নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে কাল ভোট গ্রহণ। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। এবার পুরোপুরি ইভিএমে ভোট হবে।
ভোট উৎসব পালনে প্রস্তুত ভোটাররা, প্রস্তুত নির্বাচন কমিশনও। দেশবাসীর দৃষ্টিও রয়েছে নারায়ণগঞ্জের ওপর। এ নির্বাচন ঘিরে সর্বত্র নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছেন বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সদস্যরা। থাকবে চার স্তরের নিরাপত্তাবলয়। কেউ ভোট কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে তা কঠোর হস্তে দমন করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিস জানিয়েছে, বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থায় আজ ভোট কেন্দ্রগুলোতে ইভিএম ও নির্বাচনী সামগ্রী পাঠানো হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জজুড়ে এখন বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। গত মধ্যরাত পর্যন্ত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণায় উত্তাল ছিল এ বন্দরনগরী। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ঘাম ঝরিয়েছেন দুই হেভিওয়েট মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার। গত মধ্যরাত থেকেই সব ধরনের প্রচারণা নিষিদ্ধ হয়েছে। নারায়ণগঞ্জবাসী এখন অপেক্ষা করছেন, কার ভাগ্যে ফুটতে যাচ্ছে শেষ হাসি। আজ মধ্যরাত থেকে আগামীকাল মধ্যরাত পর্যন্ত নৌযান, স্থলযান, বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো, ইজিবাইকসহ সব যানবাহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। মোটরসাইকেল চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে নির্বাচন প্রার্থী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন, অনুমতিপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক, সাংবাদিকসহ নির্বাচনী এজেন্টদের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। নির্বাচনী প্রচারে কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ছিল। এ নিয়ে তারা মিছিল-শোডাউন করেছেন। অনেকের বিরুদ্ধে কালো টাকা ছড়ানোর অভিযোগও ছিল। ভোটের দিন কাউন্সিলরদের নিয়েই উত্তপ্ত পরিবেশ বিরাজ করতে পারে বলে আশঙ্কাও আছে প্রশাসনের। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ২৭টি সাধারণ ও ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে।
৩০ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঝুঁকি বিবেচনায় ১৯২টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৩০টি কেন্দ্রকে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। ওইসব ভোট কেন্দ্রে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। কাল নির্বাচনে কেন্দ্রগুলোকে অতি গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ- তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আমরা খুবই সন্তুষ্ট। এখানে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তিনটি থানা এলাকা থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ৩০টি চিহ্নিত করা হয়েছে। ওইসব কেন্দ্রকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। মোবাইল টিম, স্ট্র্যাইকিং ফোর্স প্রস্তুত থাকবে। এছাড়া অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রতিটি ওয়ার্ডে মোতায়েন থাকবে।
আগামীকাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোট চলবে। একজন মেয়র, ৯ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর এবং ২৭টি ওয়ার্ডের জন?্য একজন করে কাউন্সিলর বেছে নিতে ভোট দেবে ৫ লাখ ১৭ হাজারেরও বেশি নারায়ণগঞ্জবাসী। মেয়র পদে লড়ছেন সাতজন। এ ছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩২ জন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (নৌকা), এ বি এম সিরাজুল মামুন-খেলাফত মজলিশ (দেওয়াল ঘড়ি), তৈমূর আলম খন্দকার-স্বতন্ত্র (হাতি), মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ-ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (হাতপাখা), মো. কামরুল ইসলাম-স্বতন্ত্র (ঘোড়া), মো. জসীম উদ্দিন-বালাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ), মো. রাশেদ ফেরদৌস-বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাত ঘড়ি)। ভোট তথ্য : ভোট কেন্দ্র ১৯২, ভোট কক্ষ ১ হাজার ৩৩৩, ভোটার ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১। পুরুষ ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৬ ও মহিলা ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১১। ইভিএমে ভোট হয় যেভাবে : ইভিএমে ভোট দেওয়ার আগে আঙুলের ছাপ, ভোটার নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা স্মার্ট পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভোটার শনাক্ত করা হয়।
নির্দিষ্ট কেন্দ্রের ভোটকক্ষে একজন পোলিং অফিসার ভোটার ভেরিফিকেশনের কাজটি করেন। ডেটাবেজে ভোটার বৈধ বা অবৈধ হিসেবে শনাক্ত হলে মনিটরের মাধ্যমে তা দেখতে পান পোলিং এজেন্টরা। ভোটার বৈধ হলে ভোটিং মেশিনে ভোটারকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। ভোটার সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে গেলে গোপন কক্ষে থাকা ব্যালট ইউনিটে ব্যালট ইস্যু করা হয়। ভোটকক্ষের গোপনকক্ষে গিয়ে ভোটার পছন্দের প্রার্থী ও প্রতীক বেছে নিয়ে ব্যালট ইউনিটের ডান দিকের সাদা বোতামে চাপ দিলে প্রতীক সিলেক্ট হবে। ওই ব্যালট ইউনিটে সবুজ রঙের কনফার্ম বোতামে চাপ দিলে তার ভোট দেওয়া হয়ে যাবে।
সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন