খেলা ২৬ জানুয়ারি ২০২২, বুধবার
৪০২ দিন পর মাঠে ফিরলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বল হাতে নিলেন দুটি উইকেটও। কিন্তু তার ফেরার দিনে হেরে গেল মিনিস্টার ঢাকা। মাত্র ১০১ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয়ে রঙিন সিলেট সানরাইজার্স শিবির। বিপিএলের ৮ম আসরে নিজেদের আগের ম্যাচেই প্রথম জয়ের সন্ধান পেয়েছিল ঢাকা। কিন্তু পরের ম্যাচে ফের হার ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে।
মূলত ব্যাটারদের ব্যর্থতায় এই হার। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে বিপর্যয়ে পড়ে মিনিস্টার ঢাকা।
৭ জনই ব্যাট হাতে দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৩ রান অধিনায়ক মাহমদুল্লাহর। তবে এতে উইকেটকে দোষ দিতে রাজি নন তারা। ম্যাচ শেষে ঢাকার অধিনায়ক দুষলেন নিজেদের বাজে ব্যাটিংকেই। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘উইকেট খুব ভালো ছিল। উইকেট নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। আরো ভালো ব্যাটিং করা উচিত ছিল। যেভাবে আমরা ব্যাটিং করেছি তা হতাশাজনক ছিল। শুরুটা ভালো করিনি এবং আমাদের কোনো জুটি হয়নি। এমনকি মধ্যভাগেও আমাদের ব্যাটিং ভালো হয়নি। কোনো জুটি পাইনি। ব্যাটিংয়ে অ্যাফোর্ট দিতে পারিনি, এটা হতাশাজনক ছিল।’ এই ম্যাচে আম্পয়ারিংও ছিল যাচ্ছেতাই। আম্পায়ারদের বড় ভুলের মাসুলও গুনতে হয়েছে ঢাকাকে। জানা গেছে এমন আম্পায়ারিং নিয়ে অভিযোগও করা হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে।
গতকাল মাঠের লড়াই ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। সবশেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছিলেন ২০২০ সালের ১৮ ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু কাপে। এর আগেও এমন লম্বা বিরতি ছিল, ক্যারিয়ারের শুরুতে ২০০১ সালের ২৬শে ডিসেম্বর থেকে ২০০৩ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, ৪০৮ দিন ছিলেন মাঠের বাইরে। তাই দেশের সাবেক সফল অধিনায়কের বল হাতে তুলে নেয়াটাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। বিপিএলে চলতি আসরে প্রথম ম্যাচ থেকেও তার খেলার সুযোগ হয়নি। ইনজুরির কারণে শঙ্কা ছিল এই ম্যাচেও। তবে সবকিছু উড়িয়ে তিনি গতকাল মাঠে নামেন। ৩৮ বছর বয়সেও যে দারুণ কার্যকর তিনি সেটিও প্রমাণ করেন। তার দল ঢাকা প্রতিপক্ষের মাত্র তিনটি উইকেটই তুলে নিতে পেরেছে। একাই দুটি নিয়েছেন মাশরাফি।
দলের সঙ্গে মাশরাফির থাকাটা বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় প্রেরণার। মাঠে ফিরতে নিজের ফিটনেস এবং বোলিং স্কিল নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করছিলেন। এক বছরেরও বেশি সময় পর মাঠে ফিরেছেন। দুটি উইকেট পেয়েছেন। দল হিসেবে আমরা ভালো করিনি।’
মিরপুর শেরেবাংলার স্লো উইকেটে ঢাকার ব্যাটারদের মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়েছে। ২৬ বল খেলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৩ রান করে আউট হন মাহমুদুল্লাহ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ রান করেন শুভাগত হোম। শেষ দিকে ১২ রানের অবদান রাখেন পেসার রুবেল হোসেন। সিলেটের স্পিনারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি তারা। নতুন বলে সোহাগ গাজী আর মোসাদ্দেক হোসেনের অফস্পিনে বেগতিক অবস্থা ঢাকার। পরে নাজমুল ইসলাম অপুর বাঁহাতি স্পিনে দিশাহারা হয়ে একের পর এক সাজঘরের পথ ধরেন ঢাকার দেশি-বিদেশি ব্যাটাররা।
দলগত পারফরম্যান্সে হতাশ অধিনায়ক রিয়াদ। তিনি বলেন, ‘দলগত পারফরম্যান্সে আমি খুবই হতাশ আজ। আমরা এই ম্যাচটা জিতে পয়েন্ট টেবিলে সমতা আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি। এজন্য আমাদের প্রত্যেককে রি-গ্রুপ হতে হবে। উন্নতির জায়গাগুলো খুঁজতে হবে। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ব নিতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।’
এই পুঁজি নিয়ে লড়াই জমাতে পারেননি ঢাকার বোলাররা। মাশরাফি ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ফেরান ২১ বলে ১৬ রান করা লেন্ডল সিমন্সকে। এনামুল হক ও মোহাম্মদ মিঠুন অনায়াসে এগিয়ে নেন সিলেটকে। ঢাকার দুর্দশায় যোগ হয় ক্যাচ মিসও। ১০ রানে জীবন পান মিঠুন, ২০ রানে এনামুল। এরপর আর ফেরার সুযোগ ছিল না ঢাকার। ১৫ বলে ১৭ রান করে মিঠুন আউট হন তরুণ বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদের বলে। এনামুল একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে নিয়ে যান জয়ের কাছে। কাজটা শেষ করে ফিরতে পারেননি এনামুল। মাশরাফিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে তার ইনিংস শেষ হয় ৪৫ বলে ৪৫ রান করে। কলিন ইনগ্রাম দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন ১৯ বলে ২১ রান করে।
সূত্র: মানবজমিন