আগামী জুনেই করোনার টিকা উৎপাদনে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রতি বছর অন্তত ১ বিলিয়ন ডোজ টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা সম্পন্ন প্লান্ট স্থাপনের কাজ শুরু করেছে সরকার। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশি রাষ্ট্রীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি এসেন্সিয়াল ড্রাগস ও আমেরিকার ডায়াডিক ইন্টারন্যাশনাল আইএনসি কোম্পানির মধ্যে মিউচুয়াল ননডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট (এনডিএ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এখন শুধু সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হওয়ার অপেক্ষা। এই চুক্তির খসড়ার ওপর মতামত গ্রহণ চলছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছেও মতামতের জন্য এটি পাঠানো হয়েছে গত ১৮ জানুয়ারি।
সংশ্লিষ্ট অন্য দফতর ও মন্ত্রণালয়গুলোতেও মতামতের জন্য এমওইউ-এর খসড়া কপি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া এ সংক্রান্ত একটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে, যা এই মুহূর্তে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে (আইএরডি) রয়েছে। আশা করা হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি তা অনুমোদন পাবে। অর্থবিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এই সূত্র জানায়, করোনার টিকার উৎপাদন প্লান্ট স্থাপনের জন্য গোপালগঞ্জে সাড়ে ৭ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে সরকার। সেখানে ভূমি উন্নয়নের প্রাথমিক কাজও শুরু হয়েছে। দ্রুত উৎপাদনে যেতে স্বল্প সময়ের মধ্যে মেশিনারি স্থাপন করা জরুরি। এ জন্য স্টিল স্ট্র্যাকচারের একটি কাঠামো তৈরি করা হবে। মেশিনারি, ল্যাবের যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আনার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে, যার মাধ্যমে আমেরিকান কোম্পানির প্রযুক্তিগত সহায়তায় দেশীয়ভাবে টিকা উৎপাদনে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জুন/জুলাইয়ের মধ্যেই এ প্লান্ট উৎপাদনে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই টিকার সামগ্রিক মালিকানা থাকবে বাংলাদেশের। তবে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে আমেরিকা। প্রাথমিক উৎপাদনের পর মানব দেহে ক্লিনিক্যাল ট্র্যায়াল করা হবে। সেটার সফল অতিক্রম হলে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবে এসেন্সিয়াল ড্রাগস। বছরে ১ বিলিয়ন ডোজ উৎপাদনের মাধ্যমে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিও করতে পারবে বাংলাদেশ। সেজন্য তাদেরকে রয়্যালিটি দেওয়া হবে, যা পরবর্তীতে দুই দেশের সরকার আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করবে বলে এমওইউ-এর খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি এসেন্সিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির জগলুল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমেরিকান একটি কোম্পানির সঙ্গে ননডিসক্লোজার চুক্তি হয়েছে। প্লান্ট স্থাপনের জন্য গোপালগঞ্জে সাড়ে ৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে কিছু জটিলতা আছে। নয়জন ব্যক্তি তাদের জমির দাম ও অন্যান্য বিষয়ে কিছু দাবি জানিয়েছে, সেগুলো নিষ্পত্তির চেষ্টা করছে জেলা প্রশাসন। আশা করছি খুব শিগগিরই তা মিটে যাবে। এ প্রকল্পের এ জন্য একটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি তা অনুমোদন পাবে। তবে ভ্যাকসিনের নাম, প্যাটার্ন বা দাম কেমন হবে- সে সব বিষয় এখনো ঠিক হয়নি। আমরা ভ্যাকসিন উৎপাদনের একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিচ্ছি। বাকি বিষয়গুলো ঠিক করবে সরকার। আমেরিকান ওই কোম্পানির সঙ্গে সম্পাদিত এনডিএ অনুযায়ী, দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ও নিরাপদ ভ্যাকসিন উৎপাদন কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যে টিকা তৈরি হবে তা ২ থেকে ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাবে। টিকা উৎপাদন প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার আপাতত অভ্যন্তরীণভাবে অর্থের জোগান দেবে। তবে একই সঙ্গে বিদেশি কোনো দেশ বা সংস্থাকে বিনিয়োগকারী হিসেবেও নেওয়া হবে। এ জন্য এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডিতে) পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থবিভাগ। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, এটা আমরা গত বছর থেকেই চেষ্টা করছি। আমরা তো টার্গেট করেছিলাম গত ডিসেম্বরেই উৎপাদনে যাওয়ার। নানা কারণে সেটা হয়নি। আমেরিকান কোম্পানি ডায়াডিক ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে আমরা একটি এমওইউ করার দিকে এগোচ্ছি। সব ঠিকঠাক মতো এগোলে চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ের মধ্যেই আমরা এখানে ভ্যাকসিন উৎপাদনে যেতে পারব বলে আশা করছি।
সূত্র: বিডি প্রতিদিন