আগামীকাল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। গতকাল মধ্যরাতে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন সিটি নির্বাচনের ৭ জন মেয়র ও ১৮২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। ভোটের মাঠের তথ্যমতে, প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের মধ্যে লড়াই হবে। এছাড়া ২৭টি ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটিতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বর্তমান কাউন্সিলররাই জেতার পথে রয়েছেন। তবে কয়েকটি ওয়ার্ডে দুই বা ততোধিক প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে।
১ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক। তিনি এবার ঝুড়ি প্রতীকে লড়ছেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে রয়েছেন সাবেক ইউপি সদস্য আবদুর রহিম। এছাড়া এই ওয়ার্ডে লাটিম প্রতীক নিয়ে লড়ছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমানের ছেলে মাহমুদুর রহমান (শামীম ওসমান)। তবে জয়ের সম্ভাবনা বেশি ওমর ফারুকের।
২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপির ইকবাল হোসেনের লড়াই হবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক ভূঁইয়া রাজুর সঙ্গে। রাজুকে সমর্থন দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ এ কে এম শামীম ওসমান। ইকবাল লড়ছেন লাটিম ও রাজু লড়ছেন ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের শাহজালাল বাদল। তার সঙ্গে যুবলীগ নেতা তোফায়েল আহমেদের লড়াই হবে। বাদল ঠেলাগাড়ি ও তোফায়েল ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
এদিকে, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ত্রিমুখী লড়াইয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই ওয়ার্ডে লাটিম প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর আরিফুল হক হাসান। জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন মাস্টারের ছেলে আরিফুল সাংসদ শামীম ওসমানের অনুসারী। এই নির্বাচনে ঘুড়ি প্রতীকে দাঁড়িয়েছেন আরিফুলের চাচাতো ভাই নজরুল ইসলাম। এছাড়া ঠেলাগাড়ি প্রতীকে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নুর উদ্দিন মিয়া।
৫ নম্বর ব্যাডমিন্টন প্রতীকে লড়ছেন বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপির সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের ছেলে গোলাম মুহাম্মদ সাদরিল। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আনিসুর রহমান আনিস। তিনি ঠেলাগাড়ি প্রতীকে লড়ছেন।
এছাড়াও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে লড়াই হবে শামীম ওসমানের দুই ঘনিষ্ঠজন মতিউর রহমান ও সিরাজুল ইসলাম মণ্ডলের মধ্যে। তাদের মধ্যে বর্তমান কাউন্সিলর মতিউর রহমান ঠেলাগাড়ি ও সিরাজুল ইসলাম ঝুড়ি প্রতীকে লড়ছেন।
৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য প্রয়াত কাউন্সিলর আলা হোসেন আলার এলাকায় লড়াই হবে মিজানুর রহমান রিপন ও ফজলুল হক জুয়েলের মধ্যে। তারা যথাক্রমে রেডিও এবং মিষ্টি কুমড়া প্রতীকে লড়ছেন।
৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর রুহুল আমিন মোল্লা এগিয়ে থাকলেও তার লড়াই হবে শামীম ওসমান ঘনিষ্ঠ মহসিন ভুঁইয়ার সঙ্গে। রুহুলের প্রতীক করাত, মহসিনের লাটিম।
৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ইস্রাফিল প্রধান সঙ্গে লড়াই হবে বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি মিষ্টি কুমড়া প্রতীকে লড়ছেন।
এদিকে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ইফতেখার আলম খোকনের কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নাই। তিনি ব্যাডমিন্টন র্যাকেট প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
এবার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচন করছেন না বর্তমান কাউন্সিলর জমসের আলী ঝন্টু। তার ছেলে শাহাদাত হোসেন বাবুর সমর্থনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তিনি। বাবু ঘুড়ি প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এখানে লড়াই হবে বিএনপির অহিদুল ইসলাম ছক্কু ও ঠেলাগাড়ি প্রতীকের সাইফুল হাসান রিয়েলের মধ্যে। জয়ের সম্ভাবনা ঝুড়ি প্রতীকের অহিদুল ইসলাম ছক্কুর।
১২ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকুর কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নাই। কিন্তু আরেক প্রার্থী সেলিম খানকে একটি সভার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। শকু লড়ছেন লাটিম এবং সেলিম লড়ছেন ঘুড়ি প্রতীকে।
১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ঠেলাগাড়ি প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। এদিকে মনোনয়ন প্রত্যহারের শেষ দিনে খোরশেদের সমর্থনে সরে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের পদ হারিয়েছেন রবিউল হোসেন। অভিযোগ রয়েছে, শামীম ওসমানের নির্দেশে তার ঘনিষ্ঠ নেতা রবিউল ইসলাম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এখানে অনায়াসে জেতার পথে মাকসুদুল আলম খন্দকার। কিন্তু খোরশেদের গলার কাঁটা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সমর্থিত রেডিও প্রতীকের শাহ ফয়েজ উল্লাহ।
