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি।
সূত্র: যুগান্তর