জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে ১২টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। সংস্থাগুলো এমন দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যাঁ পিয়েরে ল্যাকরোইক্সকে চিঠি দিয়েছে। গতকাল এই চিঠির বিষয়টি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। চিঠিতে এই মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলেছে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বিভাগের উচিত র্যাবকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে নিষিদ্ধ করা। চিঠির সঙ্গে র্যাবের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলেছে, র্যাবের কিছু কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, জোরপূর্বক গুম, নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে র্যাবকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। চিঠিতে জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে সংস্থাগুলো বলছে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার আগে একটি যাচাই পদ্ধতি চালু করা উচিত, যেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, গুম, নির্যাতনের অভিযোগও তদন্ত করে দেখা হবে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইন্স ইন-ভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স (এএফএডি), এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বা ফোরাম এশিয়া, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল), ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস, দ্য অ্যাডভোকেটস ফর হিউম্যান রাইটস, ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার (ওএমসিটি)। গত বছরের ৮ নভেম্বর জ্যাঁ পিয়েরে ল্যাকরোইক্সকে এই চিঠি পাঠানো হয়। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বিভাগ এখনো এই চিঠির আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি। এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
র্যাবের প্রতি অবিচার হচ্ছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে র্যাবকে নিষিদ্ধ করতে ১২ মানবাধিকার সংগঠনের দাবির প্রতিক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, সরকারি এই বাহিনীর ওপর ‘অবিচার’ হচ্ছে। গতকাল ডিসি সম্মেলনে নিজ মন্ত্রণালয়ের অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ প্রতিক্রিয়া জানান। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) শান্তিরক্ষা মিশনে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে ১২টি মানবাধিকার সংস্থা জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যাঁ পিয়েরে ল্যাকরোইক্সকে চিঠি দিয়েছে। এই চিঠির বিষয়টি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে গতকাল। আসাদুজ্জামান খান বলেন, যদি পেছনের দিকে তাকান, র্যাব কখন তৈরি হয়েছিল? র্যাব যারা তৈরি করেছিলেন, এখন তারাই আবার র্যাবকে অপছন্দ করছেন। র্যাবের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার করছেন। র্যাব যে ভালো কাজগুলো করছে, সেগুলো তারা তুলে ধরছেন না। র্যাব যে মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করছে, ভেজাল দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে, তারা যে (সুন্দরবন) জলদস্যুমুক্ত করল, চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে, সবসময় জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনে কাজ করছে, সে কথাগুলো তারা কখনো তুলে ধরেন না। তারা নানা ধরনের মানবাধিকারের কথা বলেন। র্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা মানবাধিকারের কথা বলেন। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, এমন কোনো দেশ নাই যেখানে এনকাউন্টার বা এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। পুলিশ বাহিনীর সামনে কেউ যদি অস্ত্র তুলে কথা বলে, পুলিশ বাহিনী তো তখন নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে না। তখনই এই ফায়ারিংয়ের ঘটনা ঘটে। সবই যদি এলিট ফোর্স র্যাবের ঘাড়ে দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আমি মনে করি, তাদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে।’
সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন