নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে মান-অভিমান ভুলে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে রেখে দলীয় মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বিজয়ী করতে একাট্টা হয়েছেন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী। কেন্দ্র থেকে স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ। ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে নৌকার ভোট প্রার্থনা করছেন তারা। আর প্রার্থী না হয়েও নারায়ণগঞ্জের সিটি ভোটে আলোচিত ‘চরিত্র’ শামীম ওসমান মাঠে নামার ঘোষণায় স্থানীয় নেতা-কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নৌকার পক্ষে। মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি দলীয় কাউন্সিলরদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত আওয়ামী লীগ নেতারা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি ভোটে নৌকার প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা করতে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানককে আহ্বায়ক ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমকে সদস্য সচিব করে ২৭টি ওয়ার্ডে কেন্দ্রীয় টিম গঠন করা হয়েছে। একইভাবে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ আলাদা টিম গঠন করে নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। নৌকার লিফলেট নিয়ে যাচ্ছেন অলি-গলি ও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় টিমের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে নারায়ণগঞ্জের জনগণ নৌকায় আস্থা রাখবে। নারায়ণগঞ্জের মাটি নৌকার ঘাঁটি। এ এলাকার মানুষ বারবার তা প্রমাণ করেছে। বছরের প্রথম ভোট নৌকায় হোক-নারায়ণগঞ্জের তরুণ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ এই স্লোগান ধরেছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, দলের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলীকে ৮ নম্বর ওয়ার্ড, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীকে ২৩-৩৪ নম্বর ওয়ার্ড, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুরকে ৩-৪ নম্বর ওয়ার্ড, শিক্ষা ও মানব সম্পদ শামসুন্নাহার চাপাকে ২০ নম্বর ওয়ার্ড, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানাকে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড, উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলামকে ৫ নম্বর ওয়ার্ড, কেন্দ্রীয় সদস্য রিয়াজুল কবির কাওছারকে ২৪-২৫ নম্বর ওয়ার্ড, পারভীন জামান কল্পনাকে ৭ নম্বর ওয়ার্ড, সানজিদা খানমকে ১ নম্বর ওয়ার্ডে, আনোয়ার হোসেনকে ১১-১২ নম্বর ওয়ার্ড, আনিসুর রহমানকে ১৩-১৪ নম্বর ওয়ার্ড, সাহাবুদ্দিন ফরাজীকে ১৭-১৮ নম্বর ওয়ার্ড, গোলাম রাব্বানী চিনু ২৬-২৭ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনী সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সদস্য সচিব মির্জা আজমের সঙ্গে মাঠে সমানতালে সবখানে কাজ করছেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন। সোমবার থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। মান অভিমান ভুলে গত সোমবার সংবাদ সম্মেলনে নৌকার পক্ষে থাকার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী টিমের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের দলীয় প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ব্যাপক জনপ্রিয় ব্যক্তি। আমাদের অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা ছিল, সেগুলো মিটে গেছে। সে কারণে এখন বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। নৌকার পক্ষে একাট্টা হচ্ছে নেতা-কর্মীরা।’ গতকাল নাসিকের ৩-৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাদানী নগর, মুক্তিনগর, রসুলবাগ, নিমাইকাসারী, বাগমারা, শিমরাইল, হীরাঝিল, নতুন মহল্লা, সিআইখোলা, বউবাজার ও আটি ওয়াবদা কলনি এলাকায় নৌকার পক্ষে গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মিরাজ হোসেন, আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য দেলোয়ার হোসেন ফারুক, বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য মেহেদী হাসান রনি, ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল, মাতুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শান্তনুর খান শান্ত, ডিএসসিসি ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি রাসেল ভূঁইয়াসহ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের নেতারা।
নাসিকের সিদ্ধিরগঞ্জের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারণা চালান আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী। এ সময় তিনি ওই ওয়ার্ডের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৌকায় ভোট চান। তার সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক এম এম রাসেলসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল সকালে ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সেলিনা হায়াৎ আইভীর সমর্থনে মুক্তিযোদ্ধাদের মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি, নৌকা প্রতীক, আইভীর ছবি ও মুক্তিযুদ্ধের পতাকা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানরা মিছিল বের করেন। মিছিলটি বঙ্গবন্ধু সড়ক, চাষাঢ়া মোড় ঘুরে নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল বন্দর ঘাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে এসে শেষ হয়। মিছিলের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু। সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট নুরুল হুদা। সমাবেশ পরিচালনা করেন কমান্ডার মো. শাজাহান ভুঁইয়া জুলহাস। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, বন্দর উপজেলা কমান্ডার আবদুল লতিফ, রূপগঞ্জ উপজেলা কমান্ডার আমান উল্লাহ, সোনারগাঁও উপজেলা কমান্ডার সোহেল রানা, আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংগঠনের সেক্রেটারি সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নয়ন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে নির্বাচনী জনসংযোগে অংশ নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিন। দুপুরে সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারণা চালান তিনি। এ সময় আইভীর পক্ষে নৌকা প্রতীকের জন্য ভোট চান তিনি। ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ২৭টি টিমে বিভক্ত হয়ে কাজ করছেন সহস্রাধিক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী। গতকাল কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে নাজিম উদ্দিন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ছাত্রলীগের সহসভাপতি তিলোত্তমা সিকদার, সহসভাপতি ফরিদা পারভীন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে, রাকিব হোসেন, নাহিদ হাসান শাহীনসহ অন্যরা প্রচারণায় অংশ নেন।
সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন