জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বুধবার নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন, আফগানিস্তানের ভাগ্য এখন একটি সুতোর ওপর ঝুলছে, তালেবান শাসিত রাষ্ট্রে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত লেনদেনের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশগুলিকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আফগানিস্তানের লক্ষ লক্ষ মানুষ চরম ক্ষুধার্ত। এছাড়া শিক্ষা ও সামাজিক পরিষেবাগুলি ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে। এই পরিস্থিতিতে দেশের ওপর থেকে যেকোনো রকমের কঠিন শর্তাবলী তুলে নেবার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব, তাঁর মতে এই সাসপেনশনের জেরে ”জীবন রক্ষাকারী” সহায়তা কার্যক্রমগুলি থমকে যাবে।
আর্থিক এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলি নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের ভয় ছাড়াই মানবিক সংস্থাগুলিকে যাতে সাহায্য করতে পারে সে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেবার কথা বলেছেন গুতেরেস। উল্লেখ্য মানবিকতার খাতিরে ১৫ সদস্যের কাউন্সিলকে আফগানিস্তানের মাটিতে কাজ করার জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে জাতিসংঘ। আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ৯.৫ বিলিয়ন ডলার ফান্ড বিদেশে অবরুদ্ধ রয়েছে এবং আগস্টে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে আন্তর্জাতিক তহবিলও আটকে দেয়া হয়েছে। দাতারা মানবাধিকার সহ বিভিন্ন ইস্যুতে তালেবানদের উপর লিভারেজ হিসাবে অর্থ ব্যবহার করতে চায়। ”আফগানিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
যা ইঙ্গিত করে সরকার দেশে ভয়ের পরিবেশ তৈরী করে রেখেছে।” - আফগানিস্তানে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ডেবোরা লিয়ন্স কাউন্সিলকে এ কথা জানিয়েছেন।
ডিসেম্বরে, আফগানিস্তানে স্বাস্থ্য সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংক নিয়ন্ত্রিত আফগান পুনর্গঠন ট্রাস্ট ফান্ডের দাতারা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফকে ২৮০ মিলিয়ন ডলার হস্তান্তর করতে সম্মত হয়েছে। গুতেরেস বলেছেন যে তহবিলের অবশিষ্ট ১.২ বিলিয়ন ডলার আফগানিস্তানের জনগণকে শীত থেকে বাঁচতে সাহায্য করার জন্য অবিলম্বে ব্যবহার করা দরকার।
জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড কাউন্সিলকে বলেছেন যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলি যাতে মানবিক কার্যকলাপে বাধা না দেয় তা নিশ্চিত করেছে ওয়াশিংটন এবং অর্থ সংকট কমাতে বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা হচ্ছে ।
জাতিসংঘের সহায়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস এবং রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির সভাপতি পিটার মাউরে এই মাসের শুরুতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সাথে দেখা করেছেন, উভয়ের মধ্যে আফগানিস্তান নিয়ে কথা হয়েছে। আইসিআরসি ডিরেক্টর অব অপারেশন ডমিনিক স্টিলহার্ট বলেছেন- জাতিসংঘ, আইসিআরসি, বিশ্বব্যাংক এবং প্রধান দাতা দেশগুলির মধ্যে আলোচনা করে নগদ অর্থ আফগানিস্তানে প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। স্টিলহার্ট- এর মতে, নির্দিষ্ট শর্তে আফগানিস্তানের ব্যবসায়ীদের কাছে নগদ উপলব্ধ করা যেতে পারে।
যদিও তিনি গোটা বিষয়টিকর স্টপগ্যাপ প্রক্রিয়া বলে উল্লেখ করেছেন। থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেছেন যে আফগান অর্থনীতিকে স্বাধীন এবং প্রযুক্তিগতভাবে সক্ষম করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাহায্যের প্রয়োজন হবে। কিন্তু এই সুবিধাটি চালু করার জন্য জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক এবং মূল দাতাদের মধ্যে চুক্তির প্রয়োজন। আফগান পাবলিক সেক্টরের কর্মীদের বেতন দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক-শাসিত আফগান পুনর্গঠন ট্রাস্ট তহবিল থেকে অর্থ ব্যবহার করার কথাও ভাবা হচ্ছে, যাতে কিছুটা হলেও অভাব মেটানো যায়। জাতিসংঘ এই মাসের শুরুতে আফগানিস্তানের জন্য ৪.৪ বিলিয়ন ডলার মানবিক সহায়তার জন্য আবেদন করেছিল। তবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, মৌলিক অবকাঠামো, জীবিকা উন্নয়ন, সামাজিক সংহতি, বিশেষ করে নারী ও মেয়েদের চাহিদার জন্য আরও ৩.৬ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।
সূত্র: রয়টার্স