১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ওসমান পরিবার ঘনিষ্ঠ মো. শফিউদ্দিন প্রধান। শফিউদ্দিন লড়ছেন লাটিম প্রতীকে। শফিউদ্দিন ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ। এখানে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নেতা ঘুড়ি প্রতীকের মনিরুজ্জামান মনির।
১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের অসিত বরণ বিশ্বাসের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নাই। তিনি লড়ছেন ঝুড়ি প্রতীকে। লাটিম প্রতীকে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জিএম আরমান লড়ছেন তার বিরুদ্ধে।
১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল নির্বাচন করছেন না। তিনি বন্ধু কবির হোসেনের পক্ষে কাজ করছেন। শামীম ওসমানের সমর্থন রয়েছে ব্যাডমিন্টন র্যাকেট প্রতীকের কবিরের পক্ষে। এখানে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে সাবেক প্যানেল মেয়র ওবায়দুল্লার ভাতিজা রিয়াদ হাসানের সঙ্গে। রিয়াদ লড়ছেন ঘুড়ি প্রতীকে।
১৭ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবুর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নাই। তার বিরুদ্ধে ব্যাডমিন্টন র্যাকেট প্রতীক নিয়ে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কমিশনার অলিউদ্দিন ভুঁইয়া লড়লেও তেমন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নন।
১৮ নম্বর ওয়ার্ডে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বর্তমান কাউন্সিলর কবির হোসাইনের সঙ্গে মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্নার।
১৯ নম্বর ওয়ার্ডে লড়াই হবে বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের ফয়সাল সাগরের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ গাউসিয়া কমিটির সভাপতি মোখলেছুর রহমান চৌধুরীর।
২০ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপির গোলাম নবী মুরাদের সঙ্গে লড়াই হবে বিএনপির আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ শাহেন শাহ এর সঙ্গে। এগিয়ে আছেন মোহাম্মদ শাহেন শাহ। শাহেন শাহ সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।
২১ নম্বর ওয়ার্ডে জিতবেন বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপির হান্নান সরকার। কারণ তার প্রতিদ্বন্দ্বী শাহিন মিয়া তেমন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নন।
২২ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপির সুলতান আহমেদ ভূঁইয়ার সঙ্গে লড়াই হবে খান মাসুদের। খান মাসুদকে সমর্থন দিচ্ছে ওসমান পরিবার। তবে সুলতান আহমেদ এগিয়ে। অন্যদিকে মহিলা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইশরাত জাহান খান স্মৃতি লিপি ওসমানের সমর্থনে লড়ছেন।
২৩ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহানগরের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ লড়ছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগরের সভাপতি আবুল কাউসার আশার সঙ্গে। এগিয়ে সাইফুদ্দিন আহমেদ।
২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর জাতীয় পার্টির নেতা আফজাল হোসেনের সঙ্গে লড়াই হবে মোহাম্মদ খোকন ভেন্ডারের। এগিয়ে আছেন আফজাল।
২৫ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর এনায়েত হোসেনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নাই। তার বিরুদ্ধে আছেন সাইদুর রহমান লিটন। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর সামসুজ্জোহারই জয়ের সম্ভাবনা বেশি। এখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী আনোয়ার হোসেন বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রশিদের ভাই।
আর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কামরুজ্জামান বাবুল মারা যান প্রায় ১০ মাস আগে। এখানে তার ভাই প্রার্থী হলেও লড়াইটা মূলত হবে সিরাজুল ইসলাম ও আলমগীর মিয়ার মধ্যে।
১,২,৩ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত কাউন্সিলর মাকসুদা মোজাফফর এবং ৪, ৫, ৬ সংরক্ষিত কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম নিজ নিজ ওয়ার্ডে এগিয়ে আছেন। ৭, ৮, ৯ সংরক্ষিত কাউন্সিলর মোসাম্মাৎ আয়শা আক্তার দিনার এবার লড়াই হবে তাসনুভা নওরিন ভুঁইয়ার সঙ্গে। ১০, ১১, ১২ সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিনোয়ারা বেগম ও নূপুর বেগমের লড়াই হবে। ১৩, ১৪, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত কাউন্সিলর শারমীন হাবিব বিন্নী ও পপি রানী সরকারের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। গতবার অল্প ভোটে হেরেছিলেন পপি রাণী। এইবার তার ভালো অবস্থান রয়েছে।
১৬, ১৭, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত কাউন্সিলর আফসানা আফরোজ বিভা এগিয়ে আছেন। তবে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী সানজিদা আহমেদ জুয়েলী। ১৯, ২০, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত কাউন্সিলর শিউলি নওশাদ ও মায়ানুর বেগমের লড়াই হবে। ২২, ২৩, ২৪ সংরক্ষিত কাউন্সিলর শাওন অংকন ও শাহনাজ ভুঁইয়ার লড়াই হবে। ২৫, ২৬, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত কাউন্সিলর হোসনে আরা বেগম ও সানিয়া আক্তারের লড়াই হবে।
সূত্রঃ বাংলাদেশ জার্নাল