গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি:
কেউ সিঁড়ির নিচে, কেউ বারান্দায়। কেউ অসুস্থ্য শিশু সন্তানকে বুকে জড়িয়ে মেঝেতে বসে আছেন স্যালাইন হাতে। জায়গা না পেয়ে আবার অনেকেই শিশুর হাতের স্যালাইন নিয়ে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের বাইরের রাস্তায় বসে আছেন। এ অবস্থা গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে। গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকতেই নজরে পড়বে লাশ কাটা ঘর। পাশেই ডায়রিয়া ওয়ার্ড। এতে মাত্র ১০টি বিছানা। চাহিদার তুলনায় ১০ ভাগের এক ভাগ। ফলে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের ১০ জনের ভাগ্যে বিছানা জুটলেও অধিকাংশরই কপালে জোটে না কোনো বিছানা। পড়ে থাকতে হয় মেঝেতে বা সিঁড়ির নিচে। চিকিৎসা ব্যবস্থা বেহাল অবস্থা। হাতে স্যালাইন লাগিয়ে শিশুর মা অথবা স্বজনদের কোলে বসে দিনরাত কাটাতে হয় হাসপাতালের মেঝেতে। চারপাশে ময়লা-আবর্জনার স্তপ। দুর্গন্ধে আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকাও কঠিন। তারপরও স্বজনদের জীবন বাঁচাতে অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকতে হয় সিস্টার, নার্স আর ডাক্তারদের অপেক্ষায়। তাদের পায়খানা প্রশ্রাব খানায় যেতে হয় দম বন্ধ করে। পা দানিসহ চারপাশের চিত্র ভয়াবহ। এমন অবস্থায় নাক মুখ চেপে ধরে থাকেন দাঁড়িয়ে, বসে অথবা পায়ে হেঁটে হেঁটে। অসহায় স্বজনরা হাসপাতালের বারান্দায় তাদের শিশুদের নিয়ে ঠাঁই নেন তবুও। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শিশুপুত্রের চিকিৎসা নিতে আসা গাইবান্ধা সদর উপজেলার দাড়িয়াপুরের মোমেনা বেগম বলে এসে দেখি হাসপাতালে ডাক্তার নেই। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে এক নারী বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন। তাকে ডেকে তুলতেই তিনি ক্ষেপে যান। তারপর হাতে কেনুলা লাগিয়ে আর স্যালাইন দিয়ে বলেন, যান। কোথায় যাবেন এই গভীর রাতে, এই ভেবে মোমেনা তার স্বামীকে নিয়ে বারান্দায় বসে রাত কাটিয়ে দেন। সকালে শিশুর অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলে ওই শিশুকে কোলে নিয়ে সামনের রাস্তায় বসেছিলেন একটু রোদ পাবার আশায়। মোমেনা বেগম বলেন, ক’দিন কিভাবে ছিলাম তা বর্ণনা করতে পারবো না। মানুষের যে ব্যবহার এরকম হতে পারে, তা বুঝে গেলাম। ঔষধ সব বাহির থেকে কিনে হাসপাতালে পেয়েছি ফ্রি স্যালাইন। নার্স আরিফা খাতুন বলেন, অনুমতি ছাড়া তারা কথা বলতে পারবেন না। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বিছানা কম, তাই মেঝে, সিঁড়ির নিচে ঠাঁই করে দিতে হয় রোগীদের। গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডাক্তার তাহেরা আকতার মনি বলেন, আমাদের জনবল কম, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বিছানা মাত্র ১০টি। ফলে আগত রোগিদের সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয় না।