মাইকে ঘোষণা দিয়ে করোনার টিকার রেজিস্ট্রেশনের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গাইলের গোপালপুরের বেলুয়া জনতা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পুরো উপজেলায় চলছে-সমালোচনার ঝড়।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার থেকে গোপালপুর উপজেলার প্রায় ২৪ হাজার শিক্ষার্থীকে করোনার টিকা দেয়া শুরু হয়। আজ বুধবার হেমনগর ইউনিয়নের বেলুয়া জনতা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৯০ শিক্ষার্থীর টিকা নেয়ার নির্ধারিত তারিখ ছিল। এজন্য সকাল থেকেই মাইকিং করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১১০ টাকা করে নিয়ে টিকাকেন্দ্রে যেতে বলা হয়।
মাদারজানি গ্রামের কলেজছাত্র স্বপন হাসান হৃদয় অভিযোগ করেন, বেলুয়া, ভোলারপাড়া, কুমুল্লী, মাদারজানি ও জামতৈল গ্রামের বিভিন্ন সড়কে স্কুল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১১০ টাকা করে নিয়ে টিকাকেন্দ্রে যেতে বলা হয়। করোনা টিকার রেজিস্ট্রেশনের জন্য ওই টাকা লাগবে।
কুমুল্লী উত্তরপাড়া গ্রামের প্রচার মাইক বহনকারী ইজিবাইক চালক আব্দুর রহিম গুড্ডু জানান, স্কুলের দপ্তরি রাসেল তার গাড়ি ভাড়া করে আশপাশের ৫ গ্রামে টানা দুই ঘণ্টাব্যাপী করোনার টিকার রেজিস্ট্রেশনের জন্য ১১০ টাকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে হাজির হতে বলেন। বেলুয়া গ্রামের আবুল, কুমুল্লী গ্রামের হাসান, ভোলারপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদসহ অসংখ্য মানুষ এ মাইকিং শুনেছেন।
শিক্ষার্থী অনিকা জানান, গত এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় করোনার টিকার কথা বলে ১০০ টাকা করে আদায় করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এবার মাইকে প্রচার করে টিকার জন্য আরো ১১০ টাকা নিয়ে কেন্দ্রে যেতে বলেন প্রধান শিক্ষক। ঘোষণা অনুযায়ী সব শিক্ষার্থীরা রাধারাণী গার্লস স্কুলে রেজিস্ট্রেশনের জন্য টাকাসহ লাইনে দাঁড়ানোর পর শিক্ষকরা টাকা নিতে শুরু করেন।
এসময় সংবাদকর্মীরা হাজির হলে শিক্ষকরা টাকা নেয়া বন্ধ করে দেন।
ওই স্কুলের ছাত্রী শান্তা, শিখা, আবিদা, আসিফ ও ইমরান অভিযোগ করেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ অনেকের থেকে করোনার টিকার রেজিস্ট্রেশনের নামে ১১০ টাকা করে আদায় করেছেন।
ঘটনা আঁচ করতে পেরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম মিয়া দুপুর ১২টার দিকে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, “আমার পিয়ন মাইকিং করার সময় যে খরচের জন্য একশত টাকার কথা প্রচার করেছে তা ভুল বশতঃ শিক্ষার্থীর জন্য নিজের যাতায়াত খরচ। বিষয়টি কেউ ভুল বুঝে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, স্কুলের দপ্তরি রাসেল মাইকিং করে টাকা চেয়েছেন। তিনি বিষয়টি জানতেন না। ওই দপ্তরিকে প্রয়োজনে সাসপেন্ড করা হবে।
এদিকে দপ্তরি রাসেল জানান, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশেই তিনি মাইকিং করেছেন।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলীম আল রাজী বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে স্কুলের প্রায় ২৩ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। আজ ২ হাজার ১৩০ জনকে টিকা দেয়া হয়। টিকা আনা নেয়ার খরচ বহন করছেন স্থানীয় প্রশাসন। সুতরাং টিকা দেয়ার অজুহাতে কেউ টাকা আদায় করতে পারেন না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. নাজনীন সুলতানা বলেন, টিকা রেজিস্ট্রেশনের নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ পেয়ে তিনি প্রধান শিক্ষককে কড়া ভাষায় সতর্ক করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. পারভেজ মল্লিক অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন বলেন, এ ব্যাপারে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্রঃ মানবজমিন