মাঠে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষ। এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ব্যালট পেপারে। কে জিতবে কে হারবে- কাল প্রার্থী, ভোটার এবং কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এই উত্তেজনাই বিরাজ করবে।
কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচন নিয়ে আজও প্রার্থী, ভোটার এবং কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। সময় যতই এগিয়ে আসছে এই উত্তেজনা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও শুক্রবার মধ্যরাত থেকে বন্ধ হয়েছে নির্বাচনী সকল প্রচার প্রচারণা। এরপরও থেমে নেই নির্বাচন নিয়ে আলোচনা।
প্রতিটি অলি-গলিতে এবং চায়ের দোকানে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় সরব ভোটাররা। কে কত ভোটের ব্যবধানে জিতবে হারবে- এনিয়ে চলছে সমীকরণ। তবে সমীকরণ যতই চলুক না কেনো, ভোটাররা যাকে ভোট দেবেন দিন শেষে সেই হাসবেন!
শেষ মুহূর্তে ভোটারদের কাছে নিজের প্রতীক ও উন্নয়ন বার্তা পৌঁছে দিতে গতকাল প্রচারণার ব্যস্ত ছিলো মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এদিন প্রার্থীদের কাছে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে একের পর এক শো-ডাউন করেছেন প্রার্থীরা।
এদিকে বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে দলীয়ভাবে কোনো নির্বাচনেই অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন তৈমুর আলম খন্দকার। তবে দলীয় সিন্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন অংশগ্রহণ করার অভিযোগে ইতিমধ্যে তৈমুর আলম খন্দকারকে জেলা আহ্বায়ক পদ এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়েছে বিএনপি।
তবে নির্বাচনে গুঞ্জন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে ঠেকাতে সরকারদলীয় একটি প্রভাবশালী পরিবারের আজ্ঞাবহ হয়ে প্রার্থী হয়েছেন তৈমুর আলম খন্দকার। এই আলোচনা নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়ার পর থেকেই চলছে। আর নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান তাকে সমর্থন দিচ্ছেন কি না এই প্রশ্নের মুখোমুখি বারবার হতে হয়েছে তৈমুর আলমকে। কিন্তু তৈমুর খোলাসা করে কিছুই বলেননি।
নারায়ণগঞ্জ শহরজুড়েই আলোচনা ছিলো আওয়ামী লীগের একটি অংশই নির্বাচনে নামিয়েছে তৈমুর আলমকে। ওই অংশটির নেতৃত্ব দিচ্ছে ওসমান পরিবার। মূলত আইভীর দ্বন্দ্বের জেরেই তৈমুর আলমের পক্ষে ওসমান পরিবারের এই অবস্থান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের বন্দর অঞ্চলের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণা চালান তৈমুর। তার সাথে এসময় বন্দর উপজেলার চার ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। তারা হলেন, বন্দর ইউপির চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ, কলাগাছিয়া ইউপির চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, মুছাপুর ইউপির চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন ও ধামগড় ইউপির চেয়ারম্যান কামাল হোসেন। তাদের মধ্যে এহসান, দেলোয়ার ও মাকসুদ তিনজনই জাতীয় পার্টির নেতা। তিনজনই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম ওসমানের একনিষ্ঠ অনুসারী। তারা সেলিম ওসমানের ‘মাই ম্যান’ বলে অধিক পরিচিত। আর কামাল হোসেনও সর্বশেষ ধামগড় ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার পর সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠতা অর্জন করেন।
এবিষয়টি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এতদিন কিছু না বলেও গতকাল বন্দরে এক নির্বাচনী কর্মী সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, শেখ হাসিনা নৌকা প্রতীক দিয়েছিলেন বলে এমপি হইছিলেন। আর সেই শেখ হাসিনার প্রার্থীর বিরোধীতা করছেন। জীবিত থাকতে আগামীতে নৌকা পেতে দেবো না।
অন্যদিকে আগামীকাল ১৯২টি ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৩০টিকে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এবিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, মোট ১৯২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৩০টিকে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সব কেন্দ্রেই মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স প্রস্তুত থাকবে। আর পুলিশের বিশেষায়িত যেসব ব্যাটালিয়ন আছে, তারাও মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে বিজিবির টিম মোতায়েন থাকবে।
রোববার নারায়ণগঞ্জ সিটিতে ২৭টি ওয়ার্ডের ১৯২টি কেন্দ্রের ১ হাজার ৩৩৩ ভোটকক্ষে চলবে ভোটগ্রহণ। এই নির্বাচনে ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। নির্বাচনে মেয়র পদে ৬ জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১৪৫ জন ও সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৩৪ জনসহ মোট ১৮৯ প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন।
মেয়র পদে ৬ প্রার্থীরা হলেন: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ, খেলাফত মজলিসের এবিএম সিরাজুল মামুন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসীম উদ্দিন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. রাশেদ ফেরদৌস, আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার।
২০১১ সালে সিটি কর্পোরেশন হিসেবে যাত্রা শুরুর পর তৃতীয়বারের মতো এই সিটিতে নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
সূত্রঃ বাংলাদেশ জার্নাল