করোনাভাইরাস সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ছে। উপসর্গ থাকায় নমুনা টেস্ট করতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াচ্ছে মানুষ। নমুনা দিয়ে পাঁচ দিনে মিলছে না রিপোর্ট। সক্ষমতার তুলনায় বেশি নমুনা সংগ্রহ হওয়ায় ল্যাবে জমছে নমুনার স্তূপ। এর মধ্যে অ্যান্টিজেন টেস্ট কিটে ৩২ ভাগ শুল্ক আরোপ হওয়ায় দেখা দিয়েছে কিট সংকটের শঙ্কা।
সরকারি গেজেটে টেবিল ৩ এ বলা আছে, ৩০০২.১৫.০০ এইচএস কোডে ইমিউনোলজিক্যাল রিঅ্যাকশন ভিত্তিতে কভিড-১৯ টেস্ট কিট শুল্কমুক্ত আমদানি করা যাবে। এয়ারপোর্ট কাস্টমস বলছে, র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট ‘ইমিউনোলজিক্যাল রিঅ্যাকশন’ পণ্য নয়। তাই শুল্ক ছাড়া আমদানি করা যাবে না। অথচ এ পণ্য এক বছরের বেশি সময় ইমিউনোলজিক্যাল রিঅ্যাকশন হিসেবে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু এখন শুল্ক আরোপ করায় অনেক ব্যবসায়ী এয়ারপোর্ট থেকে পণ্য ছাড় করতে পারছেন না। যারা এর আগে শুল্কমুক্ত আমদানি করেছেন, তাদের কাছে চিঠি দিয়ে শুল্ক দাবি করছে এয়ারপোর্ট কাস্টমস। প্যানবিও কভিড-১৯ দ্রুত অ্যান্টিজেন টেস্ট কিটের আমদানিকারক ও সরবরাহকারী হেলথকেয়ার ডায়াগনস্টিক সলিউশনস লিমিটেডের ব্যবসায়িক সমন্বয়কারী মো. সাদিকুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পাঁচ মাস আগে আমরা অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট আমদানি করেছিলাম। সেগুলো স্টকে রেখে আমরা এতদিন বিক্রি করছি। গত ১৩ জানুয়ারি কাস্টমস থেকে আমাদের কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পাঁচ মাস আগে যে এইচএস কোডের আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধা আমরা পেয়েছি সেটা কার্যকর হবে না। অন্য এইচএসকোডের আওতায় আমাদের পাঁচ মাস আগে আনা পণ্যের জন্য ৩২-৩৩ ভাগ শুল্ক পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, যে পণ্য এনে বিক্রি করা হয়ে গেছে, এখন সে পণ্যে শুল্ক দিতে বলা হয়েছে। আমরা তো এখন ক্রেতার কাছে গিয়ে বিক্রিত পণ্যের জন্য আবার দাম চাইতে পারব না। ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। অনেক কোম্পানির পণ্য এয়ারপোর্টে আটকে আছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই অ্যান্টিজেন টেস্ট কিটের সংকট দেখা দেবে। শুল্ক বাড়লে পণ্যের দাম বাড়বে।’
জি-টেক সল্যুশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোস্তফা আল মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা পথে বসে গেছি। সরকারি টেন্ডারে আমরা শুল্কমুক্তভাবে এক বছর ধরে অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট আমদানি করে আসছি। কিন্তু ১৫ ডিসেম্বরে আমাদের ৫ লাখ কিটের একটা চালানের ১ লাখ কিট এসে পৌঁছায়। যে কোডে আমরা নিয়ে আসছি সেটাতে না দিয়ে অন্য কোডে দিয়ে শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। আমরা এসেসমেন্ট কমিটিতে বিষয়টি তুলে ধরি। কিন্তু কাস্টমস কোনো বিষয়ে কর্ণপাত না করে হঠাৎ প্রায় ৩২ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। ফলে ওই শুল্ক দিয়ে চালানের ৫ লাখ কিট ছাড়াতে হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা এনবিআরকে চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু এনবিআর শুল্ক প্রত্যাহার করার বিষয়ে অপারগতা জানিয়েছে। নতুন করে শুল্ক আরোপ করায় খরচ অনেক বেড়ে গেছে। আমরাও আর ক্ষতিতে অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট আমদানি করব না।’ এনবিআর সদস্য (কাস্টমস পলিসি) মো. মাসুদ সাদিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অ্যান্টিজেন টেস্ট কিটে শুল্ক আরোপ নতুন কিছু নয়। এটা আগে থেকেই ছিল।’
স্বাস্থ্য অধিদফতর অ্যান্টিজেন টেস্ট কিটে টেস্টের খরচ ৭০০ টাকা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু কিটে শুল্ক আরোপে বাড়ছে আমদানি খরচ। এতে অ্যান্টিজেন টেস্টের জন্য বেশি খরচ গুনতে হতে পারে জনগণকে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে আরটিপিসিআর টেস্ট চলছে ১৫৫টি ল্যাবে, জিন-এক্সপার্ট ল্যাব ৫৭টি এবং অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে ৬৫৩টি ল্যাবে। গতকাল আরটিপিসিআর এবং অ্যান্টিজেন টেস্ট মিলিয়ে ৪২ হাজার ২৬৮টি নমুনা টেস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৪৪০ জন পজেটিভ রিপোর্ট পেয়েছেন। শনাক্ত হার ছিল ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। কিন্তু ল্যাবগুলোতে যে পরিমাণ নমুনা সংগৃহীত হচ্ছে সে পরিমাণ টেস্ট করার সক্ষমতা নেই। ফলে ল্যাবে জমছে নমুনার স্তূপ।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ভাইরোলজিস্ট ডা. মো. জাহিদুর রহমান খান গত ২৫ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘বর্তমানে প্রতিদিন নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে ২৫০-৩০০, আমাদের টেস্ট সক্ষমতা ১৮৮টি। সুতরাং ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট পেতে আগে অ্যান্টিজেন টেস্ট করেন। তারপর অবস্থা বুঝে পিসিআর করার সিদ্ধান্ত নিন। স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হার ঊর্ধ্বমুখী। ল্যাবে হেলথ টেকনোলজিস্ট সংকট প্রকট।’ অন্য ল্যাবগুলোতেও একই পরিস্থিতি। গত ২৫ জানুয়ারি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রে নমুনা দিয়েছিলেন গণমাধ্যম কর্মী মাহবুবুুর রহমান। তিনি বলেন, চার দিন পার হলেও এখনো করোনা টেস্ট রিপোর্ট পাইনি।’ ব্যাংক কর্মকর্তা তারেক আহমেদ বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত ছিলাম। ১৪ দিন পার হওয়ায় এবং কোনো উপসর্গ না থাকায় চিকিৎসকের পরামর্শে করোনা টেস্ট করতে দিয়েছিলাম। ছয় দিন পার হলেও রিপোর্ট পাইনি।’
সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন