চলতি বছরের শুরুতেই করোনা পরিস্থিতির ফের অবনতি হয়েছে। দেশে হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এই ভাইরাসটির রাশ টানতে সরকারের পক্ষ থেকে গণপরিবহনসহ সবখানে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে বলা হলেও তা উপেক্ষিত সবখানেই।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। অধিকাংশ যাত্রীর মুখে মাস্ক নেই। কোথাও কোনো তদারকি নেই।
বেশিরভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই, রক্ষা করছেন না সামাজিক দূরত্ব। জনসমাগম দেখলে সেদিকেই ছুটছে উৎসুক জনতা।
ধানমন্ডির সিটি কলেজ ও ২৭ নম্বর এলাকায়, শাহবাগে, টি থ্রি , মিডওয়ে পরিবহনসহ ওই রুটে চলাচলকারী প্রতিটি বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। যাত্রীদের অনেকের মুখে মাস্ক নেই।
বাংলামটর, ফকিরাপুল, মগবাজার, মৌচাক, যাত্রাবাড়ী এলাকায়ও একই অবস্থা দেখা গেছে। সরকারি মালিকানাধীন বিআরটিসি বাসেও একই চিত্র।
মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেলেও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে তাদের কোনও তৎপরতা চোখে পড়েনি।
টি থ্রি পরিবহনের চালক কালাম মিয়া বলেন, রাস্তায় তো আপনারাই দেখছেন যাত্রীর কতো ভীড়। তুলতে না চাইলেও জোর করেই উঠে যায়। আমরা যদি এখন অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করি, তবে মানুষের হাতে মার খেতে হবে। আবার ভাড়াও বাড়ায়নি। আমাদের তো খেয়ে বাঁচতে হবে।
যাত্রীরা বলছেন, মানুষ কর্মস্থল বা অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়েছে। সরকার যাত্রীদের চলাচলে বিকল্প ব্যবস্থা না করে পরিবহনের অর্ধেক যাত্রী বলে দিলেই তো অবস্থা ভালো হবে না। সরকার যদি পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করতো, তাহলে সাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারতো সবাই।
জিগাতলা থেকে পল্টন এলাকায় যাবেন কায়েস হাসান। প্রতিদিনের মতো গণপরিবহনের ওপর ভরসা তার। সকালের অফিস সময়ে প্রতিটি গণপরিবহনে যাত্রীদের ওপচে পড়া ভীড় থাকে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে বাংলামটর এলাকায় কর্মরত একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, অফিসসহ সব প্রতিষ্ঠান খোলা আছে। তাই মানুষের চাপ আগের মতোই আছে। এদিকে আজ সপ্তাহের শেষ দিন হওয়ায় মানুষের ভীড় ও অনেক বেশি। এতে সামাজিক দুরত্বও অনেকে মেনে চললেও কেউ কেউ মানছেন না।
দোকান, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলক সবাইকে মাস্ক নির্দেশনা দেয়া হলেও পরিস্থিতি ঠিক তার উল্টো। ক্রেতাদের ভিড়ে দোকানগুলোতে তিল পরিমাণ জায়গা নেই।
রাজধানীর মিরপুর শপিং সেন্টার, শাহ আলী মার্কেট, মুক্তবাংলা মার্কেট, কো-অপারেটিভ মার্কেট, ফরচুন শপিংমল, মৌচাক মার্কেট, আনারকলি মার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজা, নিউ মার্কেট, গাজী ভবন শপিং সেন্টার, পাওয়েল মার্কেটসহ প্রায় সব জায়গাতেই একই চিত্র দেখা গেছে।
নিয়ম ভাঙার এ মিছিলে আছেন সব শ্রেণীর মানুষ। রিকশাওয়ালা, বাস, সিএনজির ড্রাইভার, অফিস কর্মকর্তা- কারো মুখেই দেখা যায়নি মাস্ক।
তবে সাধারণ মানুষেরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, এসব নিয়ম কার্যকর করার আগে সাধারণ মানুষের কথা ভাবতে হবে। করোনাকালীন এই সময়ে প্রায় সবারই আর্থিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তাই কাজে তো বের হতেই হবে।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত সোমবার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে থেকে ১১ বিধিনিষেধ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে তা কার্যকর হচ্ছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও দেশে এ রোগের সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৩ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সার্বিক কাৰ্যাবলি/চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো।
সূত্রঃ বাংলাদেশ জার্নাল