পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় দেলোয়ার খলিফা নামে এক কৃষকের ১০ হাজার তরমুজ গাছ উপড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে।
রোববার দুপুরে কুয়াকাটা পৌরসভার পশ্চিম ধুলাসার গ্রামে ওই চাষির প্রায় ১৫ হাজার তরমুজগাছের মধ্যে ১০ হাজার গাছ উপড়ে ফেলা হয়।
কৃষক দেলোয়ার যুগান্তরকে জানান, গত কয়েক বছর ধরে তিনি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঢালে বিভিন্ন সবজি চাষ করে আসছে। এখানে বন বিভাগের ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে গত দুই মাস আগে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ করে তরমুজের চাষ শুরু করেন। শুরুতে বন বিভাগের স্থানীয় বিট অফিসার মোশাররফকে ১০ হাজার টাকাও দিয়েছেন। তারা প্রতিদিন সেখানে গিয়ে চাষের খোঁজখবরও নিতেন।
কৃষকের অভিযোগ, রোববার হঠাৎ কুয়াকাটা পাউবোর প্রকৌশলী মনির এবং তার সহযোগী সার্ভেয়ার হাসানসহ ৬-৭ জন এসে তার প্রায় ১০ হাজার গাছ একযোগে উপড়ে ফেলেন।
কৃষক দেলোয়ার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মুই হ্যাগো আতপাও ধইরা অনেক কানছি, কিন্তু হ্যারা আমার কোনো কতাই হোনে নাই। আমারে একটা মাস সময় দিলেই এই সর্বনাশটা মোর অইতে না। আমি এইয়ার বিচার চাই।’
দেলোয়ারের স্ত্রী সালমা বেগম জানান, তার স্বামীর সঙ্গে তিনি ওই জমিতে তরমুজ চাষে সহযোগিতা করেছেন। আর্থিক জোগান দিতে তিনটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে স্বামীকে দিয়েছেন। এখন এই ঋণ কি উপায় পরিশোধ দেবেন এই চিন্তায় তিনি অস্থির।
প্রতিবেশী নাসির মৃধা বলেন, তরমুজের গাছগুলো উপড়ে ফেলতে নিষেধ করে আমরা গ্রামবাসী সবাই অনুরোধ করেছি। আগামী এক মাসের মধ্যে এই গাছ থেকে ফলন পেতাম। কিন্তু প্রকৌশলী এবং তার লোকজনকে কোনো কথা শোনাতে পারিনি।
টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বন বিভাগের দায়িত্বে থাকা গঙ্গামতি ফরেস্ট বিটের মোশাররফ অস্বীকার করে বলেন, আমি কোনো টাকাপয়সা নিইনি, এগুলো সব মিথ্যা। তাকে তরমুজ চাষে নিষেধ করার পরও তিনি গাছ লাগিয়েছেন। ওখানে ঘাস নষ্ট হওয়ার কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী গাছ উপড়ে ফেলেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজে নিয়োজিত প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ওখানে তরমুজগাছ লাগিয়েছে আগে দেখিনি। সরেজমিন গিয়ে দেখে তরমুজগাছগুলো আমার লোকজনকে তুলে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন জানান, ওই স্থানে এখন প্রকল্প আওতাধীন কাজ চলমান। এ বিষয়ে তারা করণীয় নির্ধারণ করবেন।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদুল হক জানান, বিষয়টি জেনেছি। বিস্তারিত খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
সূত্র: যুগান্তর