শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) টালমাটাল অবস্থা। প্রথমে হল প্রভোষ্ট ও পরে উপাচার্যের পদত্যাগের চালিয়ে যাচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্দেশ দিলেও হল ত্যাগ করছেন না আন্দোলনকারীরা।
সোমবার সন্ধ্যায় তারা ঘোষণা দিয়েছে- উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের আগ পর্যন্ত তারা কিছুতেই আন্দোলন থামাবে না বা ক্যাম্পাস ছাড়বে না। সোমবার সারা রাত তারা ক্যাম্পাসে থাকবে এবং রাত কাটাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে।
এদিকে, পরিস্থিতি সামাল দিতে আবার শাবি ক্যাম্পাসে পুলিশের বিশেষ বাহিনী ‘ক্রাইসিস রেন্সপন্স টিম’-কে মোতায়েন করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ পিপিএম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ, হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত এবং ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাত থেকে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী। গত শনিবার সন্ধ্যায় ছাত্রীদের কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠে। এরপর পরিস্থিতি পুরোপুরি ঘোলাটে হয়ে ওঠে।
রবিবার দিনভর আন্দোলনে উত্তাল ছিল শাবি। এর মধ্যে ওইদিন বিকালে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। তাকে উদ্ধারে অ্যাকশনে যায় পুলিশ। এসময় তাদের রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিচার্চে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন। তখন ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মচারী, পুলিশ সদস্য ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও আহত হন।
এদিকে, রবিবার সন্ধ্যায় পুলিশের সহায়তায় মুক্ত হয়ে শাবি উপাচার্য বসেন জরুরি সিন্ডিকেট সভায়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়- বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অমান্য করেন। তারা রবিবার প্রায় সারা রাত বিক্ষোভ প্রদর্শনের পর সোমবার সকাল থেকে ফের আন্দোলন শুরু করেন।
সোমবার দিনভর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে কয়েক দফায় বিক্ষোভ করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা একযোগে শাবির বঙ্গবন্ধু হল, সৈয়দ মুজতবা আলী হল, প্রথম ছাত্রী হল ও বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী (দ্বিতীয় ছাত্রী হল) হলে তালা লাগিয়ে দেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শাহপরান হলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এসময় শাবিপ্রবি প্রশাসনের কাউকেই হলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
পরে বিকাল সোয়া ৪টার উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করতে যান বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদের বাধা দেয় পুলিশ। এসময় শিক্ষার্থীরা পুলিশ সদস্যদের ফুল দিতে দেখা যায়। আন্দোলনরতরা এসময় জানান, পুলিশ কোনো ধরনের হামলা-লাঠিচার্জ- এমনকি গুলি করলেও করতে পারে, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হবে। এরই স্মারক হিসেবে তারা পুলিশকে ফুল দিচ্ছেন।
এর আগে সোমবার দুপুরে বিভিন্ন হল থেকে নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থী বেরিয়ে যান। তারা জানান, পরিস্থিতি যেভাবে ঘোলা হয়ে ওঠেছে, তাতে ভয় ও আতঙ্ক থেকে তারা হল ছাড়ছেন।
এদিকে, শাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদারকে প্রধান করে ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শেষ খবর পাওয়া (রাত ৭টা) পর্যন্ত কয়েক শ ছাত্র-ছাত্রী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এবং মূল ফটকের সামনে আরও কিছু শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন।
সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